|
|
|
|
বসিরহাট হাসপাতাল |
পরিকাঠামো নিয়ে স্বাস্থ্য-প্রতিনিধি দলের প্রশ্নে নাজেহাল কর্তৃপক্ষ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বসিরহাট |
প্রশ্ন: রোগীদের শয্যায় চাদর নেই কেন?
উত্তর: কম পাচ্ছি স্যার। যা আসছে তাও চুরি হয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: চোর ধরতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি? বেডের নীচে গামলা নেই কেন?
উত্তর: সব নিয়ে চলে যাচ্ছে স্যার।
প্রশ্ন: ওয়ার্ডের অবস্থা এত অগোছাল কেন? কোন রোগীর অবস্থা কতটা খারাপ তা লিখে রেখে সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে কি? জরুরি ওষুধপত্র আছে তো? হাসপাতালের রান্না ঘরের পাশে এত গাড়ি রাখা কেন?
বুধবার হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা স্বাস্থ্য দফতরের দুই প্রতিনিধির এমন সব প্রশ্নের মুখে পড়ে কার্যত নাজেহাল হতে হল উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। |
|
হাসপাতালের রান্নাঘরে প্রতিনিধিদল। নিজস্ব চিত্র। |
এ দিন রাজ্যের স্বাস্থ্যভবন থেকে ডেপুটি সেক্রেটারি অফ হেলথ্ অজয় ভট্টাচার্য এবং চিকিৎসক সত্যজিত চক্রবর্তীকে নিয়ে দুই সদস্যের এক প্রতিনিধি দল বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালের পরিকাঠামো দেখতে এসেছিলেন। সকাল ৯টা নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছে প্রথমে তাঁরা চলে যান বহির্বিভাগে। সেখানে তখন মাত্র তিন জন চিকিৎসক রোগী দেখছিলেন। কেন এখনও সব চিকিৎসক এসে পৌঁছননি সে ব্যাপারে জানতে চান হাসপাতালের সুপার রঞ্জিত দাসের কাছে। সময়মতো কোনও চিকিৎসক হাসপাতালে না এলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে তাঁরা চলে যান হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডে। এরই মধ্যে হাসপাতালে কি কি সুবিধা আছে আর কি নেই সে বিষয়ে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে খোঁজখবর নেন। মহিলাদের ওয়ার্ডে ঢুকে সেখানে কয়েকটি বিড়ালকে ঘুরতে দেখে ওই বিভাগের নার্স ও আয়াদের ডেকে দুই প্রতিনিধি বলেন, “এটা চলবে না। বিড়াল দেখলেই মারতে হবে।” রোগীদের জন্য বরাদ্দ খাবার দেখে প্রশ্ন করেন, “সরকার থেকে তো এখন রোগীদের ভাল খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও মাছের সাইজ এত ছোট কেন?” প্রশ্ন তোলেন খাবারের মান নিয়েও। রোগীদের ড্রেসিং করার ঘরে ঢুকেই নার্স অনিতা পালকে দুই প্রতিনিধি জিজ্ঞাসা করেন, ঘরে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ রাখার জন্য কোনও বালতি নেই কেন? আলমারি খুলে দেখেন ড্রেসিংয়ের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঠিক আছে কি না। গোটা বিভাগটি ঘুরে পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা নিয়ে স্পষ্টতই অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ওই বিভাগের সংশ্লিষ্ট নার্স পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা নিয়ে প্রয়োজনীয় কর্মী না থাকার কথা বললেও তা সন্তুষ্ট করতে পারেনি দুই প্রতিনিধিকে।
এক্স-রে বিভাগে এক্স-রে মেশিন তিন মাসের বেশি খারাপ থাকা সত্ত্বেও তা সারানোর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেন প্রতিনিধিরা। অবাক হয়ে আল্ট্রা সাউন্ড বিভাগের চিকিৎসক মৃত্যুঞ্জয় মল্লিকের কাছে তাঁরা জানতে চান কেন ঘরের মধ্যে বা বাইরে কোথাও ‘এখানে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করা হয় না’ বিজ্ঞপ্তি নেই। কেনই বা সেখানে পিএনডিটি সার্টিফিকেট টাঙানো হয়নি। যদিও এ সব প্রশ্নের কোনও স্পষ্ট উত্তর তাঁরা পাননি। এরই মধ্যে ফিজিও থেরাপিস্ট মানস ঘোষ দুই প্রতিনিধিকে আল্ট্রা সাউন্ড এবং শর্ট ওয়েভ ডায়া থার্মি মেশিনের অভাবের কথা জানিয়ে দেন। জরুরি বিভাগের আয়তন বাড়িয়ে সেখানে কয়েকটি শয্যার ব্যবস্থা করে রোগীদের জন্য ‘অবজারভেশন’-এর ব্যবস্থা করা যায় কি না সে ব্যাপারে চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করেন তাঁরা।
রোগীদের খাবার যেখানে রান্না করা হয় সেই রান্না ঘরের কাছে গিয়ে হঠাৎই থমকে যান প্রতিনিধিরা। রান্নাঘরের সামনে কয়েকটি মোটর সাইকেল এবং কয়েকটি সাইকেল দেখে ক্ষোভের সঙ্গেই জিজ্ঞাসা করেন এ সব এখানে কেন? যদিও প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য ধারে কাছে কাউকেই দেখা যায়নি।
এ দিন স্বাস্থ্য দফতরের দুই প্রতিনিধির কাছে নিজেদের অভাব-অভিযোগের কথা জানান রোগীরা। কেউ অভিযোগ করেন, হাসপাতালে ওষুধ থাকলেও তাঁদের বাইরে থেকে তা কিনে আনতে বলা হয়। কারও অভিযোগ, চিকিৎসকদের একাংশ তাঁদের ভুল বুঝিয়ে নার্সিংহোমে পাঠিয়ে দেন। এরই মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে অস্থায়ী কর্মী হিসাবে কাজ করা কয়েকজন তাঁদের স্থায়ী কর্মী হিসাবে নিয়োগের জন্য ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন।
তবে হাসপাতালের পরিকাঠামোগত নানা অভাব-অভিযোগের পাশাপাশি তার উন্নতিতে তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরকেও যে উদ্যোগী হতে হবে তা জানিয়ে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে গোটা হাসপাতাল পরিদর্শন করে প্রতিনিধি দলের একজন অজয়বাবু সাংবাদিকদের বলেন, “হাসপাতালের পরিকাঠামোর উন্নতির জন্যই আমাদের এখানে আসা। এ ভাবেই রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের পরিকাঠামোর হাল খতিয়ে দেখবে স্বাস্থ্য দফতর। এবং সে সব খতিয়ে দেখে কি কি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তা নিয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবে স্বাস্থ্য দফতর।” হাসপাতালের সুপার রঞ্জিত দাস বলেন, “হাসপাতালের পরিকাঠামোর উন্নতিতে আমাদের কি কি ব্যবস্থা নিতে হবে সে ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের ওই প্রতিনিধিদল বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁদের পরামর্শ মেনেই সে সব কাজ করা হবে।” |
|
|
|
|
|