|
|
|
|
খুচরো-বিতর্কে মমতার উপরেই ভরসা রাখছে বিজেপি ও বামেরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
হাল ছেড়ো না ‘বন্ধু’, বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আজ এই বার্তাই পাঠালেন প্রকাশ কারাট।
সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা নিয়ে মমতা যদি সিপিএমের পালের হাওয়া কেড়ে থাকেন, তাতেও তাঁর দুঃখ নেই। প্রকাশ কারাটের ‘প্রকাশ্য’ অবস্থান হল খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে হবে মনমোহন সরকারকে। কারাট চান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই অবস্থানই নিন। তাঁরাও সিদ্ধান্ত বাতিলের পক্ষেই সওয়াল করুন।
সিপিএমের কাণ্ডারীর মতো মমতায় ‘ভরসা’ রাখছেন বিজেপি নেতৃত্বও। বিজেপি মনে করছে, সংসদের অচলাবস্থা কাটাতে সরকার এখন সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার কথা বলছে। কিন্তু অধিবেশন শেষে সরকার যদি আবার সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে চায়, তখনও তৃণমূল এর বিরোধিতা করবে বলেই বিজেপির আশা।
যে যুক্তিতে সিপিএম খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতা করছে, প্রায় একই যুক্তিতে তার বিরোধিতা করছেন মমতাও। দু’তরফেরই বক্তব্য, বিদেশি লগ্নি এলে অজস্র হকার, খুচরো ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র উৎপাদক ও কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখতে মমতা কেন্দ্রকে বাধ্য করলেও তার কৃতিত্ব আলিমুদ্দিনের নেতারা কখনওই মমতাকে দিতে রাজি হননি। আজ কারাটের সাংবাদিক সম্মেলনেও প্রশ্ন উঠেছে, সিপিএম যেখানে বরাবরই বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করে এসেছে, এখন মমতা তাই নিয়ে সরব হয়ে সিপিএমের আন্দোলন ‘হাইজ্যাক’ করে নিচ্ছেন কি? হাসি মুখে কারাটের উত্তর, “ওঁরা যদি আমাদের ইস্যু হাইজ্যাক করে নিয়ে থাকেন, তা হলে আমি খুবই খুশি হব। ওঁরা যদি এই ধরনের নীতির লাগাতার বিরোধিতা চালিয়ে যান, তা হলেও খুশি হব।” তবে সংসদে শক্তি কমে গিয়েছে বলে দল মমতার উপরে ভরসা করছে, এমন যুক্তি মানতে রাজি নন সিপিএম নেতৃত্ব। বরং তাঁদের পাল্টা যুক্তি, মমতাই সিপিএমের পথে হেঁটে প্রমাণ করছেন, সিপিএম এত দিন সঠিক কথাই বলছিল। |
|
বিদেশি লগ্নির বিরোধিতায় সিপিএমের প্রচারপুস্তিকা দেখাচ্ছেন প্রকাশ কারাট। ছবি: পিটিআই |
বিজেপি ও সিপিএম, দু’পক্ষই সংসদের অচলাবস্থা কাটাতে এই মুহূর্তে কিছুটা সুর নরম করতে রাজি হয়েছে। যদিও প্রকাশ্যে দু’তরফই বলছে স্থগিত নয়, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বাতিল করতে হবে কেন্দ্রকে। এবং তাঁদের দাবি, মমতারও হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। কারাট বলেন, “যতক্ষণ না সরকার বলছে যে শীতকালীন অধিবেশনের পরেও এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে না, ততক্ষণ তৃণমূল কংগ্রেসের সন্তুষ্ট হওয়া উচিত নয়।” বিজেপি নেতা অরুণ জেটলিও আজ প্রকাশ্য সভায় বলেন, “মমতা খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরুদ্ধে যে এত সরব হচ্ছেন তার কারণ, পশ্চিমবঙ্গের গোটা অর্থনীতিটাই দাঁড়িয়ে রয়েছে খুচরো ব্যবসার উপরে। এই পরিস্থিতিতে তিনি সরকারের অবস্থানে সায় দিলে নিজেরই ভোটব্যাঙ্ক খোয়াবেন।” বিজেপির এক শীর্ষ নেতার ব্যাখ্যা, এর পরে সরকার খুচরো ব্যবসা নিয়ে যা-ই সিদ্ধান্ত নিক, তা সংসদ চলাকালীন নিশ্চয়ই নেবে না। কারণ, এক বার সংসদের সময় এত বড় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে তারা হাত পুড়িয়েছে। সংসদ না চললে বিরোধীরা বড়জোর রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে পারে। পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়ানোর পরে বিজেপি এ ধরনের আন্দোলন অনেক করেছে। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। তবে এ বারে বিষয়টি ভিন্ন। খোদ সরকারের শরিক তৃণমূল এর বিরোধিতায় সরব হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথম এই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার ঘোষণা করেছেন। ফলে সংসদের বাইরে সরকার বিরোধীদের উপেক্ষা করতে পারে। কিন্তু মমতার মতো শরিককে উপেক্ষা করতে পারবে না। বিজেপির ব্যবসায়ী গোষ্ঠীও মমতার অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে। কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্সের সেক্রেটারি জেনারেল প্রবীণ খান্ডেলওয়াল বলেছেন, “মমতার বিবৃতির নিরিখে কেন্দ্র খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করুক।” |
|
|
|
|
|