স্বপন হত্যা
প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানের সঙ্গে মিলছে না পুলিশের দাবি
তৃণমূল নেতা স্বপন মণ্ডল-খুনের প্রধান অভিযোগকারী রঞ্জিত রায় এবং প্রধান সাক্ষী সুকুমার মণ্ডলের বয়ানের সঙ্গে পুলিশি তদন্তের ‘অসঙ্গতি’ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন এলাকার তৃণমূল কর্মীদেরই একাংশ। পুলিশও জানিয়েছে, রঞ্জিত ও সুকুমারের প্রাথমিক বক্তব্যের সঙ্গে ধৃত মূল অভিযুক্ত টুলকো-র বয়ানের অনেকটাই ফারাক রয়েছে। ওই খুনের প্রধান ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে স্থানীয় যুব তৃণমূল নেতা পার্থ সরকারকে গ্রেফতারের পরেই এই সব ‘অসঙ্গতি’ নিয়ে আরও বেশি করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে জেলার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্যের দাবি, তদন্ত ঠিক পথেই এগোচ্ছে।
গত রবিবার কেষ্টপুর মোড়ে ভরদুপুরে খুন হয়েছিলেন স্বপন। রঞ্জিত ও সুকুমার সে সময়ে তাঁর পাশেই বসেছিলেন। তাঁরা দু’জনেই স্বপনের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। আততায়ীরা তাঁদের লক্ষ করেও গুলি ছোড়ে। সামান্য জখম অবস্থায় দু’জনকেই এলাকার একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে পুলিশ স্বপনবাবু খুনের ঘটনাটি তাদের বয়ান থেকেই সবিস্তার জানতে পারে। রঞ্জিতকে দিয়েই পুলিশ ওই খুনের এফআইআর দায়ের করায়। সুকুমারবাবুকে ঘটনার প্রধান সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়। তদন্ত চালিয়ে টুলকো ও আরও এক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পরে বৃহস্পতিবার রাতে পার্থবাবুকে গ্রেফতার করা হয়। জেলা পুলিশের দাবি, ধৃতদের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই পার্থবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ সূত্রেরই খবর, স্বপন-খুনের পরে রঞ্জিত ও সুকুমারবাবু পুলিশের কাছে যে বয়ান নথিভুক্ত করেছিলেন, তার সঙ্গে পুলিশ তদন্তের বিস্তর ফারাক নজরে পড়ছে।
কী কী অসঙ্গতি রয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান ও পুলিশি তদন্তে?
• অসঙ্গতি কোথায় •
• পুলিশের দাবি • সাক্ষীদের বক্তব্য
• টুলকো কবুল করেছে,
সে স্বপনকে গুলি করেছিল
• পাড়ার ছেলে টুলকোকে দেখলে চিনতাম।
গুলি চালায় তিন অপরিচিত।
• স্বপন খুনের জন্য টুলকোকে
বরাত দেয় পার্থ
• টুলকো-র বিরুদ্ধ গোষ্ঠী পার্থ।
তা হলে কেন দু’জন হাত মেলাবে?
• টুলকোর কাছ থেকে দু’টো
দেশি রিভলভার উদ্ধার হয়েছে
• আততায়ীদের এক জন স্বয়ংক্রিয়
রিভলভার ব্যবহার করেছিল।
• পুলিশের দাবি • স্বপনের বাবা-মায়ের বক্তব্য
• স্বপন-হত্যায় প্রধান
ষড়যন্ত্রকারী পার্থ।
• পার্থ আগে স্বপনকে বাঁচিয়েছে।
ও কেন খুন করবে?
