চিকিৎসক নেই। ফলে তিন বছর ধরে বন্ধ পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন-১ ব্লকের পশু চিকিৎসাকেন্দ্রটি। এ দিকে, ব্লক ছাড়াও আশপাশের বেশ কিছু এলাকার লোকজন পশুর চিকিৎসার জন্য আঁইকোলা পঞ্চায়েতের ষড়রং গ্রামের ওই চিকিৎসাকেন্দ্রের উপরেই নির্ভরশীল। চিকিৎসাকেন্দ্রটি দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন লোকজন।
এলাকার মানুষের দাবি, প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন ও বিকাশ দফতরে বার বার চিকিৎসাকেন্দ্রটি খোলার আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক বীরেন্দ্রনাথ বেরা বলেন, “চিকিৎসকের অভাবে চিকিৎসাকেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে। চিকিৎসক চেয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে বহু বার আবেদন জানানো হয়েছে। সাড়া মেলেনি। এলাকায় এর গুরুত্ব বুঝে অন্য একটি পশু চিকিৎসাকেন্দ্রও তৈরি হচ্ছিল। অর্থা ভাবে তা মাঝপথে আটকে আছে।”
পঞ্চায়েত ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সংখ্যালঘু ও তফসিলি জাতি-উপজাতি অধ্যুষিত ওই পঞ্চায়েত এলাকার অধিকাংশ মানুষ পশুপালন করে স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এই লক্ষ্যে এলাকায় তৈরি হয়েছিল বেশ কয়েকটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী। ২০০০ সালে এলাকায় পশুপালনের হার বেড়ে যাওয়ায় পশু চিকিৎসাকেন্দ্র খোলার আবেদন জানানো হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে গ্রামবাসীরাই এলাকার একটি ক্লাবঘরে চিকিৎসাকেন্দ্র খোলার ব্যবস্থা করেন। পরে প্রশাসন নতুন চিকিৎসাকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় সেটি সুষ্ঠু ভাবেই চলছিল। কিন্তু ২০০৮-এর নভেম্বরে চিকিৎসক বদলি হয়ে যান। তার পরিবর্তে পাঠানো হয়নি অন্য কোনও চিকিৎসককে। ফলে সঙ্কট দেখা দেয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী সিরাজ মহম্মদ, শেখ আনিসউদ্দিন, খাদেজা বিবির অভিযোগ, “এলাকায় চিকিৎসাকেন্দ্র থাকায় এই ব্যবসায় উদ্যোগী হয়েছিলাম। ভ্যাকসিন নেওয়া, চটজলদি চিকিৎসা পাওয়া সহজ ছিল। অনগ্রসর পরিবারগুলির পক্ষে গ্রাম থেকে গবাদি পশু নিয়ে ২০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব না।” পশুপালন সংক্রান্ত সরকারি প্রকল্পগুলোর সাহায্যও তাঁরা পাচ্ছেন না। অসুখ ছড়াচ্ছে। আর্থিক ক্ষতির জন্য ব্যবসায় উৎসাহ হারাচ্ছেন এলাকার মানুষ। এলাকায় চাহিদা দেখে ব্লক প্রশাসনের তরফে নতুন চিকিৎসাকেন্দ্র তৈরির জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। ২০০৯-এ স্থানীয় ষড়রং রেভিনিউ ইন্সপেক্টর অফিসের কাছে সেই কাজও শুরু হয়। কিন্তু টাকার অভাবে কিছু দিন পর সে কাজও বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় কংগ্রেস নেতা ফিরোজ মহম্মদ বলেন, “সরকারের উদাসীনতায় প্রকল্পগুলির সুবিধা পাচ্ছেন না মানুষ। ব্লক ও জেলা দফতরও নিষ্ক্রিয়।” |