আন্দোলনে বিঘ্ন পরিষেবায়
জুনিয়র চিকিৎসকদের নামে ৩টি মামলা করল পুলিশ
ফাঁড়ি ঘেরাও, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, এলাকায় বাসিন্দাদের বাড়িতে হামলার অভিযোগে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসক এবং ছাত্রদের একাংশের বিরুদ্ধে একযোগে ৩টি মামলা দায়ের করল পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে মেডিক্যাল কলেজের পুলিশ ক্যাম্পে একদল জুনিয়র চিকিৎসক ও ছাত্র পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেছে বলে পুলিশ একটি মামলা করেছে। পাশাপাশি, এক প্রসূতির পরিবারের আত্মীয়-স্বজন তথা নকশালবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির এক সদস্যা-সহ তাঁর স্বামী, আত্মীয়দের উপর হামলার অভিযোগে আরেকটি মামলা রুজু হয়েছে। ওই রাতে মেডিক্যাল কলেজ লাগোয়া এলাকায় বাড়িতে ঢুকে হামলার অভিযোগে তৃতীয় মামলাটি হয়েছে। শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক সৌরভ পাহাড়ি বলেন, “পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, সরকারি সম্পত্তি এ ভাবে নষ্ট করা ঠিক হয়নি। ঘটনার সময় নিজে উপস্থিত ছিলাম। জেলাশাসককে বিস্তারিত জানিয়েছি।” সুপার শৈবাল গুপ্ত বলেছেন, “বাসিন্দারা যেমন অভিযোগ তুলেছেন, তেমনই ছাত্রদের হস্টেলে ভাঙচুরের পাল্টা অভিযোগও রয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে জরুরি বিভাগেও।”
ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
কলেজের অধ্যক্ষ অনুপ কুমার রায় জানান, জুনিয়র চিকিৎসকেরা উত্তেজিত ছিল। তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা হয়েছে। তবে সব সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি বলে অধ্যক্ষ স্বীকার করেন। তিনি বলেন, “ক্যম্পাসে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। জুনিয়র চিকিৎসারা নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে কাজে যোগ না দিলেও পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করা হচ্ছে।” বস্তুত, বুধবার মেডিক্যাল কলেজের পরিস্থিতি ছিল থমথমে। আতঙ্ক ছড়িয়েছে হাসপাতালের রোগী এবং তাঁদের পরিবারের লোকদের মধ্যে। কয়েকটি ওষুধের দোকানে ভাঙচুরের অভিযোগে বুধবার সকাল থেকে এলাকায় দোকানপাট বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। ওষুধের দোকান, খাবারের দোকান বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন রোগীর লোকজন। নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে জুনিয়র চিকিৎসকরা কাজে যোগ না দেওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে চিকিৎসা পরিষেবা। জুনিয়র চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে দোষীদের শাস্তির দাবিতে ব্যবসায়ী, বাসিন্দারা দফায় দফায় রাস্তা অবরোধ করেন। পরে শিলিগুড়ি ডিএসপি প্রদীপ পাল ঘটনা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। এলাকায় পুলিশ এবং র্যাফ মোতায়েন করা হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের এলাকা মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকার বেলা পৌনে ১১ টা নাগাদ হাসপাতালে গেলে বাসিন্দারা তাঁর কাছে অভিযোগ জানান। বিধায়ককে নিয়ে তাঁরা হাসপাতাল সুপার এবং অধ্যক্ষকের কাছে জুনিয়র চিকিৎসক এবং ছাত্রদের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। রোগীর পরিবারের সঙ্গে গোলমাল নিয়ে জুনিয়র চিকিৎসক এবং ছাত্রদের এলাকার তাদের উপর হামলা চালানোয় ক্ষোভে ফেটে পড়েন। মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে থাকা এলাকার একাংশে বিদ্যুৎ সরবরাহের একটি ‘মেন সুইচ’ও ছাত্ররা বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ। হামলায় ২ জন বাসিন্দা আশঙ্কাজনক অবস্থায় শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে ভর্তি রয়েছেন। শঙ্করবাবু বলেন, “হাসপাতালে গোলমালে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। চিকিৎসা পরিষেবা যাতে বন্ধ না থাকে কর্তৃপক্ষকে তা বলা হয়েছে। পুলিশকেও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে অবনতি না হয় দেখতে হবে। বাসিন্দাদেরও কাছে আবেদন জানিয়েছি দোকানপাট খুলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে।” জেলা পুলিশ সুপার দেবেন্দ্র প্রকাশ সিংহ বলেন, “ঘটনার সঙ্গে কারা যুক্ত ছিল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মঙ্গলবার প্রসূতি বিভাগে সদ্যোজাতকে দেখতে যেতে চাওয়া নিয়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে রোগীর পরিবারের আত্মীয়দের গোলমাল হয়। জুনিয়র চিকিৎসকরা নিগৃহীত হন। পাল্টা ভাঙচুর হয় পুলিশের গাড়ি। হামলা চলে এলাকার দোকান, বাড়িতেও। ঘটনার জেরে পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটায় বিপাকে বহু রোগী-রোগিণী। অ্যাপেনডিক্সের রোগে ভর্তি জাহেদা বিবি। তাঁর স্বামী ফৈজুর রহমান জানান, সকাল থেকে ওয়ার্ডে চিকিৎসক রোগীদের দেখতে যাননি। তিনি বলেন, “জুনিয়র চিকিৎসকরা কাজে না যাওয়ায় সমস্যা হয়েছে বলে শুনেছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.