ডাক্তারি পাশ না করেও দিব্যি অস্ত্রোপচার করতেন তিনি। রোগী দেখতেন একাধিক চেম্বারে। কিন্তু এক রোগিনীর মৃত্যুর পরেই যাবতীয় কীর্তি ফাঁস হয়ে গেল তাঁর। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে সফিকুল ইসলাম নামের ওই জাল চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছে বারাসত থানার পুলিশ। শনিবার বারাসত আদালতে তোলা হলে তাঁকে চার দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, জেরার মুখে সফিকুল জানিয়েছেন, তিনি ডাক্তারি পাশ করেননি। হাতুড়ে চিকিৎসক হয়েও এক-এক জায়গায় এক-এক নামে তিনি রোগী দেখতেন। কোথাও তিনি পরিচিত ছিলেন রাজু ডাক্তার নামে, কোথাও তাঁর পরিচয় ছিল চিকিৎসক দুলালচন্দ্র রায় বা ডিসি রায় হিসাবে।
এত ‘পসারওয়ালা চিকিৎসক’ হয়েও প্রেসক্রিপশনে রেজিস্ট্রেশন নম্বর কিছুতেই লিখতেন না তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, ১০ বছর ধরে প্র্যাকটিস করলেও এত দিন রেজিস্ট্রেশন নিয়ে তেমন কোনও সমস্যাতেও পড়তে হয়নি তাঁকে। এক-দু’জন প্রশ্ন করলে তিনি একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেখিয়ে দিতেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, সেটি আসলে শঙ্কর মুর্মু নামে এক চিকিৎসকের। শঙ্করবাবু বর্তমানে ঝাড়গ্রামে চিকিৎসা করেন।
তদন্তকারীরা জানায়, নব ব্যারাকপুরের বাসিন্দা কল্পনা মিত্র নামে এক মহিলা অনেক দিন ধরেই সফিকুলের চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু কিছুতেই তাঁর রোগ সারছিল না। গত ২৫ তারিখ অবস্থা খারাপ হওয়ার সফিকুলের উপর ভরসা না-করে কল্পনাকে অন্য হাসপাতালে ভর্তি করেন তাঁর বাড়ির লোক। সেখানেই পরদিন তাঁর মৃত্যু হয়। এরপরেই চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল’-এর বারাসত শাখায় ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন কল্পনাদেবীর ভাই অনুপ মিত্র। চিকিৎসক সংগঠনের সভাপতি তপন বিশ্বাস বলেন, “আমরা খোঁজ নিয়ে দেখি, ওই নামে কোনও চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশনই নেই।” এরপরেই স্বাস্থ্য দফতরের অভিযোগ মতো বারাসত
থানার আইসি পরেশ রায়ের নেতৃত্বে পুলিশ শাসন থেকে ওই চিকিৎসকে গ্রেফতার করে। তিনি যে চেম্বারে বসতেন তার মালিককেও গ্রেফতার করা হয়।
তবে সফিকুল ইসলামের ঘটনাটি ভুয়ো চিকিৎসক চিহ্নিতকরণে উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকার সমস্যাকেই আরও একবার সামনে তুলে আনল বলে মনে করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানান, কোনও হাসপাতাল যখন লাইসেন্স পায় তখন ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট আইন মেনে সেখানে ক’জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, আরএমও, নার্স আছেন, তা দেখে নেওয়া হয়। কিন্তু চালু হওয়ার পর বাইরে থেকে ভাড়া করে কোনও চিকিৎসককে দিয়ে সেখানে অস্ত্রোপচার করানো হচ্ছে কি না, তা নজরদারির কোনও ব্যবস্থা স্বাস্থ্য দফতরের নেই। সেই সুযোগে অনেক হাতুড়ে ডাক্তার অনেক নার্সিংহোমে ঢুকে পড়ছে বলে স্বাস্থ্য কর্তাদের একাংশের অভিযোগ।
একই ভাবে ডিসপেন্সারিগুলিতেও হাতুড়ে ডাক্তার প্র্যাকটিস করতে পারেন। এ ব্যাপারে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা সুকান্ত শীল বলেন, “এমন কোনও নিয়ম হওয়া উচিত, যাতে কোনও নতুন ডাক্তার ডিসপেন্সারি বা ওষুধের দোকানের চেম্বারে বসার আগে তাঁর রেজিস্ট্রেশন যাচাই করা যায়। একই ভাবে নার্সিংহোমে নতুন চিকিৎসক এলে তাঁর বৈধতা যাচাইয়ের পরিকাঠামোও দরকার।” |