মগরাহাট-সহ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মহাকরণে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার সেই বৈঠকের পরেই মগরাহাটের ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশও জারি করেছেন তিনি। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেই বৈঠকে ডাক পাননি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবই।
মগরাহাটে গুলিচালনার খবর রাজ্য প্রশাসন কখন জানতে পেরেছিল, তাই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মতভেদ দেখা দিয়েছে স্বরাষ্ট্রসচিব জ্ঞানদত্ত গৌতমের। বৃহস্পতিবার প্রায় সারাদিন ধরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট। কিন্তু সন্ধে পর্যন্ত মহাকরণে থেকেও সেই খবর পাননি বলে নিজেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এর ঠিক উল্টো পথে হেঁটে শুক্রবার স্বরাষ্ট্রসচিব জানিয়ে দেন, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা পুলিশের গুলি চালানোর খবর পেয়েছিলেন। এই খবর তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন কি? সরাসরি উত্তর এড়িয়ে সম্মতিসূচক ইঙ্গিত করেন স্বরাষ্ট্রসচিব। তার পরে এ দিনের বৈঠকে তাঁর ডাক না পাওয়ার ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি মগরাহাটের খবর আসা নিয়ে মতভেদের কারণেই স্বরাষ্ট্রসচিবের প্রতি প্রকাশ্যে অনাস্থা দেখালেন মুখ্যমন্ত্রী? ওই বৈঠকের খানিক পরেই মুখ্যমন্ত্রী মগরাহাটের ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।
এ দিন দুপুরে মগরাহাটের ঘটনা-সহ রাজ্যের সাধারণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকে মুখ্যসচিব সমর ঘোষ, রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় এবং এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে ডেকে নেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মহাকরণে নিজের ঘরে থাকা সত্ত্বেও ডাক পাননি স্বরাষ্ট্রসচিব। কেন এমন ঘটল, তার কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি প্রশাসনিক স্তরে। সরকারের এক মুখপাত্র জানান, মুখ্যমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা বা সেই সংক্রান্ত কোনও বৈঠক ডাকলে তাতে স্বরাষ্ট্রসচিবকে ডাকতেই হবে বলে কোনও নিয়ম নেই। কিন্তু যে বৈঠকে মুখ্যসচিব রয়েছেন, ডাক পেয়েছেন ডিজি-এডিজি-র মতো পদমর্যাদার পুলিশ অফিসারেরা, সেখানে স্বরাষ্ট্রসচিবের থাকাটা অনেকটাই বাধ্যতামূলক বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন নিজেই পুলিশমন্ত্রী।
হুকিং রুখতে গিয়ে জনতা-পুলিশের সংঘর্ষে মগরাহাটে তিন জন মারা গিয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সন্ধ্যা প্রায় ৭টা পর্যন্ত এই ঘটনা যখন চলছে, তখন মহাকরণেই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অফিসে ছিলেন মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিবও। মহাকরণ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর টেলিভিশন মারফত খবর পেয়েছেন বলে পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানান। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে, কলকাতার পাশের জেলার এত বড় ঘটনার খবর কেন মহাকরণে বসে পেলেন না মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী? এই প্রশ্নেই একেবারে অন্যরকম প্রতিক্রিয়া জানান স্বরাষ্ট্রসচিব। শুক্রবার তিনি বলেন, “ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা তা জানতে পেরেছি।” সেই ‘আমরা’র মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীও আছেন কি না জানতে চাওয়া হলে সম্মতিসূচক ইঙ্গিত দিলেও প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে যান স্বরাষ্ট্রসচিব।
এ দিন সরকারি ছুটি থাকলেও মহাকরণে যথাসময়েই পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিব। ক্ষুদিরামের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর মূর্তিতে মাল্যদানের অনুষ্ঠানে উপস্থিতও থাকেন তাঁরা তিন জন। কিন্তু এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে বৈঠকে ঢোকেন মুখ্যসচিব এবং রাজ্য পুলিশের দুই শীর্ষ কর্তা। দেখা যায়, তখন নিজের ঘরেই রয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব। মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে ডাক পাননি তিনি। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে বৈঠক চলার পর মুখ্যসচিব এবং ডিজি বেরিয়ে যান। পরে মুখ্যসচিবের ঘরে যান স্বরাষ্ট্রসচিব। বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে কেউ মুখ খুলতে চাননি। কিন্তু মগরাহাটের সর্বশেষ পরিস্থিতি ছাড়াও রাজ্যের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। |