রঞ্জিত এবং সুকুমার জানান, ঘটনার দিন কেষ্টপুর মোড়ের কাছে একটি চায়ের দোকানে স্বপনের সঙ্গেই তাঁরা বসেছিলেন। এমন সময় তিন অপরিচিত আততায়ী মোটরবাইকে চেপে সেখানে আসে। মোটরবাইক দাঁড় করিয়ে আততায়ীরা হেঁটে দোকানের কাছে আসে। এর পরই এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে তারা। পুরো ঘটনাই তাঁরা পুলিশকে বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছিলেন বলে দুই প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি।
এ দিনও রঞ্জিত বলেন, “ঘটনার কথা মনে পড়লে এখনও গলা শুকিয়ে যায়। বছর ত্রিশের, পাতলা চেহারার তিন জন অচেনা লোক। প্রত্যেকের হাতে দু’টো করে রিভলভার। আর তা থেকে নাগাড়ে গুলি ছুড়ছে। স্বপনকে যে মারল, তার হাতে তো স্বয়ংক্রিয় রিভলবার ছিল!”
পুলিশের বক্তব্য, টুলকোকে জেরা করে জানা গিয়েছে, ঘটনাস্থলে সে ছাড়াও বাপি এবং কৃষ্ণ ছিল। পুলিশের দাবি, স্বপনকে দু’টো গুলি করার কথা স্বীকারও করেছে টুলকো।
কিন্তু এই তিন জনকেই ভাল ভাবে চেনেন রঞ্জিত ও সুকুমার। তাঁরা বলেন, “টুলকো আমাদের পাড়ার ছেলে। বহু দিন ধরেই চিনি। কৃষ্ণ এবং বাপিকেও ভাল ভাবে চিনি। ঘটনাস্থলে ওদের চিনতে পারব না?”
তা হলে কি প্রত্যক্ষদর্শীরা ঠিক বলছেন না? না কি খুনের কথা কবুল করে টুলকো পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে? এলাকার তৃণমূলকর্মীদের একাংশের দাবি, পুলিশি তদন্তই ঠিক পথে চলছে না।
অসঙ্গতি শুধু এটাই নয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, আততায়ীদের এক জন স্বয়ংক্রিয় রিভলভার ব্যবহার করেছিল। কিন্তু টুলকোকে জেরা করে পুলিশ যে দু’টো রিভলভার উদ্ধার করেছে, সেগুলি দেশি রিভলভার বলেই পুলিশ সূত্রের খবর।
পার্থই যে স্বপন খুনের মূল ষড়যন্ত্রকারী, সে কথা টুলকোকে জেরা করে জানা গিয়েছে বলে দাবি পুলিশের। যদিও এ দাবি মানতে নারাজ স্বপনের পরিবার এবং রঞ্জিত-সুকুমারেরা। কেন?
স্বপনের পরিবার বলছে, মাস কয়েক আগেও যখন স্বপনের উপর হামলা হয়, তখন পার্থ-ই তাঁর চিকিৎসার খরচের ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই লোকই স্বপনকে মারবে, এ কথা বিশ্বাস করা যায় না। পার্থ এবং স্বপনের ঘনিষ্ঠতার কথা স্বীকার করেছেন রঞ্জিত-সুকুমারও। স্থানীয় তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, ওই খুনের ঘটনায় ফাঁসানো হয়েছে পার্থকে। একই সঙ্গে তৃণমূল কর্মীদের দাবি, এলাকায় পার্থ এবং টুলকো দলের দুই বিরোধী গোষ্ঠীর সদস্য। নিজের ঘনিষ্ঠ কাউকে মারতে পার্থ এবং টুলকো এক সঙ্গে হাত মেলাবে, এ কথা বিশ্বাসই করা যায় না। একই কথা বলছেন স্বপন-ঘনিষ্ঠ দুই প্রত্যক্ষদর্শীও। প্রশ্ন উঠছে এ ক্ষেত্রে খুনের কারণ কী, তা নিয়েও।
তবে এ সব ‘অসঙ্গতি’র অভিযোগকে আমল দিতে নারাজ চম্পকবাবু। তিনি বলেন, “দিন কয়েক পরে পুরো বিষয়টাই স্পষ্ট হয়ে যাবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.