দুই বোতল স্যালাইন। ৩০ মিলিলিটার অ্যান্টিবায়োটিক। তার সঙ্গে ব্যাথা নিবারক আয়ূর্বেদিক স্প্রে। সঙ্গে এক বোতল আয়োডিন। কিলোখানেক তুলো ও ব্যান্ডেজ। প্রায় ২ কিলোগ্রাম হলুদ। তালিকা থেকেই স্পষ্ট চিকিৎসার কী বিপুল আয়োজন। হবে না কেন! হাতি বলে কথা! সোমবার দুপুরে শিলিগুড়ির অদূরে সুকনার সামরিক ছাউনি এলাকা লাগোয়া জঙ্গলে বুনো হাতির চিকিৎসায় অবশ্য লাগোয়া সুকনা ঝোরার জলও লেগেছে ৫-৬০ লিটার। ঘুমপাড়ানি গুলি করে ওই স্ত্রী হাতিটিকে অচেতন করার পরে সমানে মাথায় ঢালা হয়েছে জল। যাতে চেতনা ফিরতে সময় লাগে। ঘুমপাড়ানি গুলি খেয়ে হাতিটি প্রায় ২৫ মিনিটের মধ্যে ক্রমশ অচেতন হয়ে কান দুটো নাড়া বন্ধ করলে হাতে গ্লাভস পরে পশু চিকিৎসক মলয় মাইতি সঙ্গীদের নিয়ে শুরু করলেন তাঁর কাজ।
ক্ষতস্থান ডেটল দিয়ে ভাল করে ধুইয়ে দেওয়ার পরে অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেওয়া হয়। তার পরেই শুরু হয় ক্ষতস্থান পরিস্কার করার কাজ। ততক্ষণে বনকর্মীরা কীটনাশক স্প্রে করার ড্রাম ভর্তি জল হাতিটির মাথায় ছড়ানো শুরু করেছেন। শরীরে স্যালাইন গুঁজে দিয়ে দুই বনকর্মী তা হাতে নিয়ে জিপের উপরে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। ক্ষতস্থানে মলমের সঙ্গে লেপে দেওয়া হয়েছে হলুদও। আধ ঘণ্টার মধ্যেই অবশ্য অপারেশন শেষ। |
দ্রুত এলাকা ছেড়ে সরে গেলেন তাঁরা। জখম বুনো ততক্ষণে ফের স্বাভাবিক ভাবে কান নাড়ানো শুরু করে দিয়েছে।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাতিটির সামনের বাঁ পায়ের ভিতরে গভীর ক্ষত রয়েছে। সম্ভবত হাড় ভেঙে গিয়েছে। সেই জন্য বাঁ-পা ফুলে রয়েছে। সেই জন্যই হাঁটতে পারছে না। গুলিবিদ্ধ হয়েই পায়ের হাড় ভেঙেছে বলে বনকর্মী ও পশু চিকিৎসকদের সন্দেহ। ওই পা নিয়েই অবশ্য হাতিটি বামনপোখরির জঙ্গল থেকে বার হয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরের এই এলাকায় সুকনা ঝোরার পাশে চলে আসে। এদিন সকালে বনকর্মীরা দেখতে পান শুঁড় দিয়ে ঝোরার জল নিয়ে হাতিটি ক্ষতস্থানে সমানে ঢালছে। তার পরেই বন দফতরে তৎপরতা শুরু হয়।
মহানন্দা অভয়ারণ্যের এডিএফও উৎপল নাগ, এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের সুকনার রেঞ্জ অফিসার কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায় ওই এলাকায় গিয়ে হাতিটিকে ভাল করে লক্ষ্য করে বাঁ পায়ের ক্ষতস্থানটি দেখতে পান। বন দফতরের কর্তারা খবর পেয়ে দ্রুত চিকিৎসার নির্দেশ দেন। দার্জিলিঙের ডিএফও বাসবরাজ বলেন, “গত সেপ্টেম্বরেও হাতিটির একবার চিকিৎসা হয়। তাতে পিছনের দুটি পায়ের ক্ষত সেরে গেলেও সামনের বাঁ পায়ের ক্ষত সারেনি। সেই জন্যই এদিন ফের চিকিৎসা করানো হল। আশা করি, এ বারও বুনো স্ত্রী হাতিটি কিছুদিনের জন্য সুস্থ থাকবে।” চলতি বছরের জুলাই মাসে নেপালে বুনো হাতির পালের উপরে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা হামলা করলে দুটি হাতির মৃত্যু হয়। বেশ কয়েকটি হাতি জখম হয়ে নকশালবাড়ির জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। বন দফতরের পক্ষ থেকে দফায় দফায় তল্লাশি করা হলেও জঙ্গলে বুনো হাতির পালের ভিতর থেকে কোনও জখমকে আলাদা করে চিহ্নিত করা যায়নি। পরে অগস্ট মাসে এই হাতিটিকে জখম অবস্থায় বামনপোখরির জঙ্গলে দেখতে পাওয়া যায়। বেশ কয়েক দফা চেষ্টার পরে ৯ সেপ্টেম্বর কুনকি হাতির সাহায্য নিয়ে সেটির চিকিৎসা করানো হয়। কাঞ্চনবাবু বলেন, “হাতিটির চিকিৎসা করানো হলেও নজরদারি বন্ধ করা হচ্ছে না। এখান থেকে হাতিটি কোথায় যাচ্ছে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে যাতে প্রয়োজনে ফের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়।” |