প্রায় কুড়ি দিন ধরে খেয়া পারাপার বন্ধ। ফলে হয়রানির শিকার হচ্ছেন চাপড়ার ভগবানপুর সহ আশেপাশের প্রায় দশ বরোটি গ্রামের মানুষ। চাপড়া ও কৃষ্ণনগর ১ ব্লকের মাঝখানে পলদা বিলের উপরে এই যুগনিদহ ফেরি ঘাট এলাকার লোকজনের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই খেয়ার উপরে এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা অনেকটাই নির্ভরশীল। জেলা শহর কৃষ্ণনগরের সঙ্গে যোগাযোগও অনেক সহজে করা যেতে পারে এই খেয়ার মাধ্যমে। এলাকার বাসিন্দা বাগবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য দীনবন্ধু হালদার বলেন, “কেন যে খেয়া পারাপার বন্ধ হয়ে গেল আমরা বুঝতে পারছি না। এক দিন হঠাৎ দেখলাম, যে নৌকা নেই। আগে যিনি চালাতেন, তিনিও নেই।” তিনি বলেন, “এই ঘাটটা জেলা পরিষদের। আমরা তাই খেয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা জেলা পরিষদকে লিখিত ভাবে জানিয়েওছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।” সিপিএম নিয়ন্ত্রণাধীন জেলা পরিষদের সভাধিপতি মেঘলাল শেখ বলেন, “ওই এলাকায় একটি বাঁশের সাঁকো হয়েছে। সে কারণেই ওই ঘাটটি আর তেমন লাভজনক নয়।” তিনি বলেন, “তারপরেও আমরা তিনবার ওই খেয়া ঘাটের জন্য টেন্ডার ডেকেছি। একজনও তাতে উৎসাহ দেখাননি। এ দিকে, পুরনো যাঁর হাতে ওই খেয়াঘাট ছিল, তাঁর মেয়াদ ফুরিয়েছে। তাই ওই ঘাটটি বন্ধই রয়েছে। কাউকেই দায়িত্ব দেওয়া যায়নি।”
কিন্তু স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, ওই খেয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুবই অসুবিধা তৈরি হয়েছে। চাপড়া ব্লকের বাগবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ভগবানপুর, ময়দানপুর, ট্যাংরা, ভাতশালা, মহেশপুর, কুলতলা, ডাংনা, বাগবেড়িয়া, কালীপুর এলাকার মানুষ চাপড়া থেকে পলদা বিল পার হয়ে ভীমপুর বাজারে যাতায়াত করেন। তা ছাড়া, প্রায় আড়াইশো ছাত্রছাত্রী প্রতিদিন ওই বিল পার হয়ে পড়তে যায় ভীমপুর স্বামীজি বিদ্যাপীঠে। ফলে খেয়া পারাপার বন্ধ থাকায় চরম অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন এলাকার মানুষ।
ভগবানপুরের বাসিন্দা পেশায় স্কুল শিক্ষক রাজকুমার হালদার বলেন, “ওই খেয়া বন্ধ থাকায় আমাদের প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে পলদা বিলের উপরে একটি বাঁশের সেতু তৈরি হলেও ওই এলাকার মানুষ সেটা ব্যবহার করতে পারলেন না। কারণ, তার জন্য আরও একটি খাল পার হতে হয়। তাই মানুষ বাধ্য হয়েও প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে কৃষ্ণগঞ্জ থানার জঘাটা খেয়া ঘাট দিয়ে পারাপার করতে হচ্ছে।” তবে যুবানীদহ খেয়া বন্ধ থাকায় সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়ছে ছাত্রছাত্রীরা। কারণ হয় তাদের খাল পার হতে হচ্ছে, অথবা পলদা বিল পার হওয়ার জন্য স্থানীয় মৎস্যজীবীদের উপরে ভরসা করতে হচ্ছে। তাঁর কথায়, “ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্থানীয় মৎস্যজীবীরা এগিয়ে আসছেন। কিন্তু তাঁদের নৌকা ছোট। তাতে যাত্রী তুলে বিশাল এই বিল পার করা বেশ বিপজ্জনক। যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।” ভীমপুর স্বামীজি বিদ্যাপীঠের প্রধানশিক্ষক দীনবন্ধু মণ্ডল বলেন, “ওই এলাকা থেকে প্রায় আড়াইশো ছাত্রছাত্রীকে প্রায় রোজই বিপজ্জনক ভাবে বিল পার করতে হচ্ছে। অথবা অনেক ঘুর পথে আসতে হচ্ছে। তাতে আমাদের উদ্বেগ বাড়ছে।” |