মাওবাদী দমনে মমতার সাফল্য মানতে ‘নারাজ’ বিমান
যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কিষেণজির মৃত্যুকে রাজ্য সরকারের ‘সাফল্য’ বলে মানতে নারাজ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। তাঁর বক্তব্য, কিষেণজির বিরুদ্ধে বামফ্রন্ট সরকারের আমল থেকে যে নিরন্তর অভিযান চালানো হচ্ছে, তারই পরিসমাপ্তি এই ঘটনা। বরং তাঁর পাল্টা দাবি, বামফ্রন্টের আমলে কিষেণজিকে ধরার মতো অবস্থায় একাধিক বার যৌথ বাহিনী পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু অল্পের জন্য তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন।
কিষেণজির মতো শীর্ষস্থানীয় মাওবাদী নেতার যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারানো কি মাওবাদী-দমনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফল্য? জবাবে শনিবার আলিমুদ্দিনে বিমানবাবু বলেন, “সে রকম কোনও ব্যাপার নয়। এটা কারও একার সাফল্য নয়। সাফল্য বা অসাফল্য এ ভাবে দেখাও উচিত নয়। একটা নিরন্তর প্রচেষ্টার পরিসমাপ্তি হল। কারণ, কিষেণজির বিরুদ্ধে বামফ্রন্টের আমল থেকেই লাগাতার অভিযান চালানো হচ্ছে।” নিজের যুক্তির পক্ষে বিমানবাবু আরও বলেন, “বামফ্রন্টের আমলেও এক বার তাঁকে ঘিরে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু গুলি করা যায়নি। কারণ, সাঁকরাইল থানার ওসি অতীন্দ্রনাথ দত্ত কিষেণজির হেফাজতে ছিলেন। সে ক্ষেত্রে অতীনবাবুর গুলি লাগতে পারত। আর একবার যৌথ বাহিনীর গুলি তাঁর পায়ে লেগেছিল বলে শুনেছি। কিন্তু পালিয়ে যান। গুলি লাগার পর থেকে তিনি খুঁড়িয়ে হাঁটতেন।”
নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে কিষেণজির মৃত্যু ছাড়াও এক মাসে কিছু মাওবাদী নেতা-নেত্রী গ্রেফতার হয়েছেন বা আত্মসমর্পণ করেছেন। সেক্ষেত্রেও মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতাকে ‘সফল’ বলতে নারাজ বিমানবাবু। তিনি বলেন, “বামফ্রন্টের আমলেও বেশ কিছু মাওবাদী নেতা-নেত্রী গ্রেফতার বা আত্মসমর্পণ করেছিলেন। বামফ্রন্টের আমলে গ্রেফতার হওয়া মাওবাদীদের দু’জন পলিটব্যুরোর সদস্য এখনও জেলে। সুতরাং মাওবাদী দমনে এই রাজ্য সফল বলে যে ভাবে বলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়।”
ঘটনাচক্রে, এদিনই বারাসতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূলের প্রথমসারির নেতা মুকুল রায় জানিয়েছেন, মাওবাদীদের সঙ্গে সরকার শান্তি-প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবে। কিষেণজির মৃত্যুতে মাওবাদী-সরকার শান্তি-প্রক্রিয়া ব্যাহত হল কিনা, সে প্রশ্নের জবাবে মুকুলবাবু বলেন, “অশান্ত পাহাড়ে শান্তি এসেছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সব সময়েই চান, মানুষ অস্ত্র পরিহার করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ফিরে আসুক। মাওবাদীদের সঙ্গে শান্তি-প্রক্রিয়াও জারি থাকবে।”
মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে সিপিএমের তরফে প্রচার করা হচ্ছিল, মাওবাদী দমনে মমতা ‘আন্তরিক’ নন। বিমানবাবুও নিজেও একাধিক বার এই অভিযোগ করেছেন। আলিমুদ্দিন এ-ও ঠিক করেছে, মমতা মাওবাদী-দমনে ‘সক্রিয়’ হলে সিপিএম তাঁকে সমস্ত সাহায্য করবে। কিষেণজির মৃত্যুর পরে এখন মাওবাদী-দমন নিয়ে মমতার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলা নিরর্থক বুঝেই বিমানবাবুরা প্রশাসক হিসাবে মমতার ‘সাফল্য’ মানতে নারাজ।
কিষেণজির মৃত্যু নিয়ে শুক্রবারই সিপিআইয়ের গুরুদাস দাশগুপ্তের সঙ্গে ভিন্নমত হয়েছেন সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি। গুরুদাসবাবু বলেছিলেন, কিষেণজিকে আগে গ্রেফতার করে তারপর ‘ভুয়ো সংঘর্ষে’ মারা হয়েছে। এ দিন রাতে গার্ডেনরিচে এক নির্বাচনী সভার পর বিমানবাবুকে ওই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “গুরুদাসবাবু হয়তো জানেন। কিন্তু ওই ব্যাপারে আমার কাছে কোনও তথ্য নেই।” তবে বিমানবাবুর দাবি, রাজ্যের উচিত কিষেণজির মৃতদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করা। বিশিষ্টদের একাংশ কিয়েণজির মৃত্যু নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছেন, সে সম্পর্কে বিমানবাবু বলেন, “যাঁরা চোখের জল ফেলছেন, তাঁরা একদিকদর্শী। খুন করার পর সিপিএম কর্মী ফাগু সরেনের দেহ যখন তিনদিন ধরে পড়েছিল, সৎকারও করতে দেয়নি, তখন এঁরা বোবা হয়ে বসেছিলেন কেন? তখন তো কিছু বলেননি! আবার জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডে ১৫০ মানুষের মৃত্যু হলে এঁরাই সিপিএমকে দায়ী করেছিলেন! কারণ, তখন নির্বাচনে সিপিএমকে হারানোর দরকার ছিল।”
বামফ্রন্টের শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের কেন্দ্রীয় কমিটি কিষেণজিকে ‘হত্যা’ করার নিন্দা করেছে। কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে প্রেস বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, কোনও রাজনৈতিক বিরোধী, তাঁর মতাদর্শ যা-ই হোক না কেন, তাঁকে হত্যা করা সমর্থনযোগ্য নয়। সকলেরই আইনের বিচার পাওয়া উচিত। চরমপন্থীদের খুন না-করে তাদের আদালতের সামনে হাজির করানো উচিত সরকারের। তবে একই সঙ্গে ফ ব কেন্দ্রীয় কমিটি এ-ও জানিয়েছে যে, তারা মাওবাদীদের তোলা রাজনৈতিক বিষয়গুলিকে তারা সমর্থন করলেও মাওবাদী কার্যকলাপকে সমর্থন করে না। কিষেণজির ‘হত্যা’ থেকে মাওবাদীদের শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে মনে করে ফ ব।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.