‘শীতলার পায়ের ছাপ’ বালির পুকুরঘাটে, ওড়ালেন বিজ্ঞানীরা
১ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৫। গণেশমূর্তি দুধ খাচ্ছে, এমনই এক রটনায় তোলপাড় গোটা দেশ।
১ ডিসেম্বর, ২০১১। পুকুরের জলে ডোবা সিঁড়িতে এক জোড়া পায়ের ছাপ। পুকুরঘাটের উল্টো দিকেই শীতলার মন্দির। অতএব ‘মা শীতলার পদচিহ্ন’ নিয়ে ভোর থেকে রাত হুলস্থুল বালির ঘোষপাড়ায়।
বৃহস্পতিবার ভোরে ওই পুকুরে স্নান করতে যান স্থানীয় কয়েক জন মহিলা। তাঁরাই প্রথম ‘আবিষ্কার’ করেন বাঁধানো সিঁড়ির জলে ডোবা ধাপে এক জোড়া সাদা রঙের পায়ের ছাপ। খবর দ্রুত ছড়ায় এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায়।
‘শীতলার পায়ের ছাপ’
‘অলৌকিক’ কাণ্ড দেখতে দলে দলে ভিড় জমান মানুষ। ভিড় সামলাতে নামে পুলিশ। তৈরি হয় ব্যারিকেড। শুরু হয়ে যায় পুজো দেওয়াও। সিঁড়ির উপরে চটজলদি গড়া খড়-বাঁশের মাচায় ফুল-মালা চড়ানোর পাশাপাশি পড়তে থাকে নগদ প্রণামী। গণেশের দুধ খাওয়া বা ‘মা শীতলার পায়ের ছাপ’ ছবিটা বদলায় না কেন? মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল বলছেন, “নিরাপত্তাহীনতা মানুষের ভিতরে এমন শিকড় গেড়ে বসেছে যে, সব সময়ে সে আশা করছে কোনও বড় শক্তি তাকে রক্ষা করবে। অস্বাভাবিক কিছু দেখলে সেটাকেই মানুষ শক্তির প্রতীক হিসেবে ভেবে নিতে ভালবাসে। সেই অনুভূতি তাদের এক ধরনের মানসিক নিরাপত্তা দেয়। এ ক্ষেত্রে হয়তো তা-ই হয়েছে।” তবে তাঁর মতে, এটা ‘মাস হিস্টিরিয়া’। এর প্রভাব বেশি দিন স্থায়ী হয় না।
‘শীতলার পায়ের ছাপ’ দেখতে ভিড়। বৃহস্পতিবার, বালিতে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোদর্শনের অধ্যাপক মৌসুমী গুহের মতে, সামাজিক অস্থিরতা বাড়লে মানসিক অস্থিরতাও বাড়ে। তখন মানুষ এমন কিছু একটা আঁকড়ে ধরতে চায়, যার ‘দৈবী’ শক্তি আছে বলে তারা মনে করে। এ ক্ষেত্রেও এমন কিছু ঘটে থাকতে পারে। যাঁরা ওই অঞ্চলে গিয়েছেন বা যাচ্ছেন, তাঁদের সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে আরও তথ্য পাওয়া দরকার বলেও মনে করেন তিনি।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জয়ন্তী বসুর কথায়, “অতিমানবীয় কিছু রয়েছে, এই বিশ্বাস থেকে মানুষ নীরবে তাকে খোঁজে। তেমন একটা কিছু হাতের কাছে পেলে তার বিশ্বাস দৃঢ় হয়। গুজব-বিশ্বাস মিলে মিশে অনেক সময় দেবতার জন্ম হয়। আর একটা দিকও রয়েছে। সেটা হল এর ব্যবসায়িক দিক। পুজো মানেই সেখানে টাকা পয়সা মানুষ দান করেই থাকেন। সে ব্যাপারটাও খেয়াল রাখতে হবে।”

বিজ্ঞানীরা যা বলছেন
ওই পুকুরের জলে অ্যাসিড থাকতে পারে। সেই জল মাড়িয়ে শ্যাওলা পরা সিমেন্টের সিঁড়ি দিয়ে মানুষের ওঠানামার
ফলে দীর্ঘ দিন ধরেই রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটেছে। তার জেরে ওই ছাপ তৈরি হতেই পারে। পুকুরের জল
পরীক্ষা করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
বিকাশ সিংহ,
পায়ের নীচে আঠার সঙ্গে সাদা রং ব্যবহার করে পাথরের উপরে ওই ধরনের ছাপ দেওয়া যেতে পারে।
শ্যামল চক্রবর্তী,
বিষয়টা শুনে মনে হচ্ছে এটি একটি রং, যা জলে নষ্ট হচ্ছে না। তবে, হাইড্রোকার্বো অরগ্যানিক
সলভেন্ট কিংবাঅরগ্যানিক সলভেন্ট জাতীয় কোনও রাসায়নিক (যেমন কেরোসিন, বেঞ্জিন)
দিলে ওই রং নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সঞ্জীব ঘোষ,
নিজস্ব চিত্র



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.