অর্থাভাবে ধান কেনার গতি শ্লথ, বাজারেও দাম সামান্য
শ্চিম মেদিনীপুর জেলায় সহায়ক-মূল্যে ধান কেনার সরকারি লক্ষ্যমাত্রা ১৮৫ হাজার মেট্রিক টন। তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত ধান কেনা হয়েছে মাত্রই ৭ হাজার ৭৮৫ মেট্রিক টন!
ধান কেনার এই শ্লথ-গতির ফলে খোলাবাজারেও ধানের দাম বাড়েনি। চাষিরা দাম পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে কম দামেই ধান বিক্রি করতে হচ্ছে চাষিদের। কেন ধান কেনায় গতি আসেনি? প্রশাসনের ব্যাখ্যা, ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির হলেও টাকা পাঠায়নি সরকার। আগে এ রকম পরিস্থিতিতে চালকলের মালিকদের অনুরোধ করে তাঁদের টাকাতেই ধান কিনত প্রশাসন। পরে চালকল মালিকদের টাকা মিটিয়ে দেওয়া হত।
কিন্তু এ বার চাষিদের সরাসরি চেকে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাঝখানে ‘ফোড়ে’রা যাতে চাষির প্রাপ্য আত্মসাৎ করতে না পারে, সে জন্যই এই ব্যবস্থা। কিন্তু তার ফলে ধান কেনায় আর গতি আসছে না। চরম সঙ্কটে পড়ছেন চাষিরা। জেলা খাদ্য ও সরবরাহ নিয়ামক প্রদীপ ঘোষ বলেন, “ধান কেনার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। কিন্তু টাকা না থাকায় দ্রুত গতিতে ধান বা চাল কেনা যাচ্ছে না।”
এ বার রাজ্য সরকার জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের মাধ্যমে ৫০ হাজার মেট্রিক টন, ইসিএসসি-র মাধ্যমে ৯৫ মেট্রিক টন, কনফেডের মাধ্যমে ১৬ হাজার মেট্রিক টন, বেনফেডের মাধ্যমে ২০ হাজার মেট্রিক টন ও এনসিসিএফের মাধ্যমে ৪ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। চালকল ও সমবায়ের মাধ্যমে এই ধান কেনার কথা। কোন চালকল কত পরিমাণ ধান কিনবে, কোন সমবায়কে দিয়ে কত পরিমাণ ধান কেনা হবে তাও নির্দিষ্ট করে প্রশাসন। কিন্তু ধান কিনবে কী ভাবে? চালকলগুলি ধান কিনলে সেই চাল পরে কিনে নেবে খাদ্য দফতর। কিন্তু চাল কিনলে টাকা দিতে হবে। সেই টাকা নিয়ে ফের চালকলগুলি ধান কিনবে। এখনও পর্যন্ত চালকলগুলির কাছ থেকে মাত্র ৩ হাজার ৭০৩ কুইন্টাল চাল কিনতে পেরেছে খাদ্য দফতর। এর ফলে ধান কেনাও আটকে গিয়েছে।
শীত পড়ে গিয়েছে। এই সময় জোর কদমে চাষিদের আলু ও সব্জি চাষে নেমে পড়োর কথা। কিন্তু ধানের দাম কম থাকায় সেই চাষও ধাক্কা খাচ্ছে। কারণ, ধান বিক্রি করেই চাষিদের আলু বীজ, সার কিনতে হয়। এ বার সেই ধানেরই দাম নেই। খোলাবাজারে কুইন্টাল প্রতি ধানের দাম ৮০০, সাড়ে ৮০০ টাকা। চাষিদের কথায়, ন্যূনতম হাজার টাকা না পেলে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। সরকার অবশ্য কুইন্টাল প্রতি ধানের সহায়ক-মূল্য ঠিক করেছে ১ হাজার ৮০ টাকা। কিন্তু দাম নির্ধারণ এক কথা আর প্রকৃত কেনা অন্য কথা। এ দিকে, সহায়ক-মূল্যে ধান কেনার দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন আন্দোলন শুরু করেছে। চাষিরাও ক্ষোভে ফুঁসছেন। প্রশাসন অবশ্য টাকা নেই বলেই দায় সারছে। ডিসেম্বর মাসেও ধান কেনায় গতি না এলে খোলাবাজারে ধানের দাম আরও কমার আশঙ্কা। অন্য দিকে, পৌষ-সংক্রান্তিতে গ্রাম বাংলায় বড় উৎসব। উৎসব পালনের জন্যও অর্থ প্রয়োজন। ধান বিক্রি করেই চাষির ঘরে সেই টাকা আসে। তাই এখনই ধান কেনায় গতি না এলে চাষিরা বাধ্য হয়েই ফোড়েদের কাছে আরও কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হবেন। প্রশাসনিক সূত্রেও জানা গিয়েছে, সরকারের আর্থিক সঙ্কটকে কাজে লাগাতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে সচেষ্ট হয়েছে। তারাও পৌষ সংক্রান্তির অপেক্ষাতেই আছে। যখন জলের দরে ধান কিনে নিতে পারবে তারা। চাষির আকাশে তাই সিঁদুরে মেঘ। এখনই অর্থের ব্যবস্থা করে ধান কেনায় গতি না আনলে সঙ্কট তীব্র হওয়ারই আশঙ্কা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.