‘আহত’ সুচিত্রা ‘পালাল’ কী করে, মিলছে না সদুত্তর
খনও অধরা মাওবাদী নেত্রী সুচিত্রা মাহাতো।
শনিবারেও তার কোনও ‘খোঁজ’ পেল না যৌথ বাহিনী। বৃহস্পতিবার কয়েকশো জওয়ানের চোখ এড়িয়ে বুড়িশোলের জঙ্গল থেকে কী ভাবে ‘পালিয়ে গেল’ ওই মাওবাদী নেত্রী, রাজ্য ও জেলা পুলিশের একাধিক কর্তার সঙ্গে কথা বলে সেই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি।
তবে পুলিশ কর্তারা এই দাবিতে অনড় যে, সে দিন বুড়িশোলের জঙ্গলে সুচিত্রাই ছিল কিষেণজির সঙ্গে। তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, কিষেণজি ও সুচিত্রাকে বাদ দিয়ে ওই দলে যে আরও দু’জন ছিল সে ব্যাপারেও নিশ্চিত যৌথ বাহিনী। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গত তিন বছর ধরে কিষেণজির দেহরক্ষীর দায়িত্বে থাকা ওই দু’জনের নাম সিপাই ও হিরো। সিপাইয়ের বাড়ি ঝাড়খণ্ডে। তাদের সকলের কাছেই স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ছিল।
ওই দেহরক্ষীরা কিষেণজিকে ছেড়ে গেল কেন? এই প্রশ্নের কোনও বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা কিন্তু পুলিশ কর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। গোয়েন্দাদের অন্য একটি সূত্র জানাচ্ছে, দেহরক্ষীরা নেতাকে ছেড়ে পালিয়েছেন এমন কোনও ঘটনার কথা অতীতে শোনা যায়নি। বরং আত্মসমর্পণকারী এক মাওবাদীর কাছ উল্টো কথাই জানা গিয়েছে। অতীতের ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি জানিয়েছিলেন, দেহরক্ষীরা নেতাকে অরক্ষিত রেখে পালান না।
আরও প্রশ্ন, কিষেণজির সঙ্গে সে দিন সুচিত্রা সে দিন ছিলেন, এত নিখুঁত তথ্য পুলিশ পেল কী ভাবে?
পুলিশের সূত্র বলছে, জঙ্গলমহলের প্রায় সব গ্রামেই এক সময় যাঁরা ‘পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনগণের কমিটি’র সক্রিয় সমর্থক ছিলেন, নতুন সরকার আসার পরে তাঁদের একটা বড় অংশ উন্নয়নের পক্ষে চলে গিয়েছেন। সেই সুযোগটাই নিয়েছে যৌথ বাহিনী। গত ক’মাস ধরে অতি যত্নে তারা ধীরে ধীরে নিজেদের ‘সোর্স’ তৈরি করে নিয়েছে। এক পুলিশ কর্তা বলেন, “পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মাওবাদীরা নিজেদের সংগঠন বাড়ানোর জন্য গ্রামের মানুষের উপরে আরও বেশি করে দমন-পীড়ন শুরু করেছিল। এতে উল্টো ফলই হয়েছে।”
তা হলে কি সুচিত্রার খাসতালুকেও পুলিশ ‘সোর্স’ বানিয়ে ফেলেছিল?
পুলিশ কর্তাদের একাংশ সসারসরি এর জবাব না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, “মাওবাদীরা কি ওই গ্রামগুলিতে জোরজুলুম চালায়নি? প্রাণের ভয়ে কি তাদের খাওয়াতে-পরাতে হয়নি?”
তবে কি সর্ষের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে ছিল? জঙ্গলজীবনে কিষেণজি যাদের ‘বিশ্বাস’ করতেন, তারাই কি ওই মাওবাদী নেতাকে বুড়িশোলের জঙ্গলে ডেকে এনেছিলেন? খুব ঘনিষ্ঠ কারও কথাতেই কি কিষেণজি বুড়িশোলের জঙ্গলে ফাঁদে পা দিয়েছিলেন?
