শ্বশুরবাড়িতে প্রথম পা রাখলেন জাগরী
মৃত্যুর আগে একবার বড় ছেলেকে দেখতে চেয়েছিলেন বাবা। সেই আশা পূরণ হয়নি গুরুদাস সোরেনের। তবে বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে ১৩ বছর পরে রানিবাঁধের মিঠাআম গ্রামে নিজের বাড়িতে পা রাখলেন সেই বড় ছেলে, আত্মসমর্পণকারী মাওবাদী স্কোয়াড নেতা রাজারাম সোরেন ওরফে সাগেন সাঁওতাল।
ছিলেন ঠিক আধঘণ্টা। তাতেই আবেগে ভাসল গোটা পরিবার। চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না স্বামীর সঙ্গে প্রথমবার শ্বশুরবাড়িতে পা দেওয়া রাজারামের স্ত্রী তথা মাওবাদী নেত্রী জাগরী বাস্কেও। মাওবাদী দম্পতির ছেলে বাহাদুরও প্রথমবার পেল ঠাকুমা, কাকা, পিসিদের আদর। গত ১৭ নভেম্বর মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আত্মসমর্পণ করেন রাজারাম ও জাগরী।
শ্বশুরবাড়িতে জাগরী বাস্কে। নিজস্ব চিত্র
বড় ছেলের সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসার খবর পেয়ে খুশি হয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত বাবা গুরুদাসবাবু। চেয়েছিলেন ছেলেকে একবার চোখের দেখা দেখতে। এ দিন নিজের বাড়িতে সংক্ষিপ্ত সফরের মধ্যে দিয়ে এই মাওবাদী দম্পতির মূলস্রোতে ফেরার প্রক্রিয়াই শুরু হয়ে গেল বলে মনে করছে প্রশাসন। মঙ্গলবার রাতে মারা যান গুরুদাসবাবু। সেই খবর পেয়েই বাড়িতে আসতে চেয়েছিলেন রাজারাম। বুধবার বিকেলেই তাঁকে গ্রামের বাড়িতে আনার কথা ছিল। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে সেই ঝুঁকি নেয়নি পুলিশ বা যৌথ বাহিনী। এ দিন সকালে কড়া পাহারায় গাড়িতে ওই মাওবাদী দম্পতিকে রানিবাঁধ ব্লক সদর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরের জঙ্গলঘেরা প্রত্যন্ত গ্রাম মিঠাআমে নিয়ে যাওয়া হয়। রাস্তাতেও ছিল যৌথ বাহিনী। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বলেন, “রাজারামের পরিবার পুলিশের কাছে আবেদন করেছিল। রাজারাম একই আবেদন করেছিলেন পুরুলিয়া জেলা পুলিশের কাছে। তারই ভিত্তিতে এ দিন ওঁদের নিয়ে আসা হয়।”
বেলা ১১টা নাগাদ গ্রামের আদিবাসীপাড়ায় খড় ও টালির ছাউনি দেওয়ার মাটির বাড়ির দরজার একেবারে গা ঘেঁষে দাঁড় করানো হয় রাজারামদের গাড়িটিকে। গাড়ি থেকে নেমেই সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ছবি তোলা নিয়ে হুঁশিয়ারি দেন জাগরী। বলেন, “কেউ ছবি তুলবে না। ভাই, ছবি তুললে মার খাবি কিন্তু! সব ছবি মোছাব।”
বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছেন রাজারাম। ছবি ছবি: উমাকান্ত ধর।
বাড়িতে ঢুকেই সদর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ততক্ষণে পড়শিরাও ভিড় করেছেন বাড়ির সামনে। বাইরে থেকে দেখা যায়, উঠোনে কান্নায় ভেঙে পড়েছে গোটা সোরেন পরিবার। বৃদ্ধা শাশুড়ি সম্বনি সোরেনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন ছেলে কোলে জাগরীও। পরে রাজারামের এক দিদি সিন্ধুমণি বলেন, “ভাই-ও খুব কাঁদছিল। জানতে চাইল বাবা কী ভাবে মারা গেলেন।”
সম্বনিদেবী জানালেন, হলুদকানালি হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক দিয়ে ফেল করার পরে আর পড়েনি তাঁর বড় ছেলে। তার পরে হঠাৎই এক দিন রাজারাম বাড়ি ছেড়ে চলে যান। রাজারাম, জাগরী আর তাঁদের ছেলে এ দিন বাড়িতে আলুসেদ্ধ-ভাত খান। সম্বনিদেবী বলেন, “এত দিন পরে ছেলে, বউমা আর নাতিকে দেখে খুবই ভাল লাগল। বাড়িতে থাকতে বলেছিলাম। পরে আবার আসবে বলেছে রাজারাম।” রাজারাম আর জাগরীর কাছেও সংবাদমাধ্যমকে ঘেঁষতে দেয়নি যৌথ বাহিনী। তবে রাজারামের ভাই, খাতড়া আদিবাসী কলেজের ছাত্র চুনারাম সোরেনের একটাই আক্ষেপ, “বাবা বেঁচে থাকতে একবার দেখতে চেয়েছিলেন দাদাকে। বাবার সেই সাধ অপূর্ণই থেকে গেল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.