নবগ্রামের পরে এ বার আহিরণ। ৪৮ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ফের বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের আহিরণ শাখায় ভল্ট ভেঙে ডাকাতির চেষ্টা করল দুষ্কৃতীরা। বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্ক লাগোয়া মাঠে এক ব্যক্তির হাত পা বেঁধে ৫ জনের সশস্ত্র দুষ্কৃতী দলটি হানা দেয় ব্যাঙ্কের এই শাখায়। কিন্তু ভল্ট ভাঙার আগেই, তা উল্টে ফেলার শব্দে এলাকার লোকজন সতর্ক হয়ে গিয়ে চেঁচামেচি শুরু করলে ডাকাত দলটি পালিয়ে যায়। ফলে ব্যাঙ্ক থেকে কোনও কিছুই নিয়ে যেতে পারেনি দুষ্কৃতীরা। তবে কিছু ফাইলপত্র নষ্ট হয়েছে।
সোমবার রাতে বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতী বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের নবগ্রাম শাখায় হানা দিয়ে ভল্ট ভেঙে প্রায় দশ লাখ টাকা নিয়ে পালায়। দুষ্কৃতীরা সিঁড়ির পাশের দরজা ভেঙে ব্যাঙ্কে ঢুকেছিল। রীতিমতো পেশাদারি ভঙ্গিতেই তারা ডাকাতি করে চম্পট দিয়েছে। সেই ঘটনায় কাউকেই গ্রেফতার করা যায়নি। তবে তার মাত্র দু’দিনের মধ্যেই আবার এই একই ব্যাঙ্কের অন্য একটি শাখায় ডাকাতির চেষ্টায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে প্রশাসন। সুতি থানার আহিরণ গ্রামে লোকালয়ের মধ্যেই এই ব্যাঙ্কের শাখাটি বছর তিনেক আগে চালু হয়। ২০০০ সালে এই ব্যাঙ্কের শাখায় একবার তালা ভেঙে চুরির চেষ্টা হলেও সে বারে কিছু নিয়ে যেতে পারেনি দুষ্কৃতীরা। |
গ্রামের একটি ভাড়া বাড়িতে দোতলায় ব্যাঙ্কটি। নীচ তলায় ভাড়া থাকেন স্থানীয় এক শিক্ষিকা পূর্ণিমা দাস। দুষ্কৃতীরা বাড়ি লাগোয়া একটি দেওয়াল বেয়ে দোতলায় ওঠে। ব্যাঙ্কের প্রধান ফটকে কোলাপসিবল গেটের তালা ভাঙে। তারপরে কাঠের দরজা লাগানো লোহার কড়া সহ তালা উপড়ে ফেলে ব্যাঙ্কে ঢোকে। সেখানে পাশেই একটি ছোট ঘরে ভল্টটি রাখা ছিল। ভারি ভল্টটিকে তারা মেঝের উপরে উল্টে ফেলে। সেই বিকট শব্দই শুনতে পান নীচতলার বাসিন্দা শিক্ষিকা পূর্ণিমাদেবী। এরপর তাঁরই চিৎকারে গ্রামবাসীদের ঘুম ভেঙে হৈচৈ শুরু হলে ডাকাত দলটি পালিয়ে যায়।
পূর্ণিমাদেবী বলেন, “মাঝরাতে হঠাৎ ধুপধাপ শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। জানলা দিয়ে উঁকি দিয়ে প্রথমে কিছু বুঝতে পারিনি। তারপরে কয়েকজন লোকের চলাফেরা দেখে জিজ্ঞাসা করতে উত্তর আসে ‘আমরা পুলিশের লোক।’ আর কিছু না ভেবে আমি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ছাদের উপরে ফের পায়ের শব্দ শুনতে পাই। সেই সঙ্গে বিকট একটা শব্দ। তখনই বুঝতে পারি, ব্যাঙ্কে চোর ঢুকেছে। আশপাশের প্রতিবেশীদের হৈ চৈ শুরু হতেই দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়।” পুলিশ জানতে পেরেছে, এই দিন দুষ্কৃতীরা আহিরণে ঢুকেছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে মাঠের মধ্যে দিয়ে। ওই মাঠে তখন পাহারায় ছিলেন আগলদার রঘুনাথ দাস। রঘুনাথবাবুর দুষ্কৃতীদের দেখতে পেয়েছিলেন। রঘুনাথবাবুর বর্ণনা মতো দুষ্কৃতীদের বয়স বছর তিরিশের কাছাকাছি। সকলেরই পরনে ছিল বারমুডা প্যান্ট ও জামা। হিন্দি বাংলা মিশিয়ে কথায় ছিল আদিবাসী টান। তবে অন্ধকারে চশমা না থাকায় তাদের চেহারা ঠিক মতো দেখতে পাইনি।”
আহিরণের ওই ব্যাঙ্ক শাখার ম্যানেজার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দুষ্কৃতীরা ভল্ট ভাঙার সুযোগ পায়নি। কিন্তু কিছু ফাইল পত্র থেকে কাগজ বার করে নষ্ট করেছে।” জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মৃণাল মজুমদার বলেন, “নবগ্রামেরর ডাকাত দলটির কাজকর্মের সঙ্গে যথেষ্ট মিল রয়েছে আহিরণের ঘটনার দুষ্কৃতীদের। পর পর যে ভাবে ঘটনা ঘটে চলেছে তাতে একই দলের কাণ্ড বলে পুলিশের সন্দেহ। নবগ্রামের নৈশ প্রহরী ও আহিরণের আগলদার সহ যাঁরা দুষ্কৃতীদের দেখেছেন, তাঁদের সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে একটা ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। দু’তিন দিনের মধ্যেই এমন কোনও ক্লু নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে, যাতে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা যাবে।” |