বাড়ির উঠোনে সিপিএমের জোনাল সম্মেলন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
দলের এক নেত্রীর বাড়ির উঠোনে জোনাল সম্মেলন করতে বাধ্য হল দার্জিলিং জেলা সিপিএম। রবিবার সকালে কার্শিয়াংয়ের সুকনার চামটা বস্তিতে স্থানীয় কমিউনিটি হলে এই সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিনা অনুমতিতে ওই হলে সভা করার প্রতিবাদ করেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। মোর্চা ও সিপিএমের সমর্থকদের মধ্যে তর্কাতর্কির জেরে উত্তেজনা ছড়ালেও পুলিশ পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। যদিও ঘটনার জেরে চাপান-উতোর অব্যাহত সিপিএম এবং মোর্চা নেতৃত্বের মধ্যে।
পুলিশ জানিয়েছে, বেলা ১০টা নাগাদ এলাকার কমিউনিটি হলে ওই সম্মেলনে যোগ দিতে সিপিএমের ২০-২৫ জন নেতা-সমর্থক জড়ো হলে, মোর্চার স্থানীয় নেতা-কর্মীরা গিয়ে বাধা দেন। পরে সিপিএমের দার্জিলিং জেলা কমিটির সদস্য তথা চামটা এলাকার নেত্রী দীপা ছেত্রীর বাড়ির উঠোনে সম্মেলন করে সিপিএম। কার্শিয়াঙের এসডিপিও নিমা নরবু ভুটিয়া বলেন, “অনুমতি না নিয়ে কমিউনিটি হলে সম্মেলন করতে চাওয়ায় অনেকে আপত্তি করেন। তাতে উত্তেজনা তৈরি হয়। পুলিশ যাওয়ার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।” পরে সেখানে যান সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার এবং দলের রাজ্য সভার সাংসদ সমন পাঠক। সম্মেলনে উত্তম শর্মাকে কার্শিয়াং-মিরিক জোনালের সম্পাদক করে ১৫ জনের কমিটি তৈরি করা হয়।
তবে ঘটনা নিয়ে দু’টি রাজনৈতিক দলে ‘তরজা’ চলছেই। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা তরাই অঞ্চলের নেতা শঙ্কর অধিকারী বলেন, “কমিউনিটি হলে সভা করতে হলে বিডিওকে জানানো বাধ্যতামূলক। কিন্তু সে সব নিয়মের তোয়াক্কা না করে সিপিএম সম্মেলন করতে চাওয়ায় স্থানীয় লোকজন ক্ষেপে যান। উত্তেজিত বাসিন্দারা বিনা অনুমতিতে সভা করতে দেওয়া হবে না বলে বাধা দেন। সেখানে আমাদের দলের লোকজনও ছিলেন। পরে সিপিএম নেত্রীর বাড়িতে সভা করেছে। আমরা দলীয় ভাবে সিপিএমকে বাধা
দিতে যাইনি।”
সিপিএমের পক্ষে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “সাধারণত গ্রামের ওই ধরনের হলে এমন সম্মেলনের জন্য অনুমতি লাগে না। মোর্চাও তো দিনের পর দিন ওই কমিউনিটি হলে সভা করে। আসলে মোর্চা জিটিএ-র আওতায় থাকা এলাকায় সিপিএমকে সভা করতে দেবে না বলে হুমকি দিয়েছে। এটাই কি পাহাড়ে গণতন্ত্র ফেরার নমুনা? আমি এসপি-কে তো বটেই, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবকে সব জানিয়েছি। আরে রাজ্যে কি জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে?” তাঁর ক্ষোভ, “এমনিতেই পাহাড়ে আমাদের সংগঠন তেমন নেই। ওই সম্মেলনে ৭২ জন আসার কথা ছিল। কিন্তু মোর্চা বাধা দেওয়ায় সোনাদা থেকে ১৭ জন আসতেই পারেননি। ৫২ জন ওই কমিউনিটি হলে জড়ো হন।”
মোর্চা নেতারা অবশ্য সিপিএমকে সভা করতে দেওয়া হবে না, এমন কোনও হুমকি দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। মোর্চা নেতা শঙ্করবাবুর যুক্তি, “বিনা অনুমতিতে সিপিএমের হাতেগোনা কয়েকজন সভা করতে যাওয়ার পরে কোথাও কোনও গোলমাল হলে দায়টা মোর্চার উপরেই চাপানো হত। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে রাজ্য জুড়ে হইচই করত সিপিএম। তাই খবর পেয়েই পুলিশকে অনুরোধ করেছিলাম। সে জন্য বড় মাপের গোলমাল এড়ানো গিয়েছে।” পাশাপাশি, মোর্চার ওই নেতার ‘কটাক্ষ’, “আমাদের বিরুদ্ধে বিনা অনুমতিতে সভা করার অভিযোগ তুলে বাজার গরম করতে চায় সিপিএম। তা হলে নিজেরা কেন অনুমতি নেয় না?”
পক্ষান্তরে সিপিএম নেত্রী দীপা ছেত্রীর বক্তব্য, “কমিউনিটি হলে আমাদের সম্মেলন নিয়ে এলাকাবাসীর আপত্তি ছিল না। মোর্চার কয়েকজন সমর্থক ইচ্ছাকৃত ওখানে সম্মেলন করায় বাধা দিয়েছে। ওরা নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় শেষ পর্যন্ত আমার বাড়ির উঠোনে সভা হয়। এই পরিবেশ চলতে পারে না। আমাদের কি কোনও রাজনৈতিক সংগঠন করার অধিকার নেই?” |