এ কথা উড়িয়ে দিয়ে পুলিশ কর্তাদের দাবি, কার্যত ‘দলছুট’ হয়েই বুড়িশোলের জঙ্গলে আশ্রয় খুঁজেছিলেন ওই মাওবাদী নেতা। এক পুলিশ কর্তা বলেন, “২০ নভেম্বর ঝাড়খণ্ড সীমানা পেরিয়ে এ রাজ্যে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই যৌথ বাহিনীর সামনে পড়ে যান কিষেণজি। পুলিশের হাত এড়িয়ে কোনও রকমে তিনি পালিয়ে গেলেও গুলিযুদ্ধে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর এক সঙ্গীর।” ঠিক তার দু’দিন পরে ২২ তারিখ নলবনির জঙ্গলে ফের কিষেণজির দলবলের হদিস পায় যৌথ বাহিনী। পুলিশ বলছে, সেখান থেকে তাড়া খেয়েই কিষেণজি তাঁর দুই দেহরক্ষী ও সুচিত্রাকে নিয়ে কুশবনির জঙ্গল পেরিয়ে বুড়িশোলে আশ্রয় নেন।
শুক্রবার সিআরপি-র ডিজি-র সামনে বৃহস্পতিবারের গুলিযুদ্ধের বিবরণ দেওয়ার সময়ে অভিযানে অংশগ্রহণকারী জওয়ানেরা জানিয়েছিলেন, বিকেল সওয়া ৪টে নাগাদ তাঁরা কিষেণজিকে প্রথমে দেখতে পান। যেখান থেকে দেখা যাচ্ছিল, সেখান থেকে নিশানা করা সম্ভব ছিল না। তাই তাঁরা হাঁটু গেড়ে আরও খানিকটা এগিয়ে আসেন। তখনই পায়ের চাপে শুকনো পাতার শব্দ শুনে কিষেণজি গুলি চালাতে শুরু করেন। তাঁরাও পাল্টা গুলি চালান ও গ্রেনেড চার্জ করেন।
ঘটনার দিনই পুলিশ কর্তারা জানিয়েছিলেন, মাত্র ২০ মিনিটের অভিযানে কিষেণজির মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে সুচিত্রা। সে কথা মেনে নিলে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা নাগাদ গুলিযুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ, তখনও সন্ধে হয়নি। পড়ন্ত সূর্যের আলোয় বেশ স্পষ্টই ছিল অনেকটা এলাকা। তার উপরে যেখানে কিষেণজির দেহটা পড়ে ছিল সেখানে জঙ্গল একদমই ঘন নয়। এর মধ্যে কয়েকশো জওয়ানের চোখ এড়িয়ে ‘জখম’ সুচিত্রা ‘পালাল’ কী ভাবে, এই প্রশ্নটাই বড় হয়ে উঠেছে। এই প্রশ্নের জবাবে পুলিশের একটি সূত্র আবার বলছে, সুচিত্রা সে দিন জখম হয়েছিলেন কি না, তা নিয়েই সংশয় রয়েছে।
পুলিশের কথা অনুযায়ী, কিষেণজির মৃতদেহের পাশে যে দু’টি একে ৪৭ পড়ে ছিল, তার একটি সুচিত্রার। পালানোর আগে সেটি ফেলে যায় সে। অর্থাৎ, একেবারে নিরস্ত্রই ছিল সুচিত্রা। তা সত্ত্বেও বাহিনী কেন তাকে ধরতে পারল না? তবে কি অন্য কোনও ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’ আছে কিষেণজির ওই দীর্ঘ দিনের সঙ্গী, প্রশ্ন তুলেছেন জঙ্গলমহলেরই কেউ কেউ।
পুলিশের আরও একটি বিবরণ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সে দিন সুচিত্রার পরনে ছিল গোলাপি সালোয়ার-কামিজ। কিন্তু জঙ্গল-যুদ্ধে অভিজ্ঞদের মতে, অনেক দূর দেখে চোখে পড়ার মতো রঙের পোশাক মাওবাদীরা পরতে পারেন না। এই যুক্তি ঠিক বলে ধরে নিলে, সে দিন সুচিত্রার ঘটনাস্থলে থাকার দাবি নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়। তবে পুলিশের পাল্টা বক্তব্য, মাওবাদীদের ওই দলটি সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত ছিল না। সেই কারণেই সাধারণ পোশাক পরে ছিল সুচিত্রা। যুদ্ধের পোশাকে ছিলেন না কিষেণজিও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.