গ্রাম্য বিবাদের ঘটনায় অভিযুক্তদের খুঁজতে গিয়ে মার খেল পুলিশ।
বর্ধমানের ভাতারে মাধপুর গ্রামে সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটে। এক সাব-ইনস্পেক্টর এবং এক কনস্টেবল জখম হন। দ্বিতীয় জন বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি। হামলায় জড়িত সন্দেহে ৯ জনকে ধরা হয়েছে।
মগরাহাটে জনতার উপরে পুলিশের গুলিচালনার ঘটনা যেমন ঘটেছে, জনতার হাতে পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে বারবার। গত ২৪ অক্টোবর বোমা-তরোয়াল নিয়ে তাণ্ডব চালানো হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপি থানায়। তার আগে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর কলেজেও ছাত্র সংঘর্ষ থামাতে দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয় পুলিশ। গত ৭ অক্টোবর নদিয়ার বগুলায় বিসর্জনের শোভাযাত্রায় আইনরক্ষা করতে গিয়েও পুলিশ মার খায়। পরে পুলিশের গুলিতে এক কংগ্রেস নেতার স্ত্রী মারা যান। |
হাসপাতালে জখম পুলিশকর্মী। ছবি: উদিত সিংহ |
ভাতারের ঘটনায় কারও মৃত্যু না হলেও জনতার তাড়া খেয়ে
পুলিশকে প্রথমে পালিয়ে বাঁচতে হয়েছিল। যাঁরা পালাতে পারেননি, তাঁদের ঘিরে ধরে পেটানো হয়। পরে বিশাল বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মঙ্গলবার বর্ধমানের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, “পুলিশের উপর হামলায় তিন মহিলা-সহ ন’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার দুপুরে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাধপুর গ্রামে পূর্বপাড়া লাগোয়া মাঠে কয়েক বিঘা জমিতে সর্ষে চাষ করেছিলেন গ্রামের সুকুমার অধিকারী। ওই খেতের কাছাকাছি পূর্বপাড়ার লোকজন ছাগল-ভেড়া চরান। তারা খেতে ফসলের ক্ষতি করছিল। এই নিয়ে সুকুমারবাবুর সঙ্গে পূর্বপাড়ার কিছু লোকের বচসা বাধে। তার জেরে পূর্বপাড়ার জটাই রায়, অভিমন্যু রায়েরা দলবল বাড়িতে ঢুকে তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ।
বাঁচাতে গিয়ে সুকুমারবাবুর মেয়েও মার খান। সুকুমারবাবু ভাতার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। রাত ৯টা নাগাদ অভিযুক্তদের খুঁজতে পুলিশ পূর্বপাড়ায় যায়। ওসি সঞ্জয় কুণ্ডু জানান, পাঁচ পুলিশকর্মী থানার জিপ নিয়েই গিয়েছিলেন। অভিযুক্তদের বাড়ির কাছে যাওয়া মাত্র বেশ কিছু লোকজন চারদিক থেকে তাঁদের ঘিরে ফেলে। প্রথমে বচসা, তার পরে মারধরের চেষ্টা শুরু হতেই পুলিশকর্মীরা গ্রাম ছাড়ার চেষ্টা করেন। |
হামলার অভিযোগে গ্রেফতার।-নিজস্ব চিত্র |
কিন্তু সাব-ইনস্পেক্টর বিপুল দত্ত এবং কনস্টেবল পরিমল সর্দার ধরা পড়ে যান। তাঁদের ঘিরে লাঠি, রড, শাবল দিয়ে পেটানো হয়। বর্ধমান মেডিক্যালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে বিপুলবাবুকে ছেড়ে দেওয়া হলেও পরিমলবাবুর চোট গুরুতর।
হাসপাতালে শুয়ে পরিমলবাবু বলেন, “গ্রামে গিয়ে আমরা প্রথমে দু’পক্ষের মধ্যে মীমাংসা করতে চাইছিলাম। তা সম্ভব না হওয়ায় ফিরে আসার মুখেই জটাইয়ের দলবল আমাদের উপরে চড়াও হয়। আচমকা হামলায় আমরা হতভম্ব হয়ে যাই। কয়েকজন পালাতে পারলেও আমায় রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়।” আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে পূর্বপাড়ার জনার্দন মাঝি পাল্টা বলেন, “পুলিশ মোটেই মীমাংসা করতে যায়নি। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতেই গিয়ে নিরীহ লোকেদের ধরছিল। তাতেই খেপে গিয়ে গ্রামবাসী পুলিশের উপরে হামলা চালান।”
পরে বিশাল বাহিনী নিয়ে গিয়ে ওসি ৯ জনকে গ্রেফতার করেন। এ দিন বর্ধমান আদালতে হাজির করানো হলে ভারপ্রাপ্ত সিজেএম মধুসূদন পাল ধৃতদের ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। |