বিষিয়ে যাওয়া করলা নদীর জল পরিষ্কার করতে বৃহস্পতিবার সেনা বাহিনীর সাহায্য চাইল উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। বৃহস্পতিবার মন্ত্রী গৌতম দেব জলপাইগুড়িতে গিয়ে করলায় বিষক্রিয়ায় মাছের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বৈঠক করেন। তার পরেই গৌতমবাবুর নির্দেশে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “অনেক জায়গায় স্রোত হারিয়ে ফেলা করলার বিষাক্ত জল ছেঁচে ফেলতে হবে। তিস্তা থেকে জল টেনে করলায় প্রবাহিত করতে হবে। সে জন্য উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প দরকার। যা সেনাবাহিনীর কাছে রয়েছে। সে জন্য সেনাবাহিনীর সাহায্য জরুরি।” প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীর কাছে চিঠি পাঠিয়ে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, আজ, শুক্রবার থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে দমকলকেই সেই কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। এদিকে করলা নদীতে মাছের মড়ক অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবারও নদীতে একটি ২২ কেজি ওজনের মৃত বোয়াল ভেসে ওঠে। পরীক্ষার জন্য মাছটিকে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে দেওয়া হয়েছে। হাঁস, মাছরাঙা-সহ বেশ কিছু মাছখেকো মৃত পাখিকেও এদিন করলা নদীর পাশে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। বৃহস্পতিবারেই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কলকাতার পরীক্ষাগারে করলার জলের নমুনা পরীক্ষা করে কীটনাশকের কারণেই নদীর জলে বিষক্রিয়া হয়েছে বলে রিপোর্ট মিলেছে। নদীর জলকে বিষ মুক্ত করতে তিস্তা থেকে জল তুলে তা করলায় ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। বৈঠকেই স্থির হয় তিস্তা থেকে পাম্পের সাহায্যে জল তুলে এনে করলা নদীতে ফেলা হবে, এর ফলে করলার জলে মিশে যাওয়া বিষের প্রভাব কেটে যাবে। |
উচ্চ শক্তির পাম্প ব্যবহার করে সেনাকে সেই কাজ করার আর্জি জানিয়েছে রাজ্য। এদিন করলা নদীর পরিস্থিতি নিয়ে দুপুর থেকে জেলা শাসক, পুলিশ সুপার, পুরসভার চেয়ারম্যান, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান-সহ জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে সার্কিট হাউসে বৈঠক করেন গৌতমবাবু। বৈঠকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রধান সুবীর সরকার, জলপাইগুড়ি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ জ্যোর্তিময় ঝম্পটি-সহ বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীই টেলিফোন করে গত সোমবার করলার ঘটনা আমাকে জানিয়েছিলেন। সুতরাং রাজ্য সরকার করলা নিয়ে কতটা ভাবছে সেটা এর থেকে বোঝা যায়। করলা নদীতে বিষক্রিয়ার ঘটনাকেও আমরা বিপর্যয় হিসেবেই দেখছি।” করলা নদীতে কীটনাশক মিশে যাওয়াতেই যে মাছের মড়ক শুরু হয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণও পর্ষদ এদিন জানিয়ে দিয়েছে। পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্ত বলেন, “নদীর জল পরীক্ষা করে কীটনাশক পাওয়া গিয়েছে। আজই কলকাতায় ফিরে যাচ্ছি। সেখানে গিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট দেখে কী কাটনাশক রয়েছে তা জানাব।” পর্ষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রও এদিন জলপাইগুড়িতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, “নদীটি ঘুরে দেখেছি। খুবই ক্ষতি হয়ে গেল। বিস্তারিত রিপোর্ট দেখে তবে আরও সিদ্ধান্তের কথা জানাব।” বৃহস্পতিবারের বৈঠকে মজে যাওয়া করলা নদীর নিচে গজিয়ে ওঠা ঝোপজঙ্গল কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ত্রাণ হিসেবে মৎস্যজীবীদের খাদ্যশস্য সরবারহ করা হবে। করলা নদীর নাব্যতা বাড়াতে পুরসভার প্রস্তাব মতো মোহনার দিকে করলা নদীকে তিন কিলোমিটার কেটে নিয়ে গিয়ে খড়খড়িয়া নামে একটি নদীর সঙ্গে যুক্ত করা হবে। পুর চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “এই কাজে যত টাকা লাগবে তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। এতদিন করলা নদী নিয়ে অনেক পরিকল্পনা করেও কিছুই কাজ এগোয়নি। এবার মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগী হওয়ায় ফের আশার সঞ্চার হয়েছে।” |