সেই রাতে এক মহিলা এসেছিলেন, জানালেন পিন্টুর মা
বুড়িশোলের জঙ্গলে কিষেণজি মারা যাওয়ার রাতেই ‘অসুস্থ’ এক মহিলা তাঁদের বাড়ি এসেছিলেন এবং ছোট ছেলেকে ডেকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে বলেছিলেন। ‘আহত’ মাওবাদী নেত্রী সুচিত্রা মাহাতোকে পালাতে ‘সাহায্যকারী’ সন্দেহে ধৃত জামবনির সরাকাটা গ্রামের পিন্টু টুডুর মা নিজেই জানালেন এই তথ্য। সুচিত্রাকে নিয়ে পুলিশ-সিআইডি’র বক্তব্যও এর ফলে দৃঢ় ভিত্তি পেল। পিন্টু যে সে রাতে ওই ‘মহিলা’কে সাইকেলে বসিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তা-ও জানিয়েছেন তাঁর মা ললিতা টুডু। পিন্টু ফিরেছিলেন পর দিন সকালে। পুলিশের ‘জেরা’য় নয়, এ সবই ললিতাদেবী জানিয়েছেন কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিদের কাছে।
কিষেণজির মৃত্যু সংঘর্ষ না ‘ভুয়ো সংঘর্ষে’তা খতিয়ে দেখতেই দিল্লি, অন্ধ্রপ্রদেশের কয়েক জন মানবাধিকার কর্মীকে নিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি (এপিডিআর)-এর এক প্রতিনিধিদল বৃহস্পতিবার জামবনির বুড়িশোল জঙ্গল এবং লাগোয়া একাধিক গ্রামে ঘোরে। ঠিক আগের বৃহস্পতিবারই নিহত হয়েছিলেন কিষেণজি। সুচিত্রাকে নিয়ে ধন্দ কাটাতেই প্রতিনিধিরা যান সরাকাটায়। ললিতাদেবী ছাড়াও তাঁরা কথা বলেন পিন্টুর কাকিমা সরস্বতী টুডু এবং দাদা চামটু’র সঙ্গে। চামটু জানান, গত রবিবার সকালে ঘুম থেকে তুলে তাঁকে ও পিন্টুকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। মঙ্গলবার চামটুকে ছেড়ে দেওয়া হলেও গ্রেফতার করা হয় পিন্টুকে। সে রাতে আসা ‘অসুস্থ মহিলা’ ঠিক কে এবং পিন্টুর সঙ্গে তাঁর পূর্ব-পরিচয় ছিল কি না, তা অবশ্য বলতে পারেননি ললিতাদেবী-চামটুরা। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, কালু তাঁকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে বলে ওই মহিলা বারেবারেই বলছিলেন। ‘কালু’ কে, সেটাও তাঁদের অজানা বলেই দাবি পিন্টুর পরিজনেদের।
জামবনির সরাকাটা গ্রামে পিন্টু টুডুর দাদা চামটু (বাঁ দিকে), পিন্টুর কাকিমা সরস্বতী টুডু
(মাঝখানে) ও পিন্টুর মা ললিতা টুডু (ডান দিকে)। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
মানবাধিকার সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা অবশ্য পিন্টুর বাড়ির লোকের বক্তব্য সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁরা এ দিন প্রথমে বুড়িশোলের জঙ্গলে পৌঁছন। ওই সময়েই ইন্সপেক্টর মানিকলাল কার্ফার নেতৃত্বে সিআইডির তদন্তকারীরাও ছিলেন সেখানে। তাঁরা জঙ্গলে শালগাছে লাগা ‘গুলির দাগ’ চিহ্নিত করছিলেন। কিষেণজির দেহ যেখানে পড়েছিল, হলুদ ফিতে দিয়ে ঘেরা সেই জায়গাটি পর্যবেক্ষণ করেন মানবাধিকার কর্মীরা। শাল গাছে গুলির দাগও দেখেন। কথা বলেন সে দিন ঘটনাস্থলে আসা কয়েক জন সাংবাদিক এবং জঙ্গলে উপস্থিত জামবনি থানার দুই পুলিশ কর্মীর সঙ্গেও।
