মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে থেকে বুধবার রাতে আটক হওয়া যুবককে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করল মানবাজার থানা।
দীপক সিং সর্দার নামের ওই যুবকের বাড়ি পুরুলিয়ার মানবাজার থানার নডিহা গ্রামে। ওই যুবককে বুধবার রাতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে আটক করে পুলিশ। জেরার মুখে সে অসংলগ্ন কথা বলে। কখনও নিজেকে দাবি করে মাওবাদী বলে। কখনও আবার দাবি করে, চাকরির আশায় এখানে এসেছে।
খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার মানবাজার থানার পুলিশ দীপককে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সুনীলকুমার চৌধুরীর দাবি, “দীপক সিং সর্দার এবং তার দুই সঙ্গী ইমরাম খান ও গুড্ডু আনসারি পুলিশি জেরার মুখে মানবাজারের এক ভাড়া গাড়ির চালককে খুন করার কথা কবুল করেছে। তবে দীপক কলকাতায় গিয়ে কেন নিজেকে মাওবাদী বলে পরিচয় দিয়েছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তার সঙ্গে মাওবাদীদের যোগ থাকার কোনও প্রমাণও এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। দীপককে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে।” এর আগে ওই চালক-খুনের ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করেছিল কুলটি থানার রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা ইমরানকে। তাকে পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
মানবাজার থানার গোপালনগর গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় ভাড়া গাড়ির চালক নিমাই কর্মকার গত ২৪ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। গাড়ির হদিসও পাওয়া যায়নি। তাঁর স্ত্রী পরের দিন সন্ধ্যায় মানবাজার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। শুক্রবার সকালে ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলার পিঁড়রাজোড়া থানা এলাকার জঙ্গল থেকে স্থানীয় পুলিশ নিমাইবাবুর দেহ উদ্ধার করে। অন্য দিকে, ২৪ নভেম্বর রাতেই কুলটির একটি সিনেমা হলের কাছে পুলিশের টহলদারি ভ্যান নিমাইবাবুর ভাড়া গাড়িটিকে আটক করে। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় পুলিশ গাড়ির আরোহী ইমরান খান ও গুড্ডু আনসারিকে গ্রেফতার করে। এক জন পালিয়েছিল।
পুলিশের দাবি, সে দিন পালিয়ে যাওয়া যুবকই দীপক। ইমরান ও গুড্ডুকে আসানসোল আদালতে তোলা হলে তারা জামিন পেয়ে যায়। খবর পেয়ে মানবাজার থানার পুলিশ কুলটি গিয়ে গাড়িটিকে আটক করে এবং ওই দু’জনকে ধরে নিয়ে আসে। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে ইমরান জানিয়েছিল, নডিহা গ্রামের বাসিন্দা দীপক তাদের দু’জনকে মানবাজারে ডেকেছিল। তারা তিন জনে বেশি টাকার ভাড়া দেওয়ার লোভ দেখিয়ে নিমাইবাবুকে ধানবাদ পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে। বোকারো সীমান্তে ঢুকতেই নিমাইবাবুর গলায় তারের প্যাঁচ লাগিয়ে খুন করে দেহ রাস্তার ধারে জঙ্গলে ফেলে গাড়ি নিয়ে তিন জনে কুলটির দিকে পালায়।
পুলিশ জানিয়েছে, কুলটি থানার পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে দীপক বাকি দিনগুলি কোথায় ছিল, তা পরিষ্কার নয়। কেনই বা তারা নিমাইবাবুকে খুন করল তা জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। আগেই ইমরানকে আদালতে তোলা হয়েছিল। পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজত হয়েছে। দীপক ও গুড্ডুকে আজ শুক্রবার, আদালতে তোলা হবে। এ দিন দুপুরে ঝাড়খণ্ডের পিঁড়রাজোড়া থানা থেকে পুলিশকর্মীরা মানবাজারে এসে ধৃত তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এ দিন দুপুরে নডিহা গ্রামে দীপকের বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী অষ্টমী বলেন, “আমার স্বামী আসানসোলে অস্থায়ী কর্মীর কাজ করে বলে জানি। মাঝে মধ্যে টাকা পাঠাত। বাড়িতে কম আসত। তবে সে মাওবাদীদের সঙ্গে যুক্ত নয়।” দীপকের হদিস পেতে পুলিশ তার বাবা জগদীশ সিং সর্দারকে থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। জগদীশবাবু বলেন, “আমার ছেলে খুন করে থাকলে তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার।” |