উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। তার আগে গোটা দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি চাকরিতে মুসলিমদের জন্য ৬ শতাংশ পদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে চলেছে মনমোহন সিংহ সরকার।
সংবিধান অনুযায়ী ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ নিষিদ্ধ। তাই ঘুরপথে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির জন্য বরাদ্দ ২৭ শতাংশ সংরক্ষণের আওতায় মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণের বন্দোবস্ত করতে উদ্যোগী হয়েছেন মনমোহন-সনিয়া। সে ক্ষেত্রে সামগ্রিক ভাবে মুসলিম সমাজকেই চিহ্নিত করা হতে পারে অনগ্রসর হিসাবে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন মন্ত্রক আলোচনার করে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট দিয়েছে। পরে ধাপে সরকার ও কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের মধ্যে আলোচনা পর্বও শেষ। কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই নোট পাঠাবে ক্যাবিনেট সচিবালয়ের কাছে।
অনগ্রসর শ্রেণির জন্য সংরক্ষণের আওতায় মুসলিমদের সংরক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা নতুন নয়। এক সময়ে অন্ধ্রপ্রদেশে রাজশেখর রেড্ডির কংগ্রেস সরকার এ ভাবেই মুসলিমদের সংরক্ষণ দিয়েছিল। একই পথে হেঁটেছিল তামিলনাড়ু, কেরল ও কর্নাটকও। পরে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের আগে বাম সরকারও এই সূত্র অনুসরণ করেই শিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে মুসলিমদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের ঘোষণা করে। তবে কংগ্রেসের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, অন্ধ্রপ্রদেশে মুসলিম সংরক্ষণের পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি উঠেছিল সুপ্রিম কোর্টে। সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছিল, গোটা একটা সম্প্রদায়ই অনগ্রসর, এই যুক্তি মানা যায় না। কেন্দ্র চূড়ান্ত নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সেই বিষয়টিও মাথায় রাখবে।
সন্দেহ নেই কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের নেপথ্যে বড়সড় রাজনীতি রয়েছে। পিছিয়ে পড়া মুসলিমদের জন্য সরকারি চাকরি ও শিক্ষায় সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি গত লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের ইস্তাহারেই দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা পালনের জন্য কেন্দ্র যে সময় বেছে নিচ্ছে, তা তাৎপর্যপূর্ণ। ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতারা স্বীকারও করে নিচ্ছেন, উত্তরপ্রদেশ ভোটে এই সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চান তাঁরা। ২০০১ সালের জনগণনা অনুযায়ী উত্তরপ্রদেশে ১৮ শতাংশ মুসলিম। কংগ্রেস নেতাদের কথায় উত্তরপ্রদেশের প্রকৃত মুসলিম জনসংখ্যা এখন কমবেশি ২৪ শতাংশ। ফলে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ উত্তরপ্রদেশের মুসলিম সমাজে সাড়া ফেললে বিধানসভা ভোটে তা কংগ্রেসের পক্ষে আসতে পারে। এ ব্যাপারে প্রশ্নের জবাবে উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা ও এআইসিসি মুখপাত্র রশিদ অলভি বলেন, সামাজিক ও আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়ার কারণে মুসলিমদের সংরক্ষণ ন্যায্য। তবে সেই সুযোগ নিতে গেলে মুসলিমদেরও এ বার সচেতন হতে হবে।
গত লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশে ২১টি আসন জিতেছিল কংগ্রেস। সে ক্ষেত্রে মুসলিম ভোট নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়েছিল বলে মনে করা হয়। বিশ্লেষকদের মত, মুলায়ম সিংহ প্রাক্তন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংহের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধায় সে বার মুসলিমরা সপা-কে ‘উচিত শিক্ষা’ দিয়েছিলেন কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে।
মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণের পথে হেঁটে এ বার সেই মুলায়মকেই ফের প্যাঁচে ফেলতে চাইছে কংগ্রেস। মূলত যাদব ও মুসলিমরাই মুলায়মের জনভিত্তি। যাদবরা অনগ্রসর শ্রেণির আওতায় সংরক্ষণের সুবিধা পেয়ে থাকে। কিন্তু তাদের ২৭ শতাংশ সংরক্ষণ থেকে মুসলিমদের জন্য ৬ শতাংশ বরাদ্দ করলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। সে ক্ষেত্রে মুলায়ম-বিরোধিতা না করলে যাদবরা চটবেন, আবার বিরোধিতা করলে মুসলিমরা অসন্তুষ্ট হবেন। উত্তরপ্রদেশে অবশ্য মায়াবতী-মুলায়ম উভয়েই এখন মুসলিম সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছেন। তার পরেও কংগ্রেস মনে করছে, কেন্দ্র শেষ পর্যন্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে তা কংগ্রেসের অনুকূলেই যাবে। |