|
|
|
|
রাজি হলেন কর্তারা |
রুগ্ণ পরিবহণে অবশেষে
উদ্বৃত্তদের জন্য স্বেচ্ছাবসর
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
ভর্তুকির খুঁটি এক বার সরাতেই কাজ হল। উদ্বৃত্ত কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে রাজি হয়ে গেল রাজ্যের রুগ্ণ সরকারি পরিবহণ নিগমগুলি। বৃহস্পতিবার মহাকরণে তাদের কর্তাদের সঙ্গে পরিবহণমন্ত্রীর বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দফতর-সূত্রের খবর।
লোকসানের ভারে ন্যূব্জ রাজ্যের সরকারি পরিবহণ সংস্থাগুলো কী ভাবে বাঁচবে, তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পরামর্শদাতা সংস্থার সাহায্য নিয়েছে রাজ্য সরকার। তারা বাড়তি কর্মীর বোঝা কমানোর দাওয়াই দিলেও পূর্বতন
বামফ্রন্ট সরকার মানেনি। বরং সরকারি পরিবহণে ভর্তুকির বহর বেড়েই চলছিল দিন দিন। তবে রাজ্যে নতুন সরকার এসে নিগমগুলিকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, ভর্তুকির দিন শেষ। তাদের এ বার নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। কমাতে হবে লোকসানের বোঝা।
আর সেই লক্ষ্যেই তাদের ‘অপ্রয়োজনীয়’ কর্মীর সংখ্যা ছেঁটে ব্যয় কমানোর নির্দেশ দেয় পরিবহণ দফতর। যদিও রাজ্য এ ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত ‘কঠোর’ মনোভাব বজায় রাখতে পারবে কি না, সে সম্পর্কে সংস্থাগুলির কর্তা-কর্মীদের অনেকেই নিশ্চিত ছিলেন না। কিন্তু ভর্তুকি বন্ধই হয়ে যায়। ফলে রাজ্যের পাঁচটি সরকারি পরিবহণ সংস্থায় স্থগিত হয়ে যায় বেতন-পেনশন। যার প্রতিবাদে পরিবহণকর্মীরা আন্দোলনে নামেন।
বেশ ক’দিনের টানাপোড়েন শেষে রাজ্য সরকার তাঁদের বেতনের ফাইল অর্থ দফতরের পাঠায়। আপাতত ভর্তুকি জোগাতেও রাজি হয়। কিন্তু রাজ্য যে এ বিষয়ে কঠোর, এক বার ভর্তুকি বন্ধ হওয়ায় সেই বার্তাটা পৌঁছে দেওয়া গিয়েছে বলে সরকারি মহলের একাংশের অভিমত। বস্তুত রুগ্ণ পরিবহণে অতিরিক্ত কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত সরকার বদল করেনি। বরং জানিয়ে দিয়েছে, প্রতিটি পরিবহণ নিগমকে ‘অপ্রয়োজনী’ ও ‘অবৈধ’ ভাবে চাকরি পাওয়া কর্মীর তালিকা তৈরি করে জমা দিতে হবে। এবং ক্রমে ওই ‘উদ্বৃত্তদের’ বসিয়ে দিয়ে কমিয়ে আনতে হবে আর্থিক চাপ।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর: এ দিন মহাকরণের বৈঠকে পরিবহণমন্ত্রী সুব্রত বক্সি নিগমগুলির কর্তাদের জানিয়ে দেন, যত রকম ভাবে সম্ভব ব্যয় কমিয়ে আয় বাড়াতে হবে। প্রতি মাসে এত টাকা ভর্তুকি সরকার গুনতে পারবে না। সিএসটিসি, এনবিএসটিসি, এসবিএসটিসি, ডব্লিউবিএসটিসি এবং সিটিসি-র পিছনে ফি বছর চারশো কোটি টাকা ভর্তুকি লাগে। দফতরের হিসেবে, পাঁচ সরকারি পরিহণ সংস্থায় মোট কর্মী ১৮ হাজার, যাঁদের অর্ধেক ‘বসে বসে’ বেতন পান। টাকার অভাবে নতুন বাস কেনা যাচ্ছে না। বিকল বাসের মেরামতিও শিকেয়।
এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত এক পরিবহণকর্তার কথায়, “মন্ত্রী বলেছেন, কর্মীদের বেতন দিতেই বহু টাকা চলে যাচ্ছে। তিনি চান, কর্মী কমিয়ে আমরা যেন টাকা বাঁচাই। কী ভাবে কী করা হবে, তা আমাদেরই ঠিক করতে বলেছেন মন্ত্রী। স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে রাজি হওয়া ছাড়া আমাদের কিছু করার ছিল না।”
কিন্তু তাতেও তো বহু টাকা দরকার! সেই টাকা আসবে কোথা থেকে?
বৈঠকের পরে এসবিএসটিসি-র চেয়ারম্যান তমোনাশ ঘোষ বলেন, “মন্ত্রী বলেছেন, ভর্তুকির টাকা থেকেই ওই পাওনা মেটানো যাবে।” সিএসটিসি-র চেয়ারম্যান তারাপদ মাঝির বক্তব্য, “চারটি নিগমের কর্মীদের বেতন বাবদ বরাদ্দ টাকার ৫% গত মাস থেকে কেটে রাখা হচ্ছে। তা দিয়ে একটা তহবিল করা হবে। সেই তহবিল থেকে স্বেচ্ছাবসরের টাকা দেওয়ার চেষ্টা হবে।”
পাশাপাশি তমোনাশবাবু জানাচ্ছেন, “প্রতিটি পরিবহণ সংস্থাকে অ-লাভজনক রুটের তালিকা বানাতে বলা হয়েছে। সেই রুটগুলোকে পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার কথাওভাবা হচ্ছে। টিকিট ফাঁকি ধরে এবং বাসের জ্বালানির খরচ বাঁচানোর পথও খুঁজতে নির্দেশ দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী।” |
|
|
|
|
|