|
|
|
|
ক্যাচ ফেলার সেই চিত্রনাট্যে বিপন্ন সৌরভের বাংলা |
রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় • কলকাতা |
চেনা ছবিটা আর পাল্টাচ্ছে না।
টপাটপ ক্যাচ পড়ছে। পেসারদের দাপটে দু’টো সেশনে ধুন্ধুমার, তো পরের দেড় ঘণ্টা চুপচাপ। ‘পুরনো’ রোগের আজও কোনও দাওয়াই নেই। আর তাই রোহতাক হোক বা ইডেন, উইকেট পাটা হোক কিংবা সবুজ, স্ক্রিপ্টেও কোনও বদল নেই। মঙ্গলবার ইডেনের বিকেল যেমন। দিনের খেলা শেষ হল, মাঠের উপর বসে পড়লেন অশোক দিন্দা। কাঁধ ঝুলে পড়েছে। রণদেব বসু আনমনে হাঁটছেন ড্রেসিংরুমের দিকে। মাথা নীচু। দেখে কে বলবে, দুপুর দু’টো পর্যন্ত এঁরাই ছিলেন সবুজ পিচের রাজা?
তিন-তিনটে ক্যাচ পড়লে যা হয়!
এবং ক্যাচগুলো পড়ল কখন? না, যখন শক্তিশালী বিপক্ষকে প্রায় বশে এনে ফেলেছে বাংলা। যখন ভিআইপি বক্সে সিএবি কর্তারা বসে হিসেব কষে চলেছেন, কত হবে তামিলনাড়ুর? ২৩০, নাকি ২৫০? বিজয়-বদ্রিনাথের মতো ঘরোয়া ক্রিকেটের দৈত্য-দানোদের যাবতীয় তর্জন-গর্জন তখন স্তব্ধ। বরং ইডেন জুড়ে মুর্হূমুহু উঠছে বাংলা পেসারদের হুঙ্কার। সুইংয়ে কাবু করে রণ পেয়ে যাচ্ছেন বদ্রিনাথের পা...দিন্দার বাউন্সার অভিনব মুকুন্দের ব্যাট ছুঁয়ে চলে যাচ্ছে কিপারের গ্লাভসে। অফসাইডে সাত জন রেখে ফিল্ড সাজাচ্ছেন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়! ক্লাবহাউসের তিন তলায় রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে চওড়া হাসি। বলে চলেছেন, “ইডেনের উইকেটে এত ঘাস দেখিনি কখনও। আর যা বল করছে, তিনশোর মধ্যে ফেলে দেবে মনে হচ্ছে...।” |
|
ক্যাচ ফস্কানোর সেই ছবি। মঙ্গলবারের ইডেনে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
আর ফেলে দেওয়া! উল্টে তো পড়ল ক্যাচ, যাতে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে ক্যাচের সঙ্গে ম্যাচটাও গেল কি না! প্রসন্ন এবং বাসুদেবদাসদু’জনের একজনও রাশভারি কোনও নাম নন। সাত তাড়াতাড়ি চলেও যেতেন, কিন্তু বাংলা ফিল্ডারদের বিশ্বস্ত ‘হাত’ বাঁচিয়ে দিল। দিন্দা যেটা ফেললেন সেটা না হয় হাফ-চান্স। কিন্তু বাকি দু’টো তো লোপ্পা। গলি ক্রিকেটেও যে কেউ ধরবে। কিন্তু ধরার বদলে উল্টে চালু হল ক্যাচ ফেলার প্রদর্শনী । ঋতম পোড়েল একটা, ইরেশ সাক্সেনা একটা। বাসুদেবদাস বাঁচলেন দু’বার, প্রসন্ন একবার। পরিণতি? দিনের শেষে স্কোরকার্ড দেখাচ্ছে, বাসুদেবদাস ব্যাটিং ৬৯। প্রসন্ন ব্যাটিং ৫৩। তথ্য বলছে, একটা সময় ১৩৯-৫ ছিল তামিলনাড়ু।
যে দিকে এগোচ্ছে ম্যাচ, তাতে বুধবার প্রথম দু’ঘণ্টার উপর দাঁড়িয়ে বাংলার ভাগ্য। আর কে না জানে উইকেট তোলার বাজি বলতে তো ওই তিন পেসার। কিন্তু তাঁরাও বা শেষবেলায় স্বস্তি দিলেন কোথায়? ফিল্ডারদের ব্যর্থতা হয়তো কোথাও না কোথাও হতাশার দিকে ঠেলে দিল দিন্দাদের। লক্ষ্মী নিয়ম করে বাউন্ডারি দেওয়া শুরু করলেন। দিন্দার থেকে পাওয়া গেল কিছু দিশাহীন বাউন্সার। আর এই যে বাগে পেয়েও তামিলনাড়ুকে ছাড়ল বাংলা, তার পিছনে পয়লা কারণ যদি ক্যাচ ফেলা হয়, পিছু-পিছু আসবে শেষ পর্বে পেসারদের ব্যর্থতা। ইডেনের এই উইকেট কিন্তু সাড়ে পাঁচশোর উইকেট নয়। সাড়ে তিনশো তুলতে পারলেই এখানে কেল্লা ফতে। আর প্রসন্নরা যে ভাবে এগোচ্ছেন, তাতে দিল্লি খুব দূর বলা যাবে না। |
|
মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রোহনকে। তবে স্ট্রেচারের বদলে চেয়ারে।
মঙ্গলবার বাংলা-তামিলনাড়ু রঞ্জি ম্যাচে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে আবার রোহন বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন সাত সকালে মুকুন্দের ফ্লিক তলপেটের কাছে আছড়ে পড়তে মাঠ থেকে ছুটতে হল হাসপাতালে। কেন স্ট্রেচারের বদলে রোহনকে চেয়ারে করে মাঠ থেকে বের করা হল, তা নিয়ে বিতর্কের ছোট ঝড়ও উঠল। হাতের কাছাকাছি স্ট্রেচার না থাকায় চেয়ারে করে রোহনকে মাঠ থেকে সিএবি-র মধ্যে আনতে হল। যদি ফুটবল মাঠের ভিতরে স্ট্রেচার থাকতে পারে, তা হলে ইডেনের ভিতরে কেন থাকবে না? বাংলা ফিল্ডারদের যা অবস্থা, সিএবি-রও তাই। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত যা খবর, তাতে বাংলা ওপেনারের ভয়ের কোনও কারণ নেই। মোটামুটি সুস্থ। কিন্তু তিনি ব্যাট করতে পারবেন কি না, আর করলেও কত নম্বরে নামতে পারবেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে তারও আগে দরকার রণ-র আউটসুইংয়ে দু’একটা উইকেট। দিন্দার বারুদ মেশানো কয়েকটা বাউন্সার। সামির ইনসুইং...।
‘যদি’, ‘কিন্তু’-র এই ভিড় ঠেলে এগোনো যাবে কি না, বুধবারের ইডেন তারই উত্তর খুঁজবে।
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর
তামিলনাড়ু ২৬১-৫ (মুকুন্দ ৮৩, বাসু ৬৯ ন:আ:, প্রসন্ন ৫৩ ন:আ:, রণ ১-৪৫,
দিন্দা ২-৫৮, সামি ১-৫২, ইরেশ ১-২৭, লক্ষ্মী ০-৪৫) |
|
|
|
|
|