খড়ের বোঝা মাথায় বাড়িতে ফেরার সময়ে এক ব্যক্তিকে নাগালে পেয়ে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছড়ে মারল দলছুট বুনো হাতি। বুধবার ঘটনাটি ঘটে ডুয়ার্সের লাটাগুড়ির প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র লাগোয়া ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে। ওই দিন সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটলেও বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি জানাজানি হয়। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম কালে ছেত্রী। পেশায় রাখাল ওই ব্যক্তির বাড়ি গরুমারা জঙ্গল লাগোয়া ডাঙাপাড়ায়। বুনো হাতিটি ওই ব্যক্তিকে আছড়ে মারার পরে পাকা সড়কের পাশে জঙ্গলের কাঁচা রাস্তায় দেহটি ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এদিন ঘটনাটি জানাজানির পরে উত্তেজিত বাসিন্দারা ক্ষতিপূরণের দাবিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান ও বন কর্তাদের হস্তক্ষেপে অবরোধ প্রত্যাহার হয়। জলপাইগুড়ির ডিএফও কল্যাণ দাস বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়া মাত্র ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ডাঙাপাড়ার বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবারও গরুমারা জঙ্গলের পাশে গরু চরাতে গিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। ওই দিন বাড়ি ফেরার পথ ধরতে সন্ধ্যে নেমে যায়। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ মাথায় খড়ের বোঝা চাপিয়ে তিনি রওনা হয়েছিলেন। জাতীয় সড়কের পাশের জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা বুনো হাতিটিকে তিনি লক্ষ্যই করতে পারেননি। হাতিটি মাথা থেকে খড়ের বোঝা টেনে ধরলে বিপদ বুঝে ওই ব্যক্তি পালানোর চেষ্টা করেন। তার আগেই নাগালে পেয়ে হাতিটি ওই ব্যক্তিকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছাড় মারে। গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান গোবিন্দ দাস বলেন, “ওই সময়ে রাস্তা ফাঁকা থাকায় ঘটনাটি কেউই টের পাননি। মঙ্গলবার সকালে কয়েকজন লোক দেহটি পড়ে থাকতে দেখে হইচই শুরু করেন। মৃতদেহও শনাক্ত হয়।”
শাল জঙ্গলে ঘেরা ডাঙাপাড়ায় কাঠের একটি ভাঙাচোরা বাড়িতে থাকতেন ওই ব্যক্তি। তাঁর স্ত্রী মায়া দেবী এলাকার একটি রিসর্টে রান্নার কাজ করেন। রাতে সেখানেই থাকেন তিনি। তাঁর একমাত্র মেয়ে জ্যোতি দেবী থাকেন নাগরাকাটায় শ্বশুরবাড়িতে। ফলে রাতে ওই ব্যক্তি বাড়িতে না-ফিরলেও কেউই খোঁজ নেননি। এলাকার লোকজন মায়া দেবীকে স্বামীর মৃত্যুর খবর পৌঁছে দেন। মায়া দেবী বলেন, “দিনের বেলা কাজের ফাঁকে বাড়িতে যেতাম। কাজের চাপ থাকায় রাতে বাড়িতে যেতে পারিনি। সকালে যাব ভেবেছিলাম। তার আগেই শুনলাম, সব শেষ।” মৃতের মেয়ে জ্যোতি দেবী বলেন, “বাবা ২০ বছর ধরে গরু চরাচ্ছেন। কয়েকবার বুনো হাতির সামনেও পড়েছেন। কখনও এমন হয়নি।” এলাকার বাসিন্দারা জানান, কালে ছেত্রী যেখানে মারা গিয়েছেন সেখানে এর আগেও গত দু’বছরে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই এলাকার আশপাশে বেশ কয়েকটি রিসর্ট ছড়িয়ে রয়েছে। রয়েছে প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। রতন ছেত্রী, দিলবাহাদুর ছেত্রীর মতো যুবকেরা জানান, ধান পাকার মরসুমে প্রতিদিন বুনো হাতির পাল আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফসল নষ্ট করলেও মানুষের উপরে হামলার ঘটনা তেমন ঘটে না। কিন্তু দলছুটের সামনে পড়ে গিয়ে জীবিত ফিরতে পারেননি ওই ব্যক্তি। লাটাগুড়ি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক কল্যাণ সিংহ বলেন, “কালে ছেত্রী যে এলাকায় মারা গিয়েছেন সেটি বুনো হাতির করিডর। সেখানে হাতি না-থাকাটাই অস্বাভাবিক। কালে নিজেও সেটা জানতেন। তার পরেও অন্ধকারে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করায় প্রাণ গেল।” |