|
|
|
|
বিধানসভায় ব্যবধান বাড়ছে শাসক জোটে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিধানসভার অন্দরে ‘দূরত্ব’ বাড়ছে শাসক জোটের দুই শরিক তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে। সরকার পরিচালনার পাশাপাশি বিধানসভার কর্মকাণ্ডেও ‘গুরুত্ব’ না-পেয়ে কংগ্রেস বিধায়কদের ক্ষোভ বাড়ছে। সামাল দিতে বেগ পেতে হচ্ছে তৃণমূলের পরিষদীয় নেতৃত্বকে।
প্রশ্নোত্তর-পর্বে অন্য বিধায়কদের অতিরিক্ত প্রশ্নের সুযোগ দেওয়া হলেও তাঁদের দল পাচ্ছে না এই অভিযোগে বুধবার বিধানসভায় নেপাল মাহাতো এবং কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর নেতৃত্বে কংগ্রেস বিধায়কেরা হইচই শুরু করেন। তার পরেই স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস বিধায়কদের অতিরিক্ত প্রশ্ন করার সুযোগ দেন।
অধিবেশনকক্ষের সমস্যা এ দিনের মতো মিটলেও ‘দূরত্ব’ ঘোচেনি। পরিষদীয় দফতরের ব্যয়বরাদ্দ সংবলিত পুস্তিকায় দফতরের প্রতিমন্ত্রী মনোজ চক্রবর্তীর নামই ছিল না। পরে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে ছাপা হয়ে-যাওয়া দু’হাজার পুস্তিকা বাতিল করা হয়। কংগ্রেস শিবিরের অভিযোগ: মনোজবাবু-সহ দলীয় মন্ত্রী-বিধায়কদের একাংশ ‘গুরুত্ব’ না-পাওয়ার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বলে সচেতন ভাবেই তাঁদের বিধানসভার কাজকর্মে এড়িয়ে চলা হচ্ছে। কাল, শুক্রবার বিধানসভা প্রাঙ্গণে বনমহোৎসব অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আমন্ত্রণপত্রে তাদের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবের নাম না-থাকায় কংগ্রেস শিবির ক্ষুব্ধ হয়। অনুষ্ঠানটি অবশ্য পিছিয়ে গিয়েছে। ‘গুরুত্বহীনতার’ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য অধিবেশনের মাঝপথেই ২৩ অগস্ট কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সোহরাবের কথায়, “আমি এবং আমাদের দলের বর্ষীয়ান বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় এ দিন পার্থবাবুর কাছে গিয়েছিলাম। পরিষদীয় দফতরের বিষয়টি আলোচনায় মিটে গিয়েছে। ২৩ তারিখের বৈঠকে সব বিষয়েই আলোচনা হবে।” বস্তুত কংগ্রেস বিধায়কদের একাংশের বক্তব্য, ‘বিমাতৃসুলভ’ আচরণ বন্ধ করতে সরকার তথা প্রধান শাসকদল তৃণমূলের কাছে কোনও ‘কড়া বার্তা’ পৌঁছে দেওয়ার জন্যই ওই বৈঠকে তাঁরা সরব হতে চান।
অন্য দিকে পরিষদীয় মন্ত্রী তথা সরকারপক্ষের দলনেতা পার্থবাবু জানিয়েছেন, পরিষদীয় বিভাগের বিষয়টিতে পুরোদস্তুর ‘ভুল’ হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সচিবকে ডেকে ‘ভুল’ শোধরাতে বলা হয়েছে। তবে পুস্তিকাটি পূর্ণমন্ত্রীর হাতে আসার আগে প্রতিমন্ত্রীর কাছে চলে যাওয়ায় ‘বিস্মিত’ তৃণমূল শিবির! আর এতেই সরকারে ও বিধানসভায় দু’পক্ষের ‘বিভাজনে’র ইঙ্গিত স্পষ্ট।
এ দিন সভাকক্ষে কংগ্রেসের ক্ষোভের সূত্রপাত আরএসপি-র নর্মদাচন্দ্র রায়ের এক প্রশ্নকে ঘিরে। নর্মদাবাবু কারামন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, রাজ্যের সংশোধনাগারে মোট কত জন রাজনৈতিক বন্দি রয়েছেন। কারামন্ত্রী জানান, মোট ৭৭ জন। এঁদের ১৫ জনের বিরুদ্ধে মাওবাদী কার্যকলাপে জড়িত থাকা, এমনকী খুনেরও অভিযোগ আছে। এর পরে আরএসপি-র সুভাষ নস্কর অতিরিক্ত প্রশ্নে জানতে চান, খুনের মামলায় অভিযুক্তকে ‘রাজনৈতিক বন্দি’র মর্যাদা কী ভাবে দেওয়া হচ্ছে? কারমন্ত্রী বলেন, কে রাজনৈতিক বন্দি, তা আদালত ঠিক করে। তখনই কংগ্রেসের কৃষ্ণেন্দুবাবু কিছু বলতে গেলে স্পিকার আর এক জনকে অতিরিক্ত প্রশ্নের সুযোগ দেন। তাতেই কংগ্রেস বিধায়কেরা হইচই শুরু করেন। পরে স্পিকার কৃষ্ণেন্দুবাবুকে অনুমতি দিলে তিনি বলেন, “বামফ্রন্ট সরকার আমার বিরুদ্ধে খুনের মামলা-সহ ৩৬টা মামলা করেছে। ওরা এমন কত জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, মন্ত্রীর কাছে জানতে চাইছি।” মন্ত্রী অবশ্য জানান, তাঁর কাছে এ ব্যাপারে কোনও তথ্য নেই। |
|
|
|
|
|