উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকার যে বড় জেলাগুলিকে ভাগ করতে চায়, তা সম্প্রতি জেলাসফরে গিয়ে জানিয়েছিলেন তিনি। শনিবার দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী সুব্রত বক্সীর নির্বাচনী সভাতেও ফের সেই কথাই আর একবার বললেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জেলা ভাগ করলে যে উন্নয়ন খাতে কেন্দ্রীয় অর্থ বেশি পাওয়া যায়, তা ব্যাখ্যা করে এ দিন মমতা ভবানীপুরের একটি প্রচারসভায় বলেন, “এক-একটা জেলায় পাঁচ-পাঁচটা মহকুমা। এ ভাবে হয় নাকি! যত জেলা বাড়বে, উন্নয়নের টাকাও বাড়বে। বামফ্রন্ট সরকার কিছুই করেনি। তাই জেলাকে ভাগ করতে হবে।” জেলা ভাগ করে উন্নয়ন খাতে ওড়িশা অনেক টাকা পেয়েছে, তা-ও উল্লেখ করেন মমতা। এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা সদরের সঙ্গে প্রান্তিক অংশগুলোর যোগাযোগ যে ঠিকমতো হচ্ছে না, সেই প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “উত্তর ২৪ পরগনার কোথায় মিনাখাঁ, কোথায় বেলঘরিয়া, কোথায় বর্ধমানের গলসি, কোথায় কাঁকসা, কোথায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন, কোথায় সোনারপুর, নামখানা, কাকদ্বীপ! মেদিনীপুর যেতে যা সময় লাগে, কাকদ্বীপে যেতে তার থেকে বেশি লাগে। ফলে জেলাগুলির কাঠামো বদল করতে হবে।” তবে এই ‘কাঠামো’ পরিবর্তনে উদ্যোগী হলেও যে রাজ্য সরকারকে বিস্তর প্রতিবন্ধকতা পোহাতে হচ্ছে, তা বোঝাতে গিয়ে বলেন, “বাংলার কাঠামোটাই ঠিকমতো নেই। যা পড়ে রয়েছে তার না আছে দড়ি, না আছে খড়। নরকঙ্কাল হয়ে পড়ে রয়েছে রাজ্যটা! কাঠামোটা ঠিকভাবে করতে হবে। রাজ্যকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে।” এই পুনরুজ্জীবনের মধ্যে কলকাতার রাস্তা দখল করে থাকা হকারদের পুনর্বাসনের বিষয়টিও থাকবে বলে জানান তৃমমূলনেত্রী। বলেন, “অনেকেই আমাকে বলেন, হকাররা রাস্তায় বসায় অসুবিধা হয়। কিন্তু পুনর্বাসনের কিছু একটা ব্যবস্থা না করে ওঁদের কী করে উচ্ছেদ করব! বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে।”
বরাবর তাঁর নিজের ‘ঘর’ দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে সুব্রতবাবুকে জেতানোর জন্য মানুষের দরবারে আবেদন জানিয়ে মমতা বলেন, “আমার কিছু চাই না। আমার নাম করে কেউ কিছু বললেও, তার দরকার নেই। যতদিন বাঁচব, ততদিন আমার সেরাটুকু আপনাদের জন্য দিয়ে যেতে চাই। আপনাদের সাহসই আমার লড়াইয়ের প্রেরণা।” মুখ্যমন্ত্রীর আরও আবেদন, “আমাদের কিছুটা সময় দিন। কাউকে প্রতারণা করব না। রাতারাতি তো সবকিছু করা যায় না!”
ভবানীপুরের পর গার্ডেনরিচেও একটি নির্বাচনী সভায় যান মমতা। সংখ্যালঘু ওই এলাকায় মমতার সভায় ব্যাপক ভিড় হয়েছিল। সেখানে মমতা আরও একবার জানিয়ে দেন যে, তৃণমূল খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়টি মানবে না। তারা সংসদে এর বিরোধিতা করবে।
মমতার কথায়, “ওই সিদ্ধান্ত আমরা মানব না।
যেমন পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টাও মানিনি। আগে আমাদের চাষীরা খেয়েপরে বাঁচুক। তারপর বিদেশি বিনিয়োগ! এই সিদ্ধান্তের ফলে ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের স্বার্থহানি হবে।” |