বনকর্মীদের গাফিলতি এবং সন্ত্রস্ত পুলিশের অতি সক্রিয়তার জন্যই কাল বেঘোরে প্রাণ দিতে হয়েছে কাজিরাঙার তরতাজা বাঘিনিকে। গত কালের ওই কাণ্ডের তদন্তে দিল্লি থেকে আসা ন্যাশানাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটির (এনটিসিএ) কর্তাব্যক্তিরাই আজ এই অভিমত প্রকাশ করেন। এনটিসিএ এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গড়েছে। তার সদস্যরা আজ কাজিরাঙায় এসে মৃত বাঘিনির দেহের ময়না তদন্ত করেন। কাল ঘটনার সময় থাকা ব্যক্তিদের সাক্ষ্যও নেওয়া হয়।
এনটিসিএ-র মতে, বাঘিনি বের হওয়ার পরেই এ কে-৪৭ নিয়ে তাকে তাড়া করা নয়, পুলিশের উচিত ছিল স্থানীয় মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে আটকে রাখা। পুলিশের বক্তব্য, আত্মরক্ষার্থেই ওই বাঘিনিকে গুলি করতে হয়। না হলে আরও বড় রকমের অঘটন ঘটে যেত। কিন্তু তাড়া করে বনে পাঠানো বা ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে অজ্ঞান করার পরিবর্তে ৯ মাসের একটি শিশুসন্তানের মা এই বাঘিনিকে যে ভাবে সংরক্ষিত ব্যাঘ্র অভয়ারণ্যের লাগোয়া এলাকায় গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়, তাতে প্রবল ভাবে ক্ষুব্ধ পশুপ্রেমী সংগঠনগুলি।
এ দিকে অসমের বনমন্ত্রী রকিবুল হুসেন জানান, রাজ্য সরকারও বাঘিনি হত্যার ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। অতিরিক্ত প্রধান মুখ্য বনপাল ও পি পাণ্ডে এবং ডিসিএফসি আর ভোবরার নেতৃত্বে এই তদন্ত চলবে। ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। |
এনটিসিএ তদন্তকারীরা জানান, একটি নয়, দু’টি এ কে-৪৭ রাইফেল থেকে অন্তত ২০ রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছিল বনের এই পশুকে ঠেকাতে। ১৪টি কালাশনিকভের বুলেট বাঘিনির শরীরে ঢোকে। বনদফতর ও এনটিসিএ সূত্রে খবর, ৫টি গুলি বাঘিনির দেহ ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। কিছু বুলেট আটকে ছিল শরীরে। বাকিগুলি গা ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। আজ দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ ও ময়না তদন্ত চালানোর পরে বাঘিনির দেহটি পুড়িয়ে ফেলা হয় হয়। তদন্তে জানা গিয়েছে, বেরিয়ে আসা বাঘিনিকে রোখার মতো প্রস্তুতিই নেননি কাজিরাঙা কর্তৃপক্ষ। ফলে ঘটনার সময় বনরক্ষীরা নন, পুলিশের সশস্ত্র ব্যাটালিয়নই সামনে ছিল।
পুলিশের বক্তব্য, ঘুমপাড়ানি গুলি লাগার পরেও বাঘ অনেকক্ষণ দৌড়তে পারে। তাই, জনাকীর্ণ এলাকায় বাঘকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে কাবু করা অতি দুরূহ। কোহরার রেঞ্জার আতিকুর রহমান জানান, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় শেষ অবধি বাঘটিকে না মেরে উপায় ছিল না। কাছেই রয়েছে একটি স্কুল। বাঘ ওই স্কুলে ঢুকে পড়লে বিপদ বাড়ত।
তদন্তকারীরা আজই তদন্ত শেষ করে ফেলেছেন। আগামিকালের মধ্যে দিল্লিতে রিপোর্ট জমা পড়বে। রিপোর্টে উল্লেখ থাকছে, সন্ত্রস্ত পুলিশ কর্মীরা ভয় পেয়ে বাঘিনিকে তাগ্ করে এলোপাথাড়ি গুলি চালান। বাঘিনির শরীরে পাওয়া ২টি কার্তুজ ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। বাঘিনিটির একটি ৯ মাসের সন্তানও রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, মাকে হারালেও সে অসহায় হয়ে পড়বে না। সাধারণত নয় মাস বয়সে বাঘের বাচ্চা শিকার ধরে খেতে পারে। |