|
|
|
|
পান্তা-কার্তিক পুজো জুবুটিয়ায় |
অর্ঘ্য ঘোষ • নানুর |
মূর্তির কোনও বিশেষত্ব নেই। সেই ময়ূর বাহনের পাশে দেব সেনাপতি কার্তিক। কিন্তু নানুরের জুবুটিয়া গ্রামের কার্তিক পুজোর পার্থক্য নামে। এই অসময়ের কার্তিক পুজো ‘পান্তা কার্তিক’ হিসেবে পরিচিত।
নবান্নের পরে দিন অর্থাৎ পান্তা নবান্নের দিন জুবুটিয়া গ্রামে কার্তিক পুজো হয় বলে এর নাম ‘পান্তা কার্তিক’। চার দিনের এই পুজোকে ঘিরে তাই উৎসবে মেতে উঠেছে গোটা গ্রাম। যাত্রা, নাটক-সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন উদ্যোক্তারা। এই গ্রামের উৎসবে সামিল হতে দূর দূরান্ত থেকে আসেন আত্মীয়রা।
২০০৪ সালে গ্রামের পাণ্ডা পাড়ায় পান্তা বার্ষিক পুজোর প্রচলন করেন স্থানীয় ‘চে-সারা-সারা’ ক্লাব। পুজো প্রচলন করতে গিয়ে প্রথম দিকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল উদ্যোক্তাদের। চাঁদা চাইতে গিয়ে শুকনো উপদেশ শুনতে হয়েছিল বলে অভিযোগ। তাতে অবশ্য হাল ছাড়েননি তাঁরা। নিজেদের শ্রমেই পুজোর প্রচলন করেন তাঁরা। অবসরে ঠিকাতে ধান রোয়া, কাঠ থেকে শুরু করে ধান ঝাড়াইয়ের কাজ করে তাঁরা অর্থ সংগ্রহ করেছেন। পুজো কমিটির সম্পাদক শুভেন্দু কৈবর্ত বলেন, “কার্তিক পুজোর চাঁদা চাইতে গিয়ে অনেকে নানা রকম কথা শুনতে হয়েছে। কেউ বলেছেন, পারলে নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে পুরো কর। কেউ বা মুনিস খেতে পুজো করার উপদেশ দিয়েছেন। আমাদের মধ্যে অধিকাংশেরই তেমন আর্থিক সঙ্গতি নেই। তাই কার্যত মুনিস খেটেই পুজো চালানোর সিদ্ধান্ত নিই।” |
|
ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি। |
শুরুটা কষ্টের হলেও আজ সেই সঙ্কট নেই। বরং নিজেদের পরিশ্রমের টাকায় পুজো করে কিছু টাকা বেঁচে যায়। পুজো কমিটির সভাপতি আশুতোষ গড়াই বলেন, “বেঁচে যাওয়া টাকায় কোনও দুস্থ মেয়ের বিয়ে, অসুখ কিংবা দুস্থ ছাত্রছাত্রীদের বই কিনে দেওয়া হয়।” স্বভাবতই ওই পুজো ঘিরে গ্রামে উন্মাদনা তুঙ্গে। মুর্শিদাবাদের সোনা রুন্দী থেকে শুক্লা দে, বোলপুর থেকে বীণা দাসরা হাজির হয়েছেন বাপেরবাড়িতে। তাঁদের কথায়, “দুর্গাপুজোর পরিবর্তে আমরা পান্তা কার্তিক পুজোতেই আসি। কারণ পুজোর পাশাপাশি বাপেরবাড়িতে নবান্নও সারা হয়ে যায়।” পিছিয়ে নেই ছোটরাও। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী দীপিকা চক্রবর্তী, ষষ্ঠ শ্রেণির সপ্তম কৈবর্তদের কথায়, “দুর্গাপুজোয় মায়ের সঙ্গে অধিকাংশ সময় মামার বাড়ি যেতে হয়। গ্রামের পুজোয় আনন্দ করা হয় না। পান্তা কার্তিক পুজোয় নেই অভাব মিটিয়ে নিই।” ৭৫ বছরের বৃদ্ধ প্রতাপ মাঝি, ৮৫ বছরের নিয়তি কৈবর্তরা বলেন, “গ্রামে দুর্গাপুজো-সহ অন্যান্য পুজো রয়েছে। সেখানে নিজেদের কেমন অনাহূত বলে মনে হয়। পান্তা কার্তিক পুজোয় নিজেদের নাড়ির টান অনুভব করি।” পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা গোপাল চৌধুরী, সীতারাম মণ্ডল, সুকান্ত গড়াইরা বলেন, “সকলকে এক সূত্রে বেঁধে রাখতে আমরা মুনিস খেটে পুজো চালিয়ে যাব।” |
|
|
|
|
|