|
|
|
|
হাল ফেরাতে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত |
অবহেলায় ‘নরক’ বাস টার্মিনাস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়নাগুড়ি |
তিনতলা বাড়ির দোতলায় সারি দিয়ে তৈরি স্টলের সামনে ডাই করা পচা আবর্জনা। ইতিউতি ছড়িয়ে প্লাস্টিকের গ্লাস। গাঁজার কল্কে। কার্নিশ বেয়ে চুইয়ে পড়া জলে থিকথিকে মেঝেতে কালচে শ্যাওলার পুরু আস্তরণ। কতদিন ঝাট পড়ে না কে জানে! ইতিউতি ছড়িয়ে রয়েছে গরু-ছাগলের বিষ্ঠা। সিড়ি বেয়ে গোবাদি পশু অবাধে চড়ে বেড়ায় দোতলার বন্ধ স্টলের বারান্দায়। ঝাপহীন কয়েকটি স্টলে দিব্যি সারমেয় বাহিনী নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে। পরিত্যক্ত ভুতুড়ে আবাসন নয়। ময়নাগুড়ি বাস টার্মিনাসের ছবি। শহরের যানজট সমস্যা সমাধানের জন্য জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের উদ্যোগে নতুন বাজার এলাকায় ২০০৫ সালে ওই বাস টার্মিনাস তৈরি হয়। ঘটা করে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য টার্মিনাসটির উদ্বোধন করেন। কিন্তু তৈরির পরে মাত্র কয়েকদিন সেখানে বাস দাঁড়ায়। ক্রমশ সেটি পরিত্যক্ত বাড়ির চেহারা নেয়। দীর্ঘ টালবাহানার পরে অবশেষে ২ জুন ফের বাস দাঁড়াতে শুরু করে। কিন্তু চালু হলেও রক্ষণাবেক্ষণের কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নেই পরিস্রুত পানীয় জল। নিয়মিত সাফাইয়ের ব্যবস্থা। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, আবর্জনায় ভরা নোংরা পরিবেশের জন্য দোতলায় কেউ যেতে চায় না। ওই সুযোগে কয়েক মাস থেকে ফাঁকা স্টলগুলিতে দুষ্কৃতীরা আস্তানা গেড়েছে। সন্ধ্যার পরে সেখানে নেশার আসর বসে। প্লাস্টিকের গ্লাসে চলে মদ বিক্রি। মেঝেয় পড়ে থাকা কল্কে দেখিয়ে এক যাত্রী বলেন, “শুধু মদ নয়। এখানে চুটিয়ে গাঁজার ঠেক চলছে।”
স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, সম্প্রতি পুলিশ নতুন বাজার এলাকার বেআইনি মদের ঠেক উচ্ছেদ করে। ওই সময় পাশে টার্মিনাসের নিচতলায় তল্লাশি চলে। ঘটনার পরে দুষ্কৃতীরা উপর তলায় জায়গা খুঁজে নেয়। ময়নাগুড়ি থানায় আইসি বিশ্বনাথ হালদার বলেন, “রাতে মোবাইল ভ্যান থেকে টার্মিনাস এলাকায় নজরদারি চালানো হয়। নিচতলায় নেশার কারবার বন্ধ হয়েছে। উপর তলায় ওই কারবার বন্ধের জন্য অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।” এ দিকে টার্মিনাসের পরিবেশ ও পরিষেবার বেহাল দশা নিয়ে নিত্যযাত্রী ও ব্যবসায়ী মহলে ক্ষোভ বেড়ে চললেও জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের কর্তারা তা জানেন না বলে দাবি করেছেন। সভাধিপতি দীপ্তি দত্ত বলেন, “ওই পরিস্থিতির কথা কেউ জানায়নি। এসব চলতে পারে না। দ্রুত খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।” জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের ওই প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব। ময়নাগুড়ি ব্লক কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ঘোষাল বলেন, “দীর্ঘদিন থেকে ওই সমস্যা চলছে। সভাধিপতির না-জানার কথা নয়। কয়েক মাস আগে টার্মিনাসের উপর তলায় সভা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নোংরা পরিবেশ দেখে মন সায় দেয়নি। ফিরে এসেছি।” প্রশ্ন উঠেছে টার্মিনাসে পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকবে না কেন! ক্ষুব্ধ ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য মিতু চক্রবর্তী বলেন, “টার্মিনাস পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব জেলা পরিষদের। ওঁরা কাজ করে না। তাই উপর তলার বেহাল দশা হয়েছে। নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা। শৌচাগারও বেহাল। সভাধিপতির কাছে ওই বিষয়ে খবর না-থাকলে কিছু করার নেই। আমরা টার্মিনাসের হাল ফেরানোর দাবিতে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” |
|
|
|
|
|