কম ভাত নিয়ে হইচই
বরযাত্রীদের দুর্ব্যবহারে বিয়েই করলেন না পাত্রী
পাত্রপক্ষের ‘দুর্ব্যবহারের’ বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন খোদ পাত্রী। জানিয়ে দিলেন, তাঁর বাবা-মাকে যাঁরা অপমান করেছেন, সেই বাড়িতে তিনি পা দেবেন না। ‘লগ্নভ্রষ্টা’ হবেন জেনেও পাত্রী জেদে অনড়। অগত্যা বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে ওড়িশার সম্বলপুরে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেতে হল পাত্রপক্ষের লোকজনকে। আপাতত বিয়ে তো নয়ই, মাধ্যমিকের পরে পড়া ছেড়ে দেওয়া সেই তরুণী নতুন করে পড়াশোনা করতে চান।
পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে গোপালমোড় এলাকার বাসিন্দা, ১৯ বছরের ইতু সেনের এই অদম্য মনোভাব প্রশংসা পেয়েছে প্রতিবেশীদের। পেশায় ছোট্ট চায়ের দোকানের মালিক সুনীল সেনের মেয়ে ইতুর বিয়ে ছিল বুধবার। সংসারে অভাব থাকলেও মেয়ের বিয়ের জন্য যথাসাধ্য আয়োজন করেছিলেন সুনীলবাবু। পাত্র তনু সিংহ সম্বলপুরের বাসিন্দা। দশকর্মার দোকান আছে তাঁর। বুধবার সন্ধ্যায় ট্রেনে করে বরযাত্রীরা পৌঁছন পুরুলিয়া স্টেশনে।
পুরুলিয়া স্টেশনে বরযাত্রীরা।
তখন থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। পাত্রীপক্ষের লোকজন স্টেশনের যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে পাত্রপক্ষের হাত-মুখ ধোওয়ার বন্দোবস্ত করেছিলেন। তাতে বরযাত্রীরা অসন্তুষ্ট হন। ইতুর বাড়ির লোকজন তখন স্থানীয় একটি লজে গোটা দুয়েক ঘরের ব্যবস্থা করেন।
রাতে বিয়ের আসরে খাওয়াদাওয়া নিয়ে ফের ঝামেলা বাধে। প্রয়োজনমতো ভাত নেই কেন, এই অভিযোগে প্রথমে দু’পক্ষের তর্কাতর্কি, পরে হাতাহাতিও শুরু হয়। সুনীলবাবু বলেন, “আমরা লুচি, সব্জি, মাছ, মাংস, মিষ্টি সব কিছুরই ব্যবস্থা রেখেছিলাম। বরযাত্রীদের এক জন চার কেজির মতো ভাত রাখতে বলায় তারও ব্যবস্থা করা হয়। হঠাৎই ওঁদের কয়েক জন ভাত কম বলে চিৎকার শুরু করেন। আমাদের আত্মীয়দের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেন।” ইতুর দাদা নয়নের কথায়, “বরযাত্রী হয়ে ওঁরা যা আচরণ করলেন, তা ভাবা যায় না। আমার গায়ে হাতও তুলেছেন ওঁদের কয়েক জন।” সুনীলবাবুর স্ত্রী মালাদেবী বললেন, “আমি কাঁদতে কাঁদতে সবাইকে অনুরোধ করলাম,
ইতু সেন।
থামতে। কিন্তু কে কার কথা শোনে!”
এই ঝামেলার মধ্যেই বাবা-দাদাকে হেনস্থা হতে দেখে বিয়েতে আপত্তি তোলেন ইতু। অনেক বুঝিয়েও তাঁকে বিয়েতে রাজি করানো যায়নি। গণ্ডগোলের খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ যায় সেখানে। ইতুর কাছে তারা জানতে চায়, তিনি বিয়ে করবেন কি না। ইতু পুলিশদেরও একই কথা বলেন। ইতুর মর্জি বুঝে বরযাত্রীরাও চাপাচাপি করেননি।
বিয়ের লগ্নও পেরিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকালে পুরুলিয়া স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা বরযাত্রীরা বলেন, “ওড়িশার লোকজন ভাত পছন্দ করেন। ভাতও জোটেনি। মেয়েও বলল, আমি বিয়ে করব না। তাই ফিরে যাচ্ছি।”
এ দিন ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, আত্মীয়স্বজন, পড়শিরা উঠোনে চুপচাপ বসে। ইতস্তত ছড়ানো নানা জিনিসপত্র। ইতুও সেখানে ছিলেন। হাতে মেহেন্দির নকশা। বললেন, “আমার সিদ্ধান্তের জন্য আমি মোটেও অনুতপ্ত নই। সামান্য কিছু কারণ নিয়ে যাঁরা আমার বাবাকে অপমান করেছেন, দাদার গায়ে হাত তুলেছেন, সেই পরিবারের ছেলেকে বিয়ে করে আমি সুখী হতাম না। তাই বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিই।” প্রতিবেশী অনিল মাহাতোর কথায়, “একদম ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইতু।”
মাধ্যমিক পাশ করার পরে আর পড়েননি এই তরুণী। এখন আবার পড়তে চান। সুনীলবাবু বলছেন, “আমি মেয়ের ইচ্ছাকেই মর্যাদা দেব।”
অবশ্য রেখা কালিন্দী, বীণা কালিন্দী, আফসানা খাতুনদের জেলায় এটাই তো স্বাভাবিক!

সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.