বনাঞ্চলের আশপাশে কাঠগোলা চালানোর অনুমতি দেয় না সরকার। তা সত্ত্বেও বারাবনি ব্লকের গৌরান্ডি এলাকায় এই ব্যবসা চলার অভিযোগ উঠেছে। আরও অভিযোগ, চোরাই কাঠ কারবারিরা নির্বিবাদে জঙ্গল সাফ করে দিচ্ছে। এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এমন অভিযোগের কথা স্বীকার করেছে বন দফতর। বারাবনি ব্লকের বনাঞ্চলগুলিতে অভিযানও শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছে বন দফতর।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বারাবনি ব্লকের গৌরান্ডি এলাকাটি বনাঞ্চল হিসাবে ঘোষিত। বন দফতরের দুর্গাপুর বিভাগের বিভাগীয় বনাধিকারিক কুমার বিমল জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বন এলাকার দুই কিলোমিটার ব্যাসের মধ্যে থাকা এলাকায় কাঠগোলার ব্যবসা চালানো যায় না। কিন্তু বারাবনি ব্লকের গৌরান্ডি এলাকায় গেলেই চোখে পড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে কাঠগোলা। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্থানীয় চোরাই কাঠের কারবারিরা এই অসাধু ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। তারা রাতের অন্ধকারে এলাকার জঙ্গল কেটে সাফ করে দিচ্ছে। সরকারি উদ্যোগে একাধিক বার এলাকায় সামাজিক বনসৃজন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। চোরা কাঠ কারবারিরা এই প্রকল্পের গাছও কেটে নিচ্ছে। সাধারণত সেগুন, শিশু, জারুল, সোনাঝুরি, আকাশমনি গাছ কেটে তারা অন্যত্র পাচার করছে। এর ফলে এলাকার পরিবেশেরও ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। বারাবনিতে বেশ কিছু কোলিয়ারি রয়েছে। আশপাশে বনাঞ্চল থাকায় পরিবেশ দূষণ কিছুটা হলেও কম হচ্ছিল। কিন্তু চোরা কাঠ কারবারিদের দাপটে তা হারিয়ে যেতে বসেছে। এলাকার বিধায়ক তথা পরিবেশ বিষয়ক রাজ্য বিধানসভার স্থায়ী কমিটির সদস্য বিধান উপাধ্যায় বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই এই অসাধু ব্যবসা চলছে। আমি বন দফতরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছি।”
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে দুর্গাপুর বিভাগের বনাধিকারিক কুমার বিমল অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন। খবর পাওয়ার পরেই অভিযান শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “রবিবার আচমকা হানা দিয়ে ৬টি কাঠগোলা ‘সিল’ করেছি।” তিনি জানান, সুপ্রিম কোর্টের নিদের্শ মেনে বনাঞ্চলের দু’কিলোমিটার ব্যাসের মধ্যে থাকা এলাকায় কাঠগোলা করার অনুমতি দেয়নি বন দফতর। তা সত্ত্বেও গৌরান্ডি এলাকায় ওই গোলাগুলি চলছিল। সেগুলি বন্ধ করা হয়েছে। মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কুমার বিমল আরও জানান, এর আগে ২০০৭ সালে এক বার অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু কাঠগোলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে সেগুলি ফের শুরু করা হয়। তিনি জানিয়েছেন, অভিযুক্ত মালিকদের বিরুদ্ধে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল শ মিল এস্টাবলিসমেন্ট অ্যাক্ট ১৯৮৮’-এর ধারা অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই ধারায় কাঠগোলা মালিকদের জেল ও জরিমানা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ দিকে, এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, রবিবার অভিযান চালিয়ে বন দফতর কাঠগোলাগুলি বন্ধ করলেও গোলার মালিকেরা ফের চোরা পথে ব্যবসা শুরু করেছে। এ বিষয়ে কুমার বিমলের আশ্বাস, ফের অভিযান চালানো হবে। |