|
|
|
|
পাল্টা গুলি কি চালান কিষেণজি, হবে পরীক্ষা |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
‘ভুয়ো’ সংঘর্ষ না সংঘর্ষ কিষেণজির মৃত্যু ঘিরে এই বিতর্কের নিষ্পত্তি ঘটানোর পথ খুঁজতে নিহত মাওবাদী নেতার হাত ও পা থেকে ত্বকের নমুনা সংগ্রহ করেছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। নেওয়া হয়েছে তাঁর হাতের তালুর ছাপও। এই সব নমুনা থেকে ‘গান শট রেসিডিউ’ (জিএসআর) পরীক্ষা করবেন তাঁরা। যা থেকে মৃত্যুর আগে কিষেণজি পাল্টা গুলি চালিয়েছিলেন কি না তার আন্দাজ পাওয়া সম্ভব। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কেউ গুলি চালালে তাঁর দেহের কোনও অংশ বা জামাকাপড়ে বারুদের চিহ্ন থাকবেই। জিএসআর পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিতে সময় লাগবে সাত থেকে দশ দিন। কিষেণজির মৃত্যু ঘিরে বিতর্কের জল কোন দিকে গড়াবে তার অনেকটাই নির্ভর করছে ওই রিপোর্টের উপর।
কিষেণজির ভাইঝি দীপা মুত্তেআলা এবং তাঁর সঙ্গী অন্ধ্রপ্রদেশের মাওবাদী-ঘনিষ্ঠ কবি-সমাজকর্মী ভারাভারা রাও, মানবাধিকার কর্মী চন্দ্রশেখররা অবশ্য এ দিনও দাবি করেন, কিষেণজিকে ধরার পরে অত্যাচার করা হয়েছে। তার পর ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। দীপা বলেন, “কাকার শরীরে আঘাতের অনেকগুলো চিহ্ন দেখলাম।” ভারভারার দাবি, “ওঁর উপর প্রচুর অত্যাচার হয়েছে। গত ৪০ বছর ধরে অনেক মৃতদেহ দেখেছি, কিন্তু এমন দেহ আগে দেখেনি। শরীরের এমন কোনও অংশ নেই, যেখানে আঘাতের চিহ্ন নেই। শুধু গুলি নয়, পোড়ার চিহ্নও রয়েছে।” |
|
দীপার মোবাইলে ছবি নিহত কাকার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী |
শনিবার মেদিনীপুরে কিষেণজির শরীরের যে ময়নাতদন্ত হয়েছে, তার প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাঁর দেহে ২০টিরও বেশি ক্ষত হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতা থেকে সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির চার সদস্যের এক প্রতিনিধি দল
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এসে জিএসআর পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের পরে শনিবার সেখানেই ময়নাতদন্ত হয়েছে কিষেণজির। আর এ দিন রাতেই পুলিশের কাছে সেই ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পৌঁছে গিয়েছে বলে মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর। ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে, কিষেণজির শরীরের ক্ষতগুলির অধিকাংশই বুলেটের। দেহ থেকে ৬টি বুলেট ও একটি স্প্লিন্টারও পাওয়া গিয়েছে। দেহে স্প্লিন্টারের আরও ৩-৪টি ক্ষতও চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রাথমিক রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, কিষেণজির ডান দিকের চোয়ালের হাড় পাওয়া যায়নি। সেখান থেকেই সব চেয়ে বেশি রক্তপাত হয়েছে। তাঁর ডান দিকের চোখের মণিরও হদিশ পাননি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। সূত্রের খবর, শরীরের মধ্যে থাকা একটি বুলেট ও স্প্লিন্টার ব্যালেস্টিক পরীক্ষার জন্য কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। ভিসেরা সংগ্রহ করে তা তুলে দেওয়া হয়েছে পুলিশের হাতে।
কিষেণজির ভাইঝি এ দিন সকালে কাকার দেহ শনাক্ত করার পরেই শুরু হয় ময়নাতদন্তের কাজ। ময়নাতদন্ত নিয়ে বিতর্ক এড়াতে পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সব রকম সতর্কতা অবলম্বন করার চেষ্টা হয়েছিল। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক দলে ছিলেন মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক স্টেট মেডিসিন বিভাগের প্রধান উদয় বসু রায়চৌধুরী এবং ওই বিভাগেরই অন্য দুই চিকিৎসক সোমনাথ দাস ও সমর সিংহ দাস। সকাল ১০টা নাগাদ তাঁরা ময়নাতদন্ত শুরু করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলে সেই কাজ। ময়নাতদন্ত শেষে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদলের এক সদস্য বলেন, “মৃত্যুর কারণ এবং আনুষঙ্গিক সব বিষয় খতিয়ে দেখা হয়েছে। তা করতে কিছুটা বেশি সময় লেগেছে।” জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশিকা মেনে পুরো প্রক্রিয়াটির ভিডিওগ্রাফিও করা হয়। ভিডিও-রেকর্ড কমিশনে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য। |
|
|
|
|
|