|
|
|
|
যানবাহন নিয়ন্ত্রণে বিশেষ উদ্যোগ বৈদ্যবাটি পুরসভার |
প্রকাশ পাল • শ্রীরামপুর |
হুগলিতে ট্র্যাফিক পুলিশের হাল ঢাল তলোয়ারবিহীন ‘নিধিরাম সর্দার’-এরই মতো। ফল যা হওয়ার তাই। মোড়ে মোড়ে যানজটে জেরবার শহর। নাকাল নিত্যযাত্রী। হুগলির শ্রীরামপুর মহকুমার রাস্তাঘাটেও একই ছবি ধরা পড়ে পড়ে প্রতিদিন। এর মধ্যে ব্যতিক্রম হওয়ার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে বৈদ্যবাটিতে। মূলত উৎসবের দিনগুলিতে স্বেচ্ছাসেবকদের ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে নামিয়ে সমস্যার সুরাহা অনেকটাই করে ফেলেছে বৈদ্যবাটি পুরসভা। বছরের সব দিনই এই পরিষেবা তাঁরা দিতে চান বলেও জানিয়েছেন।
কলকাতার দিক থেকে জিটি রোড দিয়ে আসার পথে নওগার মোড়ের বাঁ দিকের রাস্তা দিল্লি রোডে মিশেছে। তারপরে রয়েছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে। জাতীয় সড়কে উঠতে অসংখ্য গাড়ি নওগার মোড় ছুঁয়ে যায়। তা ছাড়া, শ্রীরামপুর থেকে চুঁচুড়া, পাণ্ডুয়া, তারকেশ্বর, চণ্ডীতলা, জাঙ্গিপাড়া-সহ বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল করে। বহু ট্রেকার চলে। সামনেই বাজার। মাঝেমধ্যেই গাড়িঘোড়া মিলে জট পাকিয়ে যায়। কিন্তু এখানেও কোনও ট্র্যাফিক পুলিশ থাকে না। শেওড়াফুলি স্টেশন-সংলগ্ন ফাঁড়ির মোড়েও এক চিত্র। বহু জায়গাতেই দোকানপাট কার্যত রাস্তায় উঠে এসেছে। ‘চুরি’ যাচ্ছে পথচারীদের হাঁটার রাস্তা। ফাঁড়ির মোড়ে জিটি রোডের ধারেই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে অটোরিকশা। বাস বা ট্রাক টার্মিনাস না থাকায় শেওড়াফুলিতে, শ্রীরামপুরের মাহেশে রাস্তার ধার জুড়ে যত্রতত্র বাস, ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে। |
|
নিজস্ব চিত্র। |
শেওড়াফুলি একটি গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন। জলপথে বহু মানুষ এই শহর দিয়ে যাতায়াত করেন। শেওড়াফুলিতে রয়েছে জেলার অন্যতম বড় সব্জি বাজার। ভোর থেকেই ব্যস্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। শ্রাবণ মাসে তারকেশ্বরে যাওয়ার পথে বৈদ্যবাটির নিমাইতীর্থ ঘাটে জল তুলতে আসেন লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী। ফলে, এই সময়ে ভিড় মাত্রাছাড়া হয়। পুরসভার ওই স্বেচ্ছাসেবীরা অবশ্য এ বার অনায়াসেই সামলে দিয়েছেন সেই ভিড়। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে পুলিশও।
পিডব্লুডি সূত্রের খবর, বৈদ্যবাটি পুর এলাকায় জিটি রোডে দিনে প্রায় পাঁচ হাজার চার চাকার গাড়ি চলে। বাস, ট্রেকার বা ট্রাকের মতো ভারি গাড়ি যাতায়াত করে অন্তত ৩০০-৪০০। ৬০০-৭০০ বাইক যাতায়াত করে। সাইকেল বা পথচলতি মানুষের সংখ্যা এর সঙ্গে যোগ করলে কী পরিস্থিতি হয়, সহজেই অনুমেয়। পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, ট্র্যাফিক পুলিশের সংখ্যা এতই অপ্রতুল যে, তা দিয়ে কোনও ভাবেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। পরিস্থিতি বুঝে অনেক জায়গায় থানা থেকেও পুলিশকর্মীদের যান নিয়ন্ত্রণে নামানো হয়। তাতেও পরিস্থিতির হেরফের হয় না।
