সঙ্কটের জঙ্গলমহলে শিশুমনের অন্য ভুবন
রিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। নেই বিদ্যুৎ-সংযোগ। আছে বলতে সর্বশিক্ষা মিশনের টাকায় তৈরি স্কুলভবন। সেখানে পড়ে ৮৩ জন খুদে। যাদের বাবা-মায়েরা কেউ কাগজ কুড়োন, কেউ পরিচারিকার কাজ করেন। কেউবা দিনমজুর। পরিশ্রমের কাজ করতে করতে হাতের তালু কঠিন হয়েছে অভিভাবকদের। কিন্তু তাঁদের সন্তানদের অপটু নরম হাতের স্পর্শে প্রাণ পেয়েছে ‘শিশুমন’। প্রাথমিক স্কুলের দেওয়াল পত্রিকাটির অভিনবত্ব এখানেই। লেখক থেকে সম্পাদক---সবই খুদেরা।
লেখাগুলি কম্পিউটরে টাইপ করে সুদৃশ্য দেওয়াল পত্রিকাটি তৈরি করেছেন অবশ্য শিক্ষকেরা। ঝাড়গ্রাম পুর-শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সত্যবান পল্লি এলাকার ‘রবীন্দ্রনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়’টি আর পাঁচটা প্রাথমিক স্কুলের মতোই সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত স্কুল। পড়ুয়াদের কৃতিত্বকে কুর্নিশ জানাতে সোমবার স্কুলে উপস্থিত হন ঝাড়গ্রাম পশ্চিম চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) শুভাশিস মিত্র। এ দিন দেওয়াল পত্রিকাটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন তিনিই। শুভাশিসবাবু বলেন, “শিশু-পড়ুয়াদের সৃজনাত্মক ভাবনা-চিন্তার ক্ষেত্র তৈরির এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। ‘শিশুমন’ অন্য স্কুলের পড়ুয়ারাদেরও উৎসাহিত করবে।”
রবীন্দ্রনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেওয়াল
পত্রিকার সামনে পড়ুয়ারা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
২০০৭ সালে তৈরি হওয়া এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অরূপ মহাপাত্র রয়েছেন শুরু থেকেই। অরূপবাবুর বক্তব্য, “জঙ্গলমহলের দমবন্ধ পরিবেশে শৈশবের সঙ্কট দেখেছি। শিশুমনের ভাবনার জায়গাটা নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না--এই সংকল্প নিয়েই দেওয়াল পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ।” দেওয়াল পত্রিকাটি তৈরি করতে ও বাঁধাতে পাঁচশো টাকা খরচ হয়েছে। অরূপবাবুর পাশাপাশি, স্কুলের সহশিক্ষক মহেশ্বর পাতর ও সহশিক্ষিকা নূপুর দাসমহাপাত্র-রা সেই খরচ জুগিয়েছেন।
পত্রিকাটির যুগ্ম সম্পাদক চতুর্থ শ্রেণির হেমন্ত ঘোষ ও তৃতীয় শ্রেণির অনিমা গাঁতাইত-রা জানায়, শুরুতে দেওয়াল পত্রিকা নিয়ে আমাদের কোনও ধারণা ছিল না। মাস্টার মশাই-দিদিমণিরা বলেছিলেন, ছোট ছোট বাক্যে যে কোনও বিষয় নিয়ে লিখতে। তিন মাস ধরে লেখা জোগাড় হয়েছে। যে লেখাগুলো আমাদের ভাল মনে হয়েছে, সেগুলোই পত্রিকায় রাখা হয়েছে। যাদের লেখা জায়গা পায়নি, তাদের ফের ভাল লেখার চেষ্টা করতে বলা হয়েছে। পঁচিশে বৈশাখে আবার পত্রিকা বোরোবে।” রং-তুলির টানে দেওয়াল পত্রিকাটিকে রঙিন করেছে হেমন্ত, অনিমা, রিয়া, সৌম্যদের মতো পড়ুয়ারাই। সম্প্রতি চতুর্থ শ্রেণির দরিদ্র এক সহপাঠীর চিকিৎসার জন্য এই পড়ুয়ারাই পথে নেমে কী ভাবে সাড়ে তিন হাজার টাকা সংগ্রহ করেছিল, তা নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছে এক ছাত্রী। লেখাটির শিরোনাম: ‘সকলের তরে সকলে আমরা’। ক্রিকেট-ফুটবলের সঙ্গে কবাডি-র মতো খেলা সম্পর্কে রচনা রয়েছে। রয়েছে ভ্রমণ কাহিনি, ছড়া, গল্প, মজারু, পড়ুয়াদের আঁকা ছবি।
প্রধান শিক্ষক অরূপবাবু জানালেন, বছরে দু’টো করে সংখ্যা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী পঁচিশে বৈশাখ পরবর্তী সংখ্যা প্রকাশের ইচ্ছে রয়েছে। স্কুল-প্রাঙ্গণে পুরসভারই তৈরি একটি পাতকুয়ো এখন পরিত্যক্ত। সেই জল খাওয়া যায় না। ফলে, মিড-ডে মিলের জন্য বাইরে থেকে জল আনতে হয়। পড়ুয়ারাও বাড়ি থেকে বোতলে জল নিয়ে আসে। পরিস্রুত পানীয় জল ও বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য বহু বার ঝাড়গ্রাম পুরসভার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন স্কুল-কর্তৃপক্ষ। পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের অবশ্য বক্তব্য, “এই মুহূর্তে পুরসভার হাতে টাকা নেই। টাকা এলেই ওই স্কুলে জল ও বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করা হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.