সভায় এনে প্রচার
পোলিও-মুক্তির লড়াইয়ে ভরসা পোলিও-শিশুই
“আমরা যে-ভুল করেছি, তার খেসারত সারা জীবন ধরে দিতে হবে। আপনারা এই ভুল করবেন না।”
প্রকাশ্য সভায় কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন বছর চল্লিশের আব্দুল শাহ। পোলিওয় আক্রান্ত রুখসার খাতুনের বাবা। আর ‘ভুলটা’ কী?
‘ভুল’ মানে শিশুটিকে যথাসময়ে পোলিও টিকা না-খাওয়ানো।
ফেব্রুয়ারিতে পোলিওয় আক্রান্ত দু’বছরের ওই পোলিও-শিশুর খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল হাওড়ার পাঁচলায়। পোলিওর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এ বার সেই শিশুটিকে এবং তার পরিবারকে হাতিয়ার করছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর।
পোলিও প্রতিষেধক না-খাওয়ানোর পরিণতি কী হতে পারে, রুখসার তার সাম্প্রতিক প্রমাণ। এ রাজ্যের যে-সব অংশে পোলিও কর্মসূচিতে সব চেয়ে বেশি প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়, তারই একটিতে সভা ডেকে বাবা-মায়েদের সামনে শিশুটিকে হাজির করেছিলেন স্বাস্থ্যকর্তারা। আর কাঁদতে কাঁদতে সেখানেই কাতর আর্জি আব্দুলের।
এবং এই একটা অস্ত্রেই অনেকটা বাজিমাত হয়েছে বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি! দক্ষিণ ২৪ পরগনার যে-মহেশতলা এত দিন শিশুদের পোলিও খাওয়ানোর ব্যাপারে মুখ ঘুরিয়ে থাকত, সেখানে এক ধাক্কায় অংশগ্রহণ বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। সর্বশেষ পোলিও কর্মসূচিতে মহেশতলা তাক লাগিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্যকর্তাদের। তাঁদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের কর্মসূচিতে যত শিশুকে পোলিও খাওয়ানো হয়েছে, নভেম্বরের কর্মসূচিতে সংখ্যাটা ওই একটি এলাকাতেই বেড়েছে চারশোরও বেশি। পোলিও প্রতিষেধকের ক্ষেত্রে যেখানে এক-একটি শিশু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে এই সংখ্যাটা অত্যন্ত আশাপ্রদ বলে মনে করছেন তাঁরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু-র পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই ধরনের দৃষ্টান্ত সামনে তুলে ধরলে খুব ভাল কাজ হয়। ২০০৬ সালে মুর্শিদাবাদের শমশেরগঞ্জে ওসমান গনি নামে যে-শিশুটির পোলিও ধরা পড়েছিল, তার মা এখন অন্য শিশুদের পোলিও খাওয়ানোর কাজ করছেন। তাঁকে দেখেও অনেকে উদ্বুদ্ধ।” রুখসারের বাবা আব্দুলও শুধু মহেশতলা নয়, নিজের এলাকা অর্থাৎ পাঁচলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে পোলিও টিকাকরণ নিয়ে প্রচার করছেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শিখা অধিকারী জানান, গোটা জেলায় পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশু আছে সাড়ে আট লক্ষ। গত ১৩ নভেম্বরের পোলিও দিবসে তার মধ্যে আট লক্ষ ৩০ হাজার শিশুকেই পোলিও টিকা খাওয়ানো সম্ভব হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই সংখ্যাটা আরও ৪-৫ হাজার কম হত। শিখাদেবীর দাবি, এ বার মূল পার্থক্যটা গড়ে দিয়েছে মহেশতলা অঞ্চল। তিনি বলেন, “গোটা জেলার মধ্যে সব চেয়ে বেশি প্রতিরোধ আসত মহেশতলা থেকে। সেটা আমরা কিছুতেই ভাঙতে পারছিলাম না। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে আমাদের মধ্যেও একটা রোখ চেপে গিয়েছিল, যে-করে হোক প্রতিরোধ ভাঙতেই হবে। সেই জন্য নানা পদক্ষেপও করা হয়েছিল।”
কী ধরনের পদক্ষেপ?
জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, পোলিওয় আক্রান্ত শিশুকে সামনে আনার পাশাপাশি তাঁরা ওই সব এলাকায় নিয়মিত ‘হেল্থ ক্যাম্প’ বা স্বাস্থ্য শিবির করছেন। সেই সব শিবিরে সরকারি চিকিৎসকদের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রাইভেট চিকিৎসকদেরও সামিল করা হচ্ছে। সপ্তাহে এক দিন শিবিরে বসার বিনিময়ে তাঁদের বিশেষ ভাতা দেবে সরকার। শিবিরে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় ক্লাবগুলিও। যে-ক্লাবের উদ্যোগে যত বেশি শিশুকে পোলিও খাওয়ানো যাবে, সেই ক্লাবকে পুরস্কৃত করবে রাজ্য সরকার।
শিখাদেবী বলেন, “পা ডুবে যাচ্ছে পাঁকে। কোনও মতে সেই রাস্তা পেরিয়ে নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোয় ওঠা। তার পরে দু’পাশের খোলা নর্দমা, নোংরা শৌচাগার পেরিয়ে সারি সারি ঝুপড়ির কাছে পৌঁছনো। তারও পরে সেই সব পরিবারের পুরুষদের মুখে কঠিন সুরে ‘না’ শোনা। এ ভাবেই চলেছে দিনের পর দিন। আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ অবশেষে সেই প্রতিরোধ ভাঙতে পেরেছে।”
এখানেই আশা দেখছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তাই তাঁরা চাইছেন, মডেল হয়ে উঠুক মহেশতলাই। পোলিওর দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা হিসেবে রাজ্যের ন’টি জেলার ১১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ১০৮টি পুরসভা অঞ্চলকে ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। এবং ওই জেলাগুলির মধ্যে আছে খাস কলকাতাও। বাকি আটটি জেলা হল উত্তর দিনাজপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বর্ধমান, মালদহ এবং হাওড়া।
স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র বলেন, “পোলিও প্রতিরোধে এ রাজ্যে উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে পোলিও-মুক্ত পশ্চিমবঙ্গ খুব বেশি দূরে নয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.