সরকারি হাসপাতালে নার্সের ঘাটতি মোকাবিলায় এ বার অবসরপ্রাপ্ত নার্সদের ফের নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিল স্বাস্থ্য দফতর। প্রাথমিক পর্যায়ে অসুস্থ নবজাতকদের জন্য সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিটগুলিতে (এসএনসিইউ) এঁদের নিয়োগ করা হবে বলে স্থির হয়েছে। কিন্তু এসএনসিইউয়ের মতো ইউনিট, যা গভীর মনোযোগ দাবি করে, সেখানে ষাটোর্ধ্ব মহিলারা কতটা উপযুক্ত? ইতিমধ্যেই এই প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছে।
স্বাস্থ্য-কর্তারা জানাচ্ছেন, রাজ্যে এই মুহূর্তে আড়াই হাজার নার্সের পদ শূন্য রয়েছে। নার্সের অভাবে হাসপাতালে নতুন বিভাগ খোলা যাচ্ছে না। বিভিন্ন ওয়ার্ডে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আয়ারা। যে নার্সরা রয়েছেন, তাঁদের চাপ ক্রমশ এত বাড়ছে যে প্রায়শই বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে পরিষেবায় নানা ঘাটতি ও গোলযোগের খবর আসছে। এই পরিস্থিতি সামলাতে প্রাথমিক ভাবে অবসরপ্রাপ্ত নার্সদের ছ’মাসের জন্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। প্রথম দফায় এসএনসিইউগুলিতে নেওয়া হলেও পরবর্তী ধাপে সাধারণ বিভাগগুলিতেও অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগ করা যেতে পারে বলে স্বাস্থ্য-কর্তারা জানিয়েছেন।
আগামী আর্থিক বছরের মধ্যে মোট ২০টি এসএনসিইউ খোলার কথা ঘোষণা করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু সেই ঘোষণা কার্যকরী করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে দামি যন্ত্রপাতি কেনার পরেও বিভাগ খোলা যাচ্ছে না নার্সের অভাবে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “এই মুহূর্তে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, বালুরঘাট, মালদহ, বহরমপুর, জঙ্গিপুর, হাওড়া, চুঁচুড়া, ডায়মন্ড হারবার, আরামবাগ, ঘাটাল, তমলুক ও আসানসোলের এসএনসিইউ-তে ১০ জন করে মোট ১৩০ জন এবং এম আর বাঙুর হাসপাতালে ২৫ জন নার্স প্রয়োজন। অবিলম্বে নিয়োগ না হলে এসএনসিইউ-এর কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।”
সরকারি হাসপাতালে নার্সদের অবসরের বয়স এখন ৬০ বছর। এমনিতেই রোগীর সঙ্গে নার্সদের ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন স্তরে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে। স্বাস্থ্য দফতর ঘোষণা করেছে, ৬২ বছরের কমবয়সীরা ফের নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারবেন। অর্থাৎ পেশা থেকে সরে আসার পরে এক বা দেড় বছর পেরিয়ে গিয়েছে, এমন মহিলারাও চাকরি পাওয়ার আশায় যোগাযোগ করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে নবজাতকের পরিচর্যার ক্ষেত্রে তাঁরা কতটা উপযুক্ত হবেন? নার্সিংয়ের কাজে যে দক্ষতা, ধৈর্য এবং শারীরিক সক্ষমতা লাগে, অবসর নেওয়ার পরে সেটা কতটা থাকবে? কলকাতার এক এসএনসিইউ-এর চিকিৎসক বলেন, “এই ধরনের কেন্দ্রে নার্সিংটাই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অথচ নতুন ব্যবস্থায় সেই দিকটির সঙ্গেই হয়তো আপস করা হবে।”
স্বাস্থ্যকর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, এই বিষয়টি মাথায় রেখেই নিয়োগ হচ্ছে। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র জানান, প্রাথমিক ভাবে এসএনসিইউগুলির জন্য নিয়োগ করা হলেও পরে সেখানে অপেক্ষাকৃত কমবয়সীদেরই রাখা হতে পারে। অবসর নেওয়ার পরে যাঁরা যুক্ত হবেন, তাঁদের অন্য ওয়ার্ডে তুলনামূলক কম পরিশ্রমের কাজ দেওয়া হবে। নিয়োগ হবে ছ’মাসের জন্য। তিনি বলেন, “আসল কথাটা হল সদিচ্ছার। সেটা যদি থাকে, তা হলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের মতো করে কাজের জায়গাটা ঠিক করে নেবেন। আমাদের মূল লক্ষ্য একটাই, শিশুমৃত্যু কমানো।”
কিন্তু নার্সের পদে লোকাভাব ঘটছে কেন? প্রতি বছর নার্সিং স্কুল ও কলেজগুলি থেকে যত জন পাশ করে বেরোচ্ছেন, তাঁদের একটা বড় অংশ বেসরকারি হাসপাতালে চলে যাচ্ছেন, এমনকী বিদেশেও পাড়ি দিচ্ছেন। সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে যে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সেটাও এড়াতে চান অনেকেই। ফলে সরকারি হাসপাতালে এই মুহূর্তে প্রয়োজনের তুলনায় নার্সের জোগানে অনেকটাই ঘাটতি থাকছে।
সরকারি জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের রাজ্য অধিকর্তা দিলীপ ঘোষ বলেন, “অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগ করাটা যে খুব ভাল বিকল্প নয়, তা আমরাও জানি। তবে সাময়িক ভাবে সমস্যার সমাধানের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নার্সের অভাব মেটাতে সরকারি নার্সিং স্কুলের পাশাপাশি বেসরকারি নার্সিং স্কুল থেকেও নিয়োগ হবে। আশা করা যায় পরে সমস্যা অনেকটাই কমবে।”
নার্সিং পরীক্ষা পাশ করার পরই সরকারি শূন্যপদে যাতে দ্রুত নিয়োগ সম্ভব হয়, তার জন্য একটি মনোনয়ন কমিটিও গঠন করা হয়েছে। দু’ধাপে নিয়োগ হবে। বেসরকারি হাসপাতাল বা অন্যত্র যাওয়া ঠেকাতে নার্সদের জন্য কি বিশেষ কোনও ‘ইনসেনটিভ’ থাকছে? স্বাস্থ্য-কর্তারা বিষয়টি নিয়ে এখনই মুখ খুলতে চাননি। |