একদা দারিদ্রসীমার নীচেই হয়তো ছিলেন, কিন্তু পরবর্তী ক্ষেত্রে চাকরি পেয়ে, বা ব্যবসা করে নিজেদের অবস্থার উন্নতি করেছেন। সাফল্যের গল্প। কিন্তু অনেকেই দরিদ্র থাকার সুবিধাটুকু এখনও আদায় করে আসছিলেন, অথচ সেটা তাঁর প্রাপ্য নয়। এর বিরুদ্ধেই লাগাতার অভিযানে নেমেছে ত্রিপুরার বামফ্রন্ট সরকার। সাফল্যও মিলছে। প্রায় সাত হাজার অবৈধ বিপিএল কার্ড সরকারের কাছে জমা পড়েছে। এ ছাড়াও অবৈধ কার্ড আটক করে সরকার প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করেছে।
দীর্ঘ দিন ধরেই বিপিএল কার্ড নিয়ে অভিযোগ জমা হচ্ছিল সরকারের কাছে। পঞ্চায়েত, পুরসভায়। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সঙ্গে অভিযোগ জানাচ্ছিল সাধারণ মানুষও। এরপরেই সরকার অবৈধ বিপিএল কার্ড উদ্ধারে নামে। তারা সংবাদ পত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে অবৈধ বিপিএল কার্ডধারীদের সতর্ক করে। অবিলন্বে ওই সব কার্ড জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়, কোনও সরকারি কর্মীর কাছে বিপিএল কার্ড থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপরেই বিপিএল কার্ড জমা পড়তে শুরু করে বলে খাদ্যসচিব জানান।
রাজ্যের খাদ্য অধিকর্তা কৃষ্ণদুলাল চৌধুরী বলেন: সরকারি চাকরি বা ব্যবসার ফলে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির জন্য রাজ্যের বিপিএলভুক্ত অনেকেই এখন দারিদ্র্যসীমার উপরে অবস্থান করছেন। কিন্তু এ ধরনের বহু ব্যক্তি এখনও বিপিএল কার্ডটি রেখে দিয়েছেন।” সরকারের কাছে ফেরত না দিয়ে সুবিধা ভোগ করছিলেন তাঁরা। কৃষ্ণদুলালবাবু বলেন, “রাজ্য বাধ্য হয়ে এঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করে।” সরকারি সূত্রের বক্তব্য, বেআইনি ভাবে বিপিএল কার্ড ব্যবহারকারীদের মধ্যে বহু সরকারি কর্মচারীও রয়েছেন। বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মচারীদের রেশনকার্ড পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারি চাকরি পাওয়া বা আর্থিক উন্নতির পর কত দিন অবৈধ ভাবে বিপিএল কার্ড ব্যবহার করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সেটা হিসেব করে তাঁর জরিমানা ধার্য করা হচ্ছে। খাদ্য অধিকর্তা জানান, “এ পর্যন্ত অবৈধ ভাবে বিপিএল কার্ড ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে জরিমানা বাবদ রাজ্য সরকার প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা আদায় করেছে।”
রাজ্যের হিসেব অনুসারে, এখনও পর্যন্ত গ্রাম ও শহর মিলিয়ে রাজ্যে মোট ৪ লক্ষ ৮ হাজার বিপিএল কার্ড বিলি করা হয়েছে। এই কার্ড বন্টন নিয়ে দুর্নীতি চলছে, এ অভিযোগ রাজ্য কংগ্রেসের বহু দিনের। কংগ্রেস নেতা রতনলাল নাথের অভিযোগ, দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী বহু যথার্থ দাবিদারকে এ রাজ্যে বিপিএল কার্ড দেওয়া হয়নি। খাদ্যসচিব বি কে রায় জানান, এ বছর কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ অনুসারে বিপিএল তালিকাভুক্তদের সংখ্যা ২ লক্ষ ৯৫ হাজারে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে বিপিএল তালিকা সমীক্ষার কাজও শুরু হয়েছে। নতুন করে রেশন কার্ড দেওয়াও শুরু হয়েছে এ রাজ্যে। এখনও পর্যন্ত ৮ হাজার ভুয়ো রেশন কার্ডও বাতিল করা হয়েছে। |