খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি
রাহুলকে কটাক্ষ মায়ার, পাল্টা নামছে কংগ্রেসও
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে রাহুল গাঁধীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে উত্তরপ্রদেশে ভোটের মুখে কংগ্রেসের উপরে চাপ বাড়ালেন মায়াবতী। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য তিনি কেন্দ্রকে চিঠি লিখবেন বলেও জানিয়েছেন। বিরোধীদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে বিষয়টি নিয়ে এ বার পাল্টা প্রচারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস।
লখনউতে আজ এক সাংবাদিক বৈঠকে মায়াবতী বলেন, “খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির অনুমোদন দিয়ে রাহুল গাঁধী তাঁর বিদেশের বন্ধুদেরই সুবিধা করতে চেয়েছেন!” উত্তরপ্রদেশে তাঁর প্রধান ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র প্রতি মায়াবতীর কটাক্ষ, “জীবনের বেশির ভাগ সময়টা তিনি বিদেশে কাটিয়েছেন। তাঁর বিদেশের বন্ধু সংস্থাগুলির সুবিধা করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে দেশের কোনও মঙ্গল হবে না। রাহুল ছোট দোকানগুলি বন্ধ করার তোড়জোর করছেন!”
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নিতে কেন্দ্র অনুমোদন দেওয়ার পর থেকে বাম-বিজেপি-সহ বিরোধীরা তো বটেই, সরকারের শরিক তৃণমূল কংগ্রেসও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। বাম ও বিজেপি রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের কর্মসূচিও ঘোষণা করে দিয়েছে। মন্ত্রিসভার যে বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেখান থেকে প্রতিবাদে ‘ওয়াক আউট’ করেন তৃণমূলের দীনেশ ত্রিবেদী। বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী আবার ঘোষণা করেছেন, কোনও বিদেশি সংস্থা এ দেশে ওই ব্যবসা করতে এলে তাদের দোকানে তিনি আগুন লাগিয়ে দেবেন! তার মধ্যেই মায়াবতী আজ যে ভাবে রাহুলকে আক্রমণ করেছেন, তাতে আরও চাপে পড়ে গেল কংগ্রেস। রাহুল অবশ্য আজ এর পাল্টা জবাব দেননি।
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে বিভিন্ন দল যে এ ধরনের আক্রমণে নামবে, কংগ্রেস শিবিরে তার আশঙ্কা ছিলই। সে কারণে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিলেও গত কাল রাতে কংগ্রেসের কোর গ্রুপের বৈঠকের আগে দল সে ভাবে খোলাখুলি এর সমর্থনে সওয়াল করেনি। মন্ত্রিসভার বৈঠকেও জয়রাম রমেশ, এ কে অ্যান্টনি, বীরভদ্র সিংহের মতো একাধিক সদস্য এর বিরোধিতা করেছেন। দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধির চাপে কংগ্রেস নেতৃত্ব যখন জর্জরিত, তখন এ ধরনের সিদ্ধান্ত ‘ব্যুমেরাং’ হতে পারে বলে দলেরই অনেকে মনে করছেন। জয়রাম তো বলেই দিয়েছেন, “খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির জন্য এটা উপযুক্ত সময় নয়।” তবে সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বে কোর গ্রুপের বৈঠকে স্থির হয়েছে, সরকারের এই সিদ্ধান্তের সুফল নিয়ে পাল্টা প্রচারে নামবে কংগ্রেস। দলের বক্তব্য, এতে এক দিকে যেমন মানুষের মনে বিভ্রান্তি কাটানো যাবে, তেমনই বিরোধীদের প্রচারের মোকাবিলাও করা সম্ভব হবে।
কংগ্রেস হাইকম্যান্ড মনে করে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি পুঁজিকে টানতে হলে এ ধরনের বড় সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “ইওরোপের মন্দার প্রভাব গোটা বিশ্বে পড়ছে। যার ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে খেসারত দিতে হচ্ছে।” অর্থমন্ত্রীর মতে, গত ছ’মাসে ছয় থেকে আটশো কোটি ডলার বিদেশি পুঁজি হাতছাড়া হয়েছে। ফলে বিনিয়োগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বিদেশি পুঁজিকে স্বাগত জানানো দরকার। আর খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্তের পরে শেয়ার বাজারে অধোগতি ঠেকানোও সম্ভব হয়েছে।
কংগ্রেস বুঝতে পারছে, বিরোধীরা বিষয়টি নিয়ে যে ভাবে প্রচারে নেমেছেন, সুকৌশলে তার জবাব দেওয়া দরকার। কারণ, বিরোধীরা বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করে উত্তরপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও কৃষকদের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছে। কংগ্রেস মনে করছে, একাধিক ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় সায় দিলে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং কৃষকদের ক্ষতি হবে বলে প্রচার করে তাদের ‘আম-আদমি’ ভোটব্যাঙ্ককেই আঘাত করছে বিরোধীরা। তাই তারা পাল্টা প্রচারের কৌশল নিচ্ছে। তা ছাড়া কংগ্রেস জানে, বিজেপি বিরোধিতা করলেও তাদের নিজেদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে যখন রাজ্যগুলির মত চাওয়া হয়, তখন গুজরাত, কর্নাটকের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির পাশাপাশি বিজেপি ও শরিক অকালি দল শাসিত পঞ্জাবও একে সমর্থন করেছিল। বিজেপির অন্দরের এই অবস্থাকেই কাজে লাগাতে চাইছে কংগ্রেস। প্রধান বিরোধী দলকে সামাল দেওয়ার পথ পেলেও এতগুলি বিরোধী দল ও নিজেদের সরকারের শরিকদের কী ভাবে মোকাবিলা করা যাবে, তা-ই এখন কংগ্রেসের চিন্তা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.