|
|
|
|
ভসরাঘাট |
সেতু তৈরি ও টোল আদায়ে বেসরকারি সংস্থাকেই দায়িত্ব |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
কেশিয়াড়ি-নয়াগ্রামের মধ্যে সুবর্ণরেখা নদীর উপর অস্থায়ী ‘ফেয়ার ওয়েদার সেতু’ তৈরি করবে বেসরকারি সংস্থাই। ‘টোল’ও আদায় করবে তারাই। অবশেষে এই সিদ্ধান্তই নিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ।
এত দিন জেলা পরিষদই ভরসাঘাটের ‘ফেয়ার ওয়েদার’ সেতু বানানোর কাজ করত। যার জন্য বছরে গড়ে ৩৫-৪০ লক্ষ টাকা খরচ হত। অস্থায়ী কাজে এত টাকা খরচের যৌক্তিকতা নিয়ে অডিট-বিভাগ প্রশ্ন তোলায় এ বারই প্রথম সেতু তৈরি করা থেকে পিছিয়ে যায় জেলা পরিষদ। পরিবর্তে বেসরকারি সংস্থাকেই ওই সেতু নির্মাণ ও টোল আদায়ের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যে সংস্থা বরাত পাবে তাদেরই সেতু তৈরির সব খরচ বহন করতে হবে। অবশ্য জেলা পরিষদের নির্দিষ্ট করে দেওয়া হারে ‘টোল’ আদায় করতে পারবে তারা। অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) সাগর সিংহ বলেন, “খরচ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় জেলা পরিষদ ওই সেতু তৈরি করতে পারেনি। সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা ভেবে বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। জেলা পরিষদের শর্ত মেনে যারা সেতু বানিয়ে টোল নেবে, তাদেরই বরাত দেওয়া হবে।” |
|
নিজস্ব চিত্র। |
কেশিয়াড়ি ও নয়াগ্রামের মাঝে সুবর্ণরেখার উপর আজও স্থায়ী সেতু নেই। যদিও গত ১৫ অক্টোবরই জঙ্গলমহল সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী স্থায়ী সেতু তৈরির ঘোষণা করে যান। শিলান্যাসও হয়ে যায় সে দিনই। ১৭০ কোটি টাকা খরচ করে পূর্ত দফতর নাকি সেই সেতু তৈরি করবে। তবে এই ঘোষণা-শিলান্যাসের ঘনঘটায় ঢাকা পড়ে গিয়েছে সুবর্ণরেখা বাঁধ প্রকল্পের বিষয়টি। কেন্দ্রীয় সাহায্যে সেচ দফতরের উদ্যোগে ওই প্রকল্পে বাঁধ-সেতু ও দুই মেদিনীপুরে ২০০ কিলোমিটার সেচ খাল তৈরি হওয়ার কথা। মুখ্যমন্ত্রীর শুধু সেতুর ঘোষণায় বাঁধ-সেচখালের বিষয়টি খানিক ধামাচাপা পড়েছে। রাজ্যের সাম্প্রতিক অর্থ-সঙ্কটের প্রেক্ষিতে ১৫ অক্টোবর শিলান্যাস হওয়া সেতুটিরও যে কবে কাজ শুরু হবেসে নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
কিন্তু বর্ষার সময় বাদে বছরের অন্য সময়ে কেশিয়াড়ি থেকে নয়াগ্রামের মধ্যে পারাপার চলবে কী করেসেটাই আশু জরুরি প্রশ্ন। অস্থায়ী ‘ফেয়ার ওয়েদার’ সেতুই এত কাল ছিল দুই ব্লকের মানুষের ভরসা। কিছুটা রাস্তা ও আর কিছুটা কাঠের সেতু--এভাবেই সেতু বানিয়ে পারাপার চলত। কিন্তু এ বার অডিট-বিভাগের আপত্তিতে জেলা পরিষদ সেই অস্থায়ী কাজে হাত না দেওয়ায় সমস্যা বাড়ছিল। অডিটের প্রশ্ন ছিল, যে সেতু প্রতি বর্ষাতেই নষ্ট হয়ে যায়সে রকম কিছু তৈরি করতে বছরে ৩৫ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা খরচই বা করবে কেন জেলা পরিষদ। বেসরকারি হাতে টোল আদায়ের দায়িত্ব দিয়েও জেলা পরিষদ বড়জোর এক-তৃতীয়াংশ খরচ ওঠাতে পারত। বছর-বছর এই লোকসান চলতে পারে না বলে মত দেয় অডিট-বিভাগ। ফলে জেলা পরিষদ আর এ বছর সেতু তৈরিতে উদ্যোগী হয়নি।
কেশিয়াড়ি, দাঁতন, নয়াগ্রাম, বেলদার মানুষের সমস্যা তাতে বাড়ছিল। প্রশাসনের কর্তাদেরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল। ৮০ কিলোমিটার ঘুরে গোপীবল্লভপুর হয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছিল। এই অবস্থায় বেসরকারি সংস্থার হাতেই অস্থায়ী সেতুর নির্মাণ এবং ‘টোল’ আদায়ের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য। ডিসেম্বর মাসের ৮ তারিখের মধ্যেই দরপত্রে অংশ নেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। জানুয়ারি মাস নাগাদ অস্থায়ী সেতু চালু হয়ে যাবে বলে আশা করছে জেলা পরিষদ। বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য বেশ কয়েকটি শর্ত আরোপ করতেও চলেছে জেলা পরিষদ। সেতু রক্ষণাবেক্ষণেরও দায়িত্ব নিতে হবে বেসরকারি সংস্থাকেই। বেশি লাভের আশায় নিম্নমানের সেতু তৈরি করলে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থাকে। তাই, সেতু মজবুত করারও শর্ত থাকবে। অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, “এই সব শর্ত মানলে তবেই দায়িত্ব দেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|