|
|
|
|
মাওবাদী বন্ধের প্রভাব খাস ঝাড়গ্রাম সদরেই |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
কিষেণজি নেই। এলাকায় আছে যৌথ বাহিনী। বর্তমানে মাওবাদীরা বন্ধ ডাকলেও উপদ্রুত এলাকায় বাজার-দোকান খোলা থেকেছেসেই অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, শনিবার জনজীবন অনেকটাই স্বাভাবিক থাকবে জঙ্গলমহলে। বাস্তব কিছুটা অন্য ছবি দেখাল।
কিষেণজি-কে ‘হত্যা’র প্রতিবাদে মাওবাদীরা দু’দিনের বন্ধ ডেকেছে। যে লালগড়কে কেন্দ্র করে পশ্চিম মেদিনীপুরে গত তিন বছর ধরে আবর্তিত হয়েছে মাওবাদী কার্যকলাপসেখানে এ দিন জনজীবন কার্যত স্তব্ধ ছিল। দোকানপাট খোলেনি। বাস-ট্রেকার চলেনি। ফলে, যোগাযোগ-ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে সকাল থেকেই। পথে যাঁরা বেরিয়েছেন, তাঁদের ভোগান্তি হয়েছে যথেষ্ট। আর এক মাওবাদী ‘ডেরা’ বেলপাহাড়ির ছবিটাও মোটের উপরে একই রকম। মাওবাদী-উপদ্রুত বলে পরিচিত পুরুলিয়ার বান্দোয়ান, ঝালদা, কোটশিলা, বাঘমুণ্ডি, আড়শা, জয়পুর, বোরো এবং বাঁকুড়ার বারিকুল, সারেঙ্গা, রানিবাঁধ, রাইপুরেও দোকানপাট বন্ধ ছিল। |
|
বন্ধের প্রভাব পড়েনি বলরামপুরে। ছবিটি তুলেছেন সুজিত মাহাতো |
মাওবাদীদের বিরোধিতায় কয়েক মাস আগে তৈরি হওয়া তৃণমূল-সমর্থিত ‘জনজাগরণ মঞ্চ’ শুক্রবার জামবনি, ঝাড়গ্রাম-সহ নানা অঞ্চলেও বন্ধ ব্যর্থ করার ডাক দিয়ে মিছিল করেছিল। শুক্রবার রাতে তাদের প্রচার যখন চলছে তখনই কিছু স্থানীয় বাসিন্দা বলছিলেন, “বন্ধের কথা তো অনেকেই জানত না। এরা বন্ধ ব্যর্থ করার প্রচার করছে, তাতে আসলে বন্ধের প্রচারটাই বেশি করে হল।” এ দিন ঝাড়গ্রাম শহর দেখে বোঝা গেল, তাঁদের অনুমান খুব একটা ভুল হয়নি। জামবনির বুড়িশোলের জঙ্গল (যেখানে কিষেণজির দেহ মিলেছে) থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে মহকুমা সদর ঝাড়গ্রাম। কিন্তু এ দিন সেই শহরের বড় রাস্তাগুলির উপরে বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ। যানবাহনও চলেনি। কেন এমন হল? জেলা পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, “কোনও বড় নেতার মৃত্যু হলে মাওবাদীরা পাল্টা বড় আঘাত হানবে বলে নানা মহল থেকে যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, হয়তো সেটা জনমানসে ছাপ ফেলেছে।”
কিন্তু ‘ছাপ’ পড়েনি এমন জায়গাও এ দিন ছিল জঙ্গলমহলে। যে বুড়িশোলে কিষেণজির দেহ মিলেছে, ঝাড়খণ্ডের সীমানা-ঘেঁষা সেই এলাকাতেই বন্ধের প্রভাব সর্বাত্মক ছিল না। বেশ কিছু দোকানপাটও খোলা থাকতে দেখা গিয়েছে। জেলা পুলিশ সূত্রের ব্যাখ্যা, গত দু’বছরে বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনা ছাড়া, জামবনিতে মাওবাদীদের সক্রিয়তা তেমন দেখা যায়নি। জঙ্গলমহলে ‘পুনর্দখল’ অভিযানের সময়েও জামবনিতেই প্রথম ‘জমি ফিরে পায়’ সিপিএম। গত ছ’মাসে আবার সেখানে তৃণমূল-সমর্থিত ‘জনজাগরণ মঞ্চ’-এর তৎপরতা সবচেয়ে বেশি। |
|
ঝাড়গ্রামে বন্ধ দোকান। ছবিটি তুলেছেন দেবরাজ ঘোষ |
ঝাড়খণ্ডী দলের যে অংশের সঙ্গে মাওবাদীদের ‘ঘনিষ্ঠতা’, তারাও ইদানীং এখানে বেশ ‘দুর্বল’। ফলে, বন্ধের প্রভাব পড়েনি বললেই চলে। ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর ১ ও ২ নম্বর ব্লকেও বন্ধের প্রভাব মাত্র কয়েকটি এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। সাঁকরাইলে বন্ধের প্রভাব পড়েনি। মেদিনীপুর সদর, শালবনি, গোয়ালতোড়েও দোকানপাট ছিল খোলা। কয়েক বছর ধরে মাওবাদী-নাশকতার অন্যতম ক্ষেত্র পুরুলিয়ার বলরামপুরও ছিল প্রায় স্বাভাবিক। বলরামপুর লাগোয়া বরাবাজারেও দোকান খোলা ছিল। বলরামপুরের ঘাটবেড়ায় এ দিনই সিপিএমের লোকাল কমিটির সম্মেলন হয়েছে। দলের কর্মীদের নিয়ে বলরামপুর বাজারে ঘুরতে ঘুরতে তৃণমূল নেতা অঘোর হেমব্রম (একদা মাওবাদী-ঘনিষ্ঠ আদিবাসী-মূলবাসী কমিটির এখন জঙ্গলমহল উন্নয়ন বিরোধী প্রতিরোধ কমিটিরও নেতা) দাবি করলেন, “সব স্বাভাবিক। মানুষ আতঙ্ক কাটিয়ে উঠেছেন।”
জঙ্গলমহলে মাওবাদী-আতঙ্ক কি তা হলে কাটছে? শনিবারের ঝাড়গ্রাম কিন্তু ধন্দে রেখে দিল।
|
|
|
|
|
|