বৈদ্যবাটি পুরসভার তরফে শহরের ৬টি জায়গায় ট্র্যাফিক সিগন্যল চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছিল রাজ্য সরকারের কাছে। সব ক’টিই অনুমোদন করেছে রাজ্য। তার মধ্যে দু’টির কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। পুরপ্রধান অজয়প্রতাপ সিংহ জানান, কাজ শেষ হলেই সিগন্যালগুলি চালানোর দায়িত্ব পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে বৈদ্যবাটি পুর এলাকার ৬০-৭০ জন পুরুষ-মহিলাকে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের কাজে লাগানো হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে অঞ্জনা ভট্টাচার্য নামে এক গৃহবধূ বলেন, “গত এক বছর ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় আমরা গাড়িঘোড়া বা মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করছি। খুব উপভোগ করছি এই কাজ। কিছু অর্থের সংস্থান হলে, প্রতিদিনই আমরা এই কাজ করতে সম্মত। এই শহরের অন্তত ২৫ জন মেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে রাজি।” নিরাপদ কর্মকার বলেন, “তেমন কিছু করি না। এই কাজে উৎসাহ পেয়েছি ভীষণ। কিছু অর্থের সংস্থান হলে, আরও ভাল হয়। প্রয়োজনে প্রতিদিন আমরা এই কাজ করব।” ইতিমধ্যেই অন্য শহরেও উৎসবের দিনে ভিড় সামলানোর অভিজ্ঞতা হয়েছে অঞ্জনা-নিরাপদদের। বৈদ্যবাটির পুরপ্রধান বলেন, “কোনও প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে এঁদের জন্য অর্থের সংস্থান করা যায় কিনা, ভাবা হচ্ছে।”
অন্য দিকে, মহকুমা শহর শ্রীরামপুরের প্রাণকেন্দ্র বটতলার পাঁচ মাথার মোড়ে ট্র্যাফিক সিগন্যাল বসানো হয় দীর্ঘদিন আগে। কিন্তু ওই সিগন্যাল এখনও চালু করা হয়নি। দিনেরাতে শুধু হলুদ আলোই জ্বলে থাকে। পুলিশকর্তারা বলছেন, রাস্তা সংকীর্ণ, এলাকাটি ঘিঞ্জি হওয়ার কারণে স্বয়ংক্রিয় বা হস্তচালিত কোনও ভাবেই ওই সিগন্যাল ব্যবহার করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া, প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যাও রয়েছে। কিন্তু সব সময় ট্র্যাফিক পুলিশও চোখে পড়ে না গুরুত্বপূর্ণ ওই জায়গায়। মাহেশে সখের বাজারের কিছু ব্যবসায়ী নিত্যদিন স্কুলের ছাত্রছাত্রী বা বৃদ্ধবৃদ্ধাদের রাস্তা পার করে দেন।
পুলিশ চাইছে, পুরসভাগুলি যান নিয়ন্ত্রণের কাজে এগিয়ে আসুক। যদিও, ডানকুনি এবং বৈদ্যবাটি বাদে মহকুমার অন্য চারটি পুরসভা এ ব্যাপারে এখনও সদর্থক কিছু করে উঠতে পারেননি। শ্রীরামপুরের এসডিপিও রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “বৈদ্যবাটি পুরসভার স্বেচ্ছাসেবকেরা চমৎকার কাজ করছেন। অন্য পুরসভাগুলিও যদি এ ভাবে এগিয়ে আসে, তা হলে যানজটের সমস্যা অনেকটাই লাঘব হবে। দুর্ঘটনা কমবে। দরকারে, পুলিশ স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ দেবে।” |
|
|
|
|
|