হলদিয়ায় একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন সদ্য বাতিল করেছে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া। এরই মধ্যে রাজ্যের অন্য একটি প্রস্তাবিত মেডিক্যাল কলেজের উপরেও তৈরি হল অনিশ্চয়তার কালো মেঘ। হাওড়ার বালিটিকুরিতে ইএসআই হাসপাতালে মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করার বিষয়ে রাজ্য সরকারের শ্রম দফতরের সঙ্গে সংঘাত বেধেছে কেন্দ্রের ইএসআই কর্পোরেশনের। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে উঠেছে রাজ্যকে বঞ্চনার অভিযোগ।
সম্প্রতি মেডিক্যাল কলেজের নকশা মঞ্জুরের জন্য ৬৯ লক্ষ টাকার চেক দিয়েও দু’দিন পরে সেটি রাজ্যকে ফেরত পাঠাতে বলেছে ইএসআই কর্পোরেশন। সেই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছে, দেশ জুড়ে প্রথম পর্যায়ে যে ক’টি ইএসআই মেডিক্যাল কলেজ গড়ার কথা ছিল, তার মধ্যে বালিটিকুরির নাম থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করা হয়েছে। পরে কোনও একটি পর্যায়ে তা বিবেচিত হবে। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ রাজ্য শ্রম দফতর ইএসআই কর্পোরেশনে চিঠি পাঠিয়ে নিজেদের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে। শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার এটি আরও একটি নজির। আমরা অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বলেছি। একটি মেডিক্যাল কলেজ হলে কত গরিব মানুষ উপকৃত হতেন। সেখানে সব কিছু আগে থেকে ঠিক থাকা সত্ত্বেও ওরা টাকা ফেরত নিয়ে নিল। এটি অস্বাভাবিক ঘটনা।”
মন্ত্রী আরও অভিযোগ করেছেন, “ইএসআই কর্পোরেশন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, দেশ জুড়ে মেডিক্যাল কলেজ গড়ার প্রকল্পের প্রথম পর্যায়েই বালিটিকুরিতে কলেজ তৈরি হবে। কিন্তু আচমকা তারা বলছে, প্রথম পর্যায়ের জন্য মোট ১০ হাজার কোটি টাকা খরচের পরিকল্পনা ছিল। সেই টাকা নাকি ইতিমধ্যে খরচ হয়ে গিয়েছে। বালিটিকুরির জন্য আর কিছু অবশিষ্ট নেই।” এই রকম ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ’ কী ভাবে ইএসআই কর্পোরেশন করে, সেই প্রশ্নও চিঠিতে তুলেছে শ্রম দফতর। পূর্ণেন্দুবাবুর ক্ষোভ, “মেডিক্যাল কলেজ হওয়ার আগে বালিটিকুরি হাসপাতালের পরিষেবা যাতে উন্নত হয়, তার জন্য আমরা সব রকম চেষ্টা শুরু করেছিলাম। হাসপাতালের শয্যা-সংখ্যা ৩০০ থেকে ৫০০ করার তোড়জোড়ও শুরু হয়েছিল। নতুন সুপার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজ্যের স্বার্থে আমাদের সেই কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতে যেতে হল।”
বালিটিকুরি ইএসআই হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষও এই ঘটনায় হতাশ। সুপার ময়ূখ রায় জানিয়েছেন, ইএসআই কর্পোরেশনের অনুমতি নিয়েই কিছু দিন আগে হাওড়া জেলা পরিষদে মেডিক্যাল কলেজের নকশা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। এর জন্য ফি দিতে হয়। সেই ফি পাঠিয়েও আচমকা ইএসআই কর্পোরেশন প্রত্যাহার করল। এর কারণই তাঁদের বোধগম্য হচ্ছে না।
কেন হঠাৎ ‘প্রায়োরিটি লিস্ট’ থেকে বাদ পড়ল বালিটিকুরি মেডিক্যাল কলেজ? কেন পিছিয়ে দেওয়া হল এই মেডিক্যাল কলেজ তৈরির কাজ? ইএসআই কর্পোরেশনের সিনিয়র স্টেট মেডিক্যাল কমিশনার (পূর্বাঞ্চল) সমীরকুমার চৌধুরীর ব্যাখ্যা, “প্রথম পর্যায়ের টাকা হঠাৎ শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন বালিটিকুরির কাজ করা যাবে না। টাকা কেন শেষ হল, তা এক কথায় ওই ভাবে বলা যায় না।” কিন্তু টাকা দিয়ে কেন ফেরানো হল? ইএসআই কর্পোরেশন কি হঠাৎ করে অনুধাবন করলেন যে, বালিটিকুরির জন্য টাকা ফুরিয়ে গিয়েছে?
উত্তরে সমীরবাবু বলেন, “পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চিত করার কোনও উদ্দেশ্য আমাদের নেই। বালিটিকুরি মেডিক্যাল কলেজ হবে। তবে এখনই নয়।” তা কবে হবে, সে বিষয়ে অবশ্য কিছুই জানাতে পারছে না ইএসআই কর্পোরেশন। অতএব রাজ্যের ওই প্রস্তাবিত মেডিক্যাল কলেজের ভাগ্য আপাতত ঝুলেই রইল। |