প্রতিবার ভাবি দাম পাব, অসহায় তুলসীরা
পানিপথের রামডা গ্রামের চাষি একরামের সঙ্গে তারকেশ্বরের নছিপুর গ্রামের চাষি তুলসীচরণ মান্নার তফাতটা বিস্তর। তফাত কেবল দূরত্বের নয়, অবস্থারও।
৪০ একর জমি জুড়ে ফুলকপি চাষ করে বড়ই নিশ্চিন্ত একরাম। দাম নিয়ে ভাবনা নেই। খেত থেকেই ‘কোম্পানির বাবুরা’ সটান ফসল কিনে নিয়ে যান। আবার চাষের ব্যাপারে নানা পরামর্শও দেন। তাতে ফলন বাড়ে, ভাল মানের ফসল মেলে।
পাঁচ কাঠা জমিতে বেগুন চাষ করে সামান্য লাভের মুখ দেখতে নছিপুরের তুলসীর কালঘাম ছুটে যায়। নিজের মতো চাষ করেন, নিজেই বিক্রির ব্যবস্থা করেন। ফসলের মান উন্নত করার জন্য পরামর্শ দেওয়ার কেউ নেই। তাঁর কথায়, “কৃষি দফতর খায় না মাথায় দেয়, আমরা তা-ই জানি না।”
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে কৃষকদের একটি মুখ যদি হন একরাম, অন্যটি তুলসী। তারকেশ্বরের কেশবচক পঞ্চায়েতের নছিপুর গ্রামের চাষি তুলসীর সারা বছর সব্জি চাষ করেই সংসার চলে। পাঁচ কাঠা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। কয়েক মাস আগে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বেগুন নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। লোকসান হয়েছিল। ভাদ্র মাসে ফের নতুন করে বেগুন চাষ শুরু করেছেন তিনি।
বেগুনের পরিচর্যায় তুলসী। ছবি— প্রকাশ পাল
চারা বসানোর পরে মোটামুটি ভাবে ৪৫ দিনের মধ্যে ফসল ওঠার শুরু। জমি তৈরি, চারা বসানো, সার দেওয়া, কৃষি শ্রমিকের মজুরি প্রথম বার ফসল ওঠার সময় পর্যন্ত কাঠা প্রতি অন্তত ৮০০ টাকা খরচ। এর পর গাছের পরিচর্যা (ওষুধ, সেচ) বাবদ খরচ প্রতি মাসে ৫০০-৬০০ টাকা। এই জমিতে ৫ মাস ধরে ফলন পাবেন তিনি। ফসল কাটা হয় ৫ দিন অন্তর। এক কাঠা জমি থেকে মাসে মোটামুটি ভাবে ৫০-৬০ কেজি বেগুন হয়।
আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বার ভাল ফসল হয়েছে। এক-একটি বেগুনের ওজন হয়েছে ২০০-২৫০ গ্রাম। তুলসীর কথা অনুযায়ী, এখন এক পাল্লা (৫ কিলোগ্রাম) বেগুনের দাম মিলছে ৩০-৩৫ টাকা। এই পরিমাণ বেগুন ফলাতে খরচ পড়ে ২২-২৪ টাকা। সুতরাং খুব একটা লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না। এর পরে দাম আরও কমতে পারে বলে তাঁর আশঙ্কা। হিসেবে দেখা যাচ্ছে তুলসী যে বেগুন ৬/৭ টাকা কিলোগ্রাম দরে বিক্রি করছেন, বাজারে সেটা বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৬ টাকা কিলোগ্রাম দরে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে মোটামুটি এই হিসেব। অতিরিক্ত ফলন হলে দাম আরও পড়ে যায়। ফসল ফেলে নষ্ট করতে হয়। আবার আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় ফলন মারও খায়। যেমন হয়েছিল আগের বার।
এই গোটা চাষের প্রক্রিয়া কি একাই সামলান? তুলসী বলেন, “জমি তৈরিতে লোক লাগাতেই হয়। পরে সবটাই নিজেরা করি। পুরোটা শ্রমিক দিয়ে চাষ করালে আরও খারাপ অবস্থা হত। এখনই লাভের মুখ তেমন দেখি না। লোক লাগালে আর কী থাকবে?” দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুলসী বলেন, “আমরা এ ভাবেই বাঁচি। প্রতিবারই ভাবি দাম পাব, কিন্তু বাস্তবে হয় উল্টো।”
ফলন ভাল হলেও দাম পান না কেন? কারণ ফসল কেনার কোনও সরকারি ব্যবস্থা নেই। তাই ব্যবসায়ী ও ফড়েদের ফাঁদেই পড়তে হয় তুলসীদের। ছোট ব্যবসায়ীরা তুলসীদের কাছ থেকে সরাসরি ফসল কিনে নিয়ে যান। তাঁরা তারকেশ্বরে বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। তাঁদের কাছ থেকে আবার অন্য ব্যবসায়ী বা দোকানদারেরা কিনে নিয়ে যান। এর মধ্যেই ঘুরপাক খায় এক শ্রেণির ফড়ে বা দালাল। দামের কোনও মাপকাঠি নেই। এঁদের হাত ধরেই ওঠানামা করে ফসলের বাজার। ৬ টাকা কিলোয় কেনা বেগুন শহরে ১৬ টাকা কিলো হয়ে যায়। শুধু তুলসীর জীবনের অন্ধকারই কাটে না।
তুলসীরাও কিন্তু একরামের মতো হতে চান। চান, ফসলের ন্যায্য দাম। চান, ফড়েদের হাত থেকে মুক্তি। চান, চাষের মান বাড়াতে। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে বাম-ডানের সুর মিলে গিয়ে তুলসীদের দাবি-দাওয়ার কথা শুনছে কে? তুলসী দীর্ঘশ্বাস ফেলেন আরও এক বার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.