ব্যবসা ধর্মঘটে কেন্দ্রের সঙ্গে পেশি-যুদ্ধে বিজেপি
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির পক্ষে সওয়াল করে কংগ্রেস প্রচারে নামার আগেই দেশব্যাপী ব্যবসা বন্ধের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি জাহির করার চেষ্টা করল বিজেপি। এমন নয় যে দেশের সর্বত্র এই বন্ধের প্রভাব পড়েছে। কিন্তু দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, গুজরাতের মতো যে সব রাজ্যে বিজেপি-র জোর রয়েছে, সেখানেই আজ পেশি প্রদর্শন করেছে তাদের সমর্থিত ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি।
ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির উপরে বিজেপি-র নিয়ন্ত্রণ বরাবরই বেশি। মূলত সেই কারণেই উত্তরপ্রদেশে ভোটের মুখে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে নিজেদের মনোভাব আমূল পাল্টে ফেলেছে তারা। তা ছাড়া রয়েছে সঙ্ঘ পরিবারের চাপ। সেই চাপের মুখে গোটা বিজেপি এখন একজোট হয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। সংসদের মুলতুবি প্রস্তাবের মাধ্যমে সরকারকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে চায় তারা। আর আগে সংসদের বাইরে আজ এক দফা শক্তিপরীক্ষা সেরে নিল বিজেপি।
ব্যবসা বন্ধে সুনসান জামশেদপুরের কর্মব্যস্ত সাকচিবাজার। বৃহস্পতিবার পার্থ চক্রবর্তীর তোলা ছবি।
আর এই বন্ধের ‘সাফল্যে’ উজ্জীবিত বিজেপি নেতারা আজ সনিয়া গাঁধীর কৈফিয়ৎ তলব করেছেন। লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, “ভারত জোড়া ব্যবসা বন্ধের মাধ্যমে স্পষ্ট হল যে, অধিকাংশ দল সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। তা না হলে পশ্চিমবঙ্গে বাম-তৃণমূল, তামিলনাড়ুতে ডিএমকে-এডিএমকে, ওড়িশায় বিজেডি, উত্তরপ্রদেশে শাসক ও বিরোধী সবাই মিলে এই বন্ধকে সফল করবে কেন? তা ছাড়া কংগ্রেসেও মতবিরোধ রয়েছে। সনিয়া গাঁধীর কী অবস্থান, তা-ই এখনও স্পষ্ট নয়।” অরুণ জেটলি বলেন, “গোটা ব্যবসায়ী সম্প্রদায় আজ বন্ধ সফল করে বুঝিয়ে দিয়েছে, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি তাদের পক্ষে কতটা ক্ষতিকারক।” রসিকতার ছলে তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীদের বিজেপি-র ভোটব্যাঙ্ক বলা হলেও আজ বন্ধের সমর্থনে বামেরাও এগিয়ে এসেছে।”
বিজেপি-কে আরও ‘উজ্জীবিত’ করে আজ খুচরোয় বিদেশ লগ্নি নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে তাদের জোটসঙ্গী শিরোমণি অকালি দল। এর আগে তারা বিদেশি লগ্নির সমর্থনেই এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু আজ দলের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আলোচনার পরে দল মনে করে ক্ষুদ্র চাষি ও ছোট ব্যবসায়ীদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে বিষয়টি নতুন করে বিবেচনা করা দরকার।
বিদেশি লগ্নি নিয়ে তৃণমূলের আপত্তি এবং ধর্মঘটে বাম-বিজেপি-র সমর্থনের জেরে আজ কলকাতায় ব্যবসা অনেকটাই বিঘ্নিত হয়েছে। অন্য দিন ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গমগম করে যে পোস্তা, আজ ছিল সুনসান। নিউ মার্কেট বন্ধ, এমনকী লিন্ডসে স্ট্রিটের দোকানগুলিও খোলেনি। বন্ধ ছিল কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া, বৌবাজারের সোনাপট্টি এবং প্রিন্সেপ স্ট্রিটের গাড়ির সরঞ্জামের বাজারও। তবে দক্ষিণে যদুবাবুর বাজার এবং উত্তরে বিধান সরণির কিছুটা অংশে দোকানপাট খোলা ছিল।
খোলা ছিল ক্যামাক স্ট্রিট, এলগিন রোড, আনোয়ার শাহ রোড-সহ দক্ষিণ কলকাতার শপিং মলগুলি। যারা বাজারে আসার পরে তাঁদের ব্যবসা মার খেয়েছে বলে অভিযোগ খুচরো ব্যবসায়ীদের। বৈঠকখানা বাজারের এক দোকানির কথায়, “স্পেনসার্স, বিগ বাজার আসার ফলে ইতিমধ্যেই আমরা ক্ষতির মুখে পড়েছি। এর পরে বিদেশি সংস্থা এলে শেষ হয়ে যাব।”
কনফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনসের দাবি, খুচরো ব্যবসার জন্য জাতীয় নীতি প্রণয়ন করা হোক। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুশীল পোদ্দার বলেন, “খুচরো ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন আইন বহু পুরনো। এ জন্য ব্যবসায়ীরা নানা সমস্যায় পড়েন। খুচরো ব্যবসা নিয়ে জাতীয় নীতি তৈরি হলেই এর সমাধান হতে পারে।” সংগঠনের মুখপাত্র ফিরোজ আলি বলেন, “আমরা সম্প্রতি রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার সঙ্গে দেখা করে জাতীয় নীতির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছি। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।”
আজকের ধর্মঘটের সাফল্যে ‘খুশি’ বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “আমাদের লোকেরা অনেকে রাস্তায় নেমেছেন। এই আন্দোলনের সঙ্গে আমরা আছি ও থাকব।” ভবিষ্যতে ফের এ ধরনের বন্ধ হলে পোস্তার ব্যবসায়ীরা যে তাতে সামিল হবেন, সে কথা আজই জানিয়ে দিয়েছেন পোস্তা মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ অগ্রবাল।

সহ-প্রতিবেদন: কুন্তক চট্টোপাধ্যায়



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.