এর পর পাঁচশো মিটার দূরে কপাটকাটা ও সরাকাটা গ্রামে যান তাঁরা। গ্রামবাসীরা জানান, ঘটনার দিন সকাল ১১টা থেকেই গোটা এলাকায় মোটরবাইকে চেপে ঘুরছিলেন যৌথ বাহিনীর জওয়ানেরা। গ্রামবাসীদের বাইরে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছিল। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ গুলির শব্দ শোনেন তাঁরা। কখনও নাগাড়ে, কখনও থেমে থেমে। তবে মাইকে কোনও ঘোষণা শোনা যায়নি। রাত দশটা নাগাদ শেষ বারের মতো কয়েক বার গুলির আওয়াজ পান গ্রামবাসীরা।
পিন্টু টুডু
বিনপুরের বাঘাশোল গ্রামে ধর্মেন্দ্র মাহাতোর বাড়িতেও যান মানবাধিকার কর্মীরা। জামবনির কাপগাড়ি কলেজের ভূগোল অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ধর্মেন্দ্র গত বৃহস্পতিবার থেকেই ‘নিখোঁজ’। ধর্মেন্দ্রর মা ছবি মাহাতো, বোন রিঙ্কু মাহাতোর সঙ্গে কথা বলেন দিল্লি পিইউ ডিআর-এর গৌতম নভালখা, অন্ধ্রপ্রদেশ সিভিল লিবার্টিজ কমিটির চন্দ্রশেখর রাও, এপিডিআর-এর দেবপ্রসাদ রায়চৌধুরীরা। রিঙ্কু জানান, ছোট দুই ভাইয়ের বইপত্র রাখার জন্য দু’টি ব্যাগ কিনেছিলেন ধর্মেন্দ্র। সেই ব্যাগ দু’টি, ধান বিক্রি বাবদ পাওয়া কুড়ি হাজার টাকা, ওবিসি সার্টিফিকেট, শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট, আলুর বন্ড, ধর্মেন্দ্রর পড়াশোনার জন্য কেনা মানচিত্র নিয়ে যায় যৌথ বাহিনী। বারবার বিনপুর থানায় গেলেও তা ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। তাঁদের বাড়িতে কোনও ল্যাপটপ নেই বলেও জানান রিঙ্কু। যদিও পুলিশ দাবি করেছিলেন, ধর্মেন্দ্রর বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়েছে কিষেণজির ল্যাপটপ ও মাওবাদী নেতার কিছু চিঠি।
এ দিনের প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর মানাবিধকার কর্মী চন্দ্রশেখর দাবি করেন, “কিষেণজির মৃত্যু হয়েছে ভুয়ো সংঘর্ষেই। বুড়িশোলের জঙ্গল মোটেই গভীর নয়। সরু শালগাছের কাণ্ডে গুলি লাগলে অন্তত পক্ষে একটা গাছও ভেঙে পড়ত। তা হয়নি। সব গুলির দাগই একমুখী। এ ছাড়া গুলির দাগের পোড়া-চিহ্নও নেই।” গৌতম নভলখাও বলেন, “প্রাথমিক ভাবে বেশ কিছু অসঙ্গতি আমাদের নজরে এসেছে। আরও বিস্তারিত অনুসন্ধান করা হবে।”
কিষেণজির মৃত্যুর পর জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে এবং আগামী দিনে যৌথ অভিযানের রণকৌশল নিয়ে এ দিনই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয় মেদিনীপুরে। পুলিশ লাইনের সেফ-হাউসের ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিআরপিএফের এডিজি পি এম নায়ার, আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহ, ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) বিনীত গোয়েল, সিআইএফের পুলিশ সুপার মনোজ বর্মা, জেলা পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি-সহ কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশের পদস্থ কর্তারা। ৩ ঘণ্টা ধরে বৈঠক চলে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.