|
|
|
|
সেই প্রযুক্তি-ছাত্রীর আর্জি খারিজ |
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ নয়, জানাল হাইকোর্ট |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
নম্বর কমবেশি। পাশ-ফেল। ভর্তি হতে না-পারা। শিক্ষার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিলে অনেকেই এখন সোজা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। এই অবস্থায় কলকাতা হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সংক্রান্ত ব্যাপারে আদালত কোনও রকম হস্তক্ষেপ করবে না।
রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ‘হেরিটেজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’র প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর দায়ের করা মামলার রায় দিতে গিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল ও বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, পঠনপাঠন সংক্রান্ত বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ই সিদ্ধান্ত নেবে। সেখানে কোনও হস্তক্ষেপ করবে না আদালত।
হেরিটেজের বায়োটেকনোলজি এম টেক প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী দ্বিতীয় সেমেস্টারের মৌখিক পরীক্ষায় তিন বার অকৃতকার্য হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ছাত্রীটি দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ হতে পারেননি। তার পরেই হাইকোর্টে মামলা করে ওই ছাত্রী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর প্রতি অন্যায় আচরণ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রতিহিংসাপরায়ণতা’র জন্যই দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হতে পারছেন না তিনি। অন্তর্বর্তী আদেশ চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন জানান ওই ছাত্রী।
গত মঙ্গলবার মামলাটি আদালতে উঠেছিল। বিচারপতি তপেন সেন সে-দিন কোনও অর্ন্তবর্তী নির্দেশ দেননি। বিচারপতি জানিয়েছিলেন, শুনানির পরে তিনি চূড়ান্ত রায় দেবেন। বিচারপতি তপেন সেনের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন ওই ছাত্রী। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হয়। দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিচারপতিরা জানান, শিক্ষা সংক্রান্ত ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
ওই ছাত্রীর পরীক্ষা নিয়ে ইতিমধ্যে চাপান-উতোর হয়ে গিয়েছে যথেষ্টই। উপাচার্য সব্যসাচী সেনগুপ্তের অভিযোগ, হেরিটেজ ইনস্টিটিউটের ওই ছাত্রীকে পাশ করানোর জন্য তাঁর কাছে একাধিক অনুরোধ আসে। কখনও আইন ও বিচার মন্ত্রী মলয় ঘটক, কখনও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ব্যক্তিগত সচিব কৌশিক বসাকের নাম করে তাঁকে ফোনে এই ব্যাপারে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু তিনি জানান, এই অনুরোধ রাখা সম্ভব নয়। মলয়বাবু ও কৌশিকবাবু অবশ্য ফোনে অনুরোধ জানানোর কথা অস্বীকার করেছেন।
গত ২৭ অক্টোবর কারিগরি শিক্ষা অধিকর্তা সজল দাশগুপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি পাঠিয়ে ওই ছাত্রীর মৌখিক পরীক্ষা সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য মন্ত্রীর কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেন। চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল না এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সংস্থা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়? এম টেক পরীক্ষার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন সিদ্ধান্ত কবে থেকে কার্যকর হয়েছে, জানতে চাওয়া হয় তা-ও। এ ছাড়া পরীক্ষকদের যে-তালিকা থেকে ওই ছাত্রীর পরীক্ষকদের নির্বাচন করা হয়েছে, সেই তালিকাটি চাওয়া হয়েছিল।
এ দিন আদালতে সজলবাবুর সেই চিঠির প্রসঙ্গ তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ। তিনি বলেন, “সব ছাত্রছাত্রীকে যে-পরীক্ষা দিতে হয়, আবেদনকারিণীও সেই পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু তিন বার মৌখিক পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। তৃতীয় বার তাঁর পরীক্ষা নিয়েছিলেন আইআইটি-র তিন শিক্ষক। সে-বারেও অকৃতকার্য হওয়ায় ওই ছাত্রী দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হতে পারেননি।” অরুণাভবাবু বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ওই ছাত্রীর পরীক্ষার কাগজপত্র দেখতে চেয়েছেন বলে উচ্চশিক্ষা দফতরের এক অধিকর্তা চিঠি দেন বিশ্ববিদ্যালয়কে। শিক্ষামন্ত্রী বাংলা সাহিত্যে এম এ। বায়োটেকনোলজি পরীক্ষার কাগজপত্র দেখে তিনি কী বুঝবেন, তা বোধগম্য হচ্ছে না।”
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ইত্যাদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে সম্প্রতি জানান শিক্ষামন্ত্রী। এই সংক্রান্ত চারটি তদন্ত রিপোর্ট রাজ্যপাল তথা আচার্যের কাছে জমাও দিয়েছেন তিনি। ওই উপাচার্যকে বরখাস্তের সুপারিশ করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে রাজ্য। উপাচার্যের পাল্টা অভিযোগ, হেরিটেজের ওই ছাত্রীকে পাশ না-করানোয় তাঁর বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। |
|
|
|
|
|