|
|
|
|
জেলায় জখম ১৫ |
জমি আর ক্ষমতা দখলে গোষ্ঠী-সংঘর্ষ তৃণমূলের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
কোথাও বর্গাদার উচ্ছেদ করে জমি দখল। কোথাও আবার এলাকার ‘নিয়ন্ত্রণ’ হাতে রাখার চেষ্টা। এই দুইয়ের জেরে বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর সদর ব্লকের তেতুঁলতলা ও গড়বেতার আউসাবাঁধি ও একাড়ায় সংঘর্ষ বাধল। আর ‘পরিবর্তিত’ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সংঘর্ষে জড়াল শাসকদল তৃণমূলেরই দু’টি গোষ্ঠী! বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর থেকেই জেলায় ‘কোণঠাসা’ অবস্থা সিপিএমের। তাদের অনেক নেতা-কর্মীই এলাকা ছাড়া। এই অবস্থায় জেলায় ইদানীং সংঘর্ষ বাধছে তৃণমূলেরই বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে। সাধারণ মানুষের বিরক্তি বাড়ছে। বিড়ম্বনা বাড়ছে দলীয় নেতৃত্বের। বৃহস্পতিবারের ঘটনায় সব মিলিয়ে জখম হয়েছেন ১৫ জন। গড়বেতায় পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতারও করেছে। দিশেহারা তৃণমূল জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের বক্তব্য, “কী কারণে সংঘর্ষ, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দলের কেউ অন্যায় করলে তা মেনে নেওয়া হবে না।”
বর্গাদার উচ্ছেদ করে জমি দখলের ঘটনা ঘটেছে কেশপুর লাগোয়া মেদিনীপুর সদর ব্লকের তেতুঁলতলায়। স্থানীয় বাসিন্দা শেখ মুরসেদ আলি, হুরমুজ আলিরা দীর্ঘ দিন ধরেই একটি জমি চাষ করছিলেন। তা নিয়ে জমির মালিকের সঙ্গে আগে তাঁদের কোনও বিবাদ হয়নি। ইদানীং স্থানীয় কয়েক জন তৃণমূল নেতা ওই বর্গাদারদের উচ্ছেদ করে জমি দখলের চেষ্টা শুরু করেন বলে অভিযোগ। বর্গাদারদের চাষ করা ধান কেটে নেওয়ার চেষ্টা হয় বৃহস্পতিবার সকালে। বর্গাদাররা বাধা দিতে গেলে তাঁদের মারধর করা হয়। বর্গাদারদের পক্ষ নিয়ে তৃণমূলেরই এক পঞ্চায়েত সদস্য আনোয়ার মল্লিক ঘটনাস্থলে আসেন। ধান কাটার প্রতিবাদ করেন তিনিও। দলেরই বিক্ষুব্ধদের হাতে মার খান তিনিও। |
|
আহত আনোয়ার মল্লিক। নিজস্ব চিত্র। |
হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে আনোয়ার বলেন, “ওই এলাকায় অনেক গরিব বর্গাদার রয়েছেন। যাঁরা ২৫-৩০ বছর ধরে চাষ করে আসছেন। এখন কয়েক জন সেই জমির ধান কেটে নিয়ে জমির দখল নিতে চাইছেন। তার প্রতিবাদ করাতেই আমাদের মারধর করা হয়।” বর্গাদার মুরসেদ, হুরমুজদের কথায়, “দু’চারজন স্থানীয় তৃণমূল নেতার মদতেই জমি দখলের চেষ্টা হচ্ছে। তারাই আমাদের মারধর করেছে। তবে তৃণমূলেরই অন্য কয়েক জন নেতা আমাদের পক্ষে রয়েছেন।” এই জমি-বিবাদে ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব কয়েক দিন আগে বৈঠক করে ‘বর্গাদার উচ্ছেদ করা যাবে না’ বলে জানিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও কেন দলের কয়েক জন সেই সিদ্ধান্ত মানছেন না? দীনেনবাবুর জবাব, “এমনটা কাম্য নয়। গরিব মানুষকে তাঁদের প্রাপ্য থেকে কেউ বঞ্চিত করতে চাইলে দল মেনে নেবে না।” অন্য দিকে, গড়বেতার আউসাবাঁধি ও একাড়া এলাকায় নিজের কর্তৃত্ব স্থাপন করতে কুরান ঠাকুর নামে এক তৃণমূল কর্মী এলাকায় তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ। শাসকদল সূত্রেই খবর, কুরান ঠাকুর এক সময়ে সিপিএম করতেন। পরে কংগ্রেস, বিজেপিতেও যোগ দেন। ইদানীং তৃণমূলে যোগ দিয়ে এলাকায় ‘প্রভাবশালী নেতা’ হতে চাইছেন। বৃহস্পতিবার সকালে কুরান ও তাঁর অনুগামীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে একের পর এক গ্রামে তাণ্ডব চালান বলে অভিযোগ। ভাঙচুর করা হয় বেশ কয়েকটি বাড়ি। কয়েক জন আহতও হন। স্থানীয় মানুষই শেষে রুখে দাঁড়ান। তখন দলবল নিয়ে পালায় কুরান। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশি টহল চলছে। তাণ্ডব চালানোর দায়ে ধরা হয়েছে দু’জনকে। |
|
|
|
|
|