আর সাড়ে চার মাস পরেই পরীক্ষা। কিন্তু এ রাজ্য থেকে যাঁরা মেডিক্যালের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা দেবেন, তাঁরা এখনও জানতেই পারলেন না, ডাক্তারি পাশ করেও তাঁদের ভবিষ্যৎ কতটা সুনিশ্চিত হতে পারে!
রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার এখনও পর্যন্ত নিজের নিজের অবস্থানে অনড় থাকায় ডাক্তারিতে ভর্তি নিয়ে জটিলতা বাড়ছে বই কমছে না। এই অবস্থায় ভরসা সেই সুপ্রিম কোর্টই। সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের জেরে কেন্দ্রীয় সরকার সারা দেশের জন্য মেডিক্যালে অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা মানবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বুধবারেই জানানো হয়েছে, প্রতি বারের মতো ২০১২ সালেও রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডই মেডিক্যালের প্রবেশিকা পরীক্ষা নেবে। আর সমস্যা দেখা দিয়েছে তা নিয়েই। মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া বা এমসিআই জানিয়ে দিয়েছে, অভিন্ন প্রবেশিকা ছাড়া অন্য কোনও ভাবে যাঁরা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হবেন, তাঁদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে না। এখনও পর্যন্ত সেই নির্দেশের কোনও নড়চড় হয়নি। পরিবর্তনের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রকও কিছু জানায়নি। রাজ্যের জয়েন্ট পরীক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা তা নিয়েই।
জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড ইতিমধ্যেই প্রবেশিকা পরীক্ষার দিন ঘোষণা করে দিয়েছে। ১৫ এপ্রিল পরীক্ষা হবে। আনুমানিক ৪৫ হাজার পরীক্ষার্থী এই পরীক্ষা দেবেন। টালিগঞ্জের সৃঞ্জয় দাশগুপ্ত তাঁদেরই এক জন। সৃঞ্জয় বলেন, “মার্চে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। তার পরে জয়েন্ট। ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছে আছে। কিন্তু জয়েন্ট নিয়ে যা চলছে, তাতে ভরসা পাচ্ছি না। উচ্চ মাধ্যমিকের পড়াশোনাতেও মন দিতে পারছি না।” একই রকম উদ্বিগ্ন সৃঞ্জয়ের মা সুমিত্রাদেবীও। তিনি বলেন, “এ ভাবে পরীক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে কার যে কী লাভ, কে জানে! ডাক্তার হয়ে যদি রেজিস্ট্রেশনই না-মিলল, তা হলে এত কষ্ট করে পড়াশোনা করে কী লাভ।”
সৃঞ্জয় এবং তাঁর মায়ের চিন্তা যাঁরা দূর করতে পারেন, সেই স্বাস্থ্যকর্তারা এখনও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “সমস্যা মেটানোর সব রকম সম্ভাব্য পথের খোঁজ চলছে।” আর রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র বলছেন, “হয়ে যাবে কিছু একটা। কেন্দ্র কথা দিয়েছে।” রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব যাঁর ভরসায় রয়েছেন, সেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব পি কে প্রধানের মন্তব্য, “এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কিছু হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে কথা না-বলে কিছু বলা সম্ভবও নয়। আইনি দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া সূত্রে জানানো হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গকে ধরে চারটি রাজ্য (অন্য তিনটি হল মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু) অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার শর্তের বিরোধিতা করেছে। মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু তো ইতিমধ্যেই এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ নিয়েছে।
এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারও কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত। অন্তত ২০১২-র জন্য পুরনো পদ্ধতিতেই রাজ্যগুলিকে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা নিতে দেওয়া হবে বলে ভাবা হচ্ছে। সে-ক্ষেত্রে অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি নিতে হবে। আর এ-সব নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে বলেই কেন্দ্র অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে এখনও রাজ্যগুলির কাছে কোনও নির্দেশিকা পাঠায়নি বলে এমসিআই সূত্রের খবর।
অর্থাৎ এ রাজ্য থেকে যে-সব ছাত্রছাত্রী আগামী বছর ডাক্তারিতে ভর্তি হতে চাইছেন, তাঁদের তাকিয়ে থাকতে হবে শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপের দিকে। |