কেন্দ্রের নির্দেশে আগামী বছর থেকে কয়লার মূল্য নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু করার ভাবনা-চিন্তা করছে কোল ইন্ডিয়া। আর তাতে কোল ইন্ডিয়ার কয়লার দাম ফের বাড়ার আশঙ্কা করছে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি। কয়লার দাম বাড়লে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচও বাড়বে। স্বভাবতই বোঝা চাপবে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির কাঁধে।
জ্বালানির দাম বাড়লে, বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির নিজেদের মতো সারচার্জ বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এর জন্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের অনুমতিও লাগে না। সিইএসসি-র মতো বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি সেই সুযোগ নিলেও, সরকার নিয়ন্ত্রিত বিদ্যুৎ সংস্থাগুলিকে ফুয়েল সারচার্জ পর্যন্ত বাড়াতে দিচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গ-সহ রাজ্য সরকারগুলি।
এমনিতেই সরকার বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ঘাড় শক্ত করে থাকায় তীব্র আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি। সম্প্রতি মন্ত্রী পর্যায়েও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রকৃত পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে এ বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী অনড় থাকায় তা তোলাই যায়নি। ব্যাঙ্কগুলিও জানিয়ে দিয়েছে, বিদ্যুতের দাম না বাড়ালে তারা ঋণ দেবে না। এই পরিস্থিতিতে ফের কয়লার দাম বাড়লে চোখে অন্ধকার দেখবে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি।
কোল ইন্ডিয়া-র কয়লার দাম এখন ঠিক করা হয় প্রতি কেজি কয়লা জ্বালিয়ে নির্দিষ্ট ভাবে ঠিক কত কিলো ক্যালোরি কার্যকরী তাপ পাওয়া যাচ্ছে তা মেপে। কয়লার ভিতরে থাকা ছাই ও আর্দ্রতার কারণে তাপের যে অংশ নষ্ট হয়, তার দাম কোল ইন্ডিয়া নেয় না। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম ঠিক করার সময় ছাই ও আর্দ্রতার কারণে তাপের নষ্ট হওয়া অংশ বাদ দেওয়া হয় না। কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রক চায় কোল ইন্ডিয়াও ওই পদ্ধতিতে কয়লার দাম ঠিক করুক।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় কয়লা সচিব অলোক পার্তি কোল ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যানকে নতুন পদ্ধতিতে কয়লার দাম নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন। পয়লা জানুয়ারি থেকে নতুন নিয়মে কয়লার দাম ঠিক করার জন্য পরিকাঠামোগত প্রস্তুতিও নিতে বলা হয়েছে কোল ইন্ডিয়াকে। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক এবং কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ পর্ষদের সঙ্গে কোনও আলোচনাই করা হয়নি বলে বিদ্যুৎ শিল্প মহলের অভিযোগ। |
কয়লা মন্ত্রকের অবশ্য যুক্তি, উচ্চ পর্যায়ের বেশ কয়েকটি কমিটির সুপারিশ এবং সদ্য গঠিত সুসংহত শক্তি নীতি কমিটির সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে। সারা দেশে এখন ৭৫টি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। জ্বালানি কয়লার জন্য তারা সম্পূর্ণ ভাবে কোল ইন্ডিয়ার উপর নির্ভরশীল। কারণ সারা দেশে যা কয়লা উত্তোলন হয়, তার ৮২ শতাংশই করে কোল ইন্ডিয়া। এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গড়ে পাঁচ হাজার টন কয়লা লাগে। জোগানের অভাবে ইদানীং অনেক সংস্থা কয়লা আমদানি করতেও বাধ্য হচ্ছে। ২০১০-১১ আর্থিক বছরেই কম-বেশি ৬ কোটি ৮০ লক্ষ টনের মতো কয়লা আমদানি করতে হয়েছে। বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির বক্তব্য, আন্তর্জাতিক বাজারে যে কয়লা পাওয়া যায়, তাতে ছাই ও আর্দ্রতার অংশ থাকে নগন্য। ফলে তাপের প্রায় পুরোটাই কাজে লাগানো যায়। কিন্তু ভারতের কয়লায় ছাই এবং আর্দ্রতা অনেক বেশি থাকে। তাই মন্ত্রকের নতুন ভাবনা অবাস্তব।
কোল ইন্ডিয়ার এক কর্তা অবশ্য বলছেন, এত দিন তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি তাদের কয়লার মান নিয়ে নানা অভিযোগ করে এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনও সমস্যা দেখা দিলে তাঁদের কয়লাকেই দোষ দেওয়া হয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি আরও ভালো মানের কয়লা পাবে। কিন্তু উন্নত মানের জন্য কয়লার দাম আরও বেশি নেবে কোল ইন্ডিয়া। তাতে সংস্থার মুনাফা বাড়বে। |