মন্ত্রী-ডিভিসি তরজার মধ্যেই বন্যা ঘোরালো
তিবর্ষণ ও প্লাবনে রাজ্যের অসংখ্য মানুষ দিশাহারা। সেই সময়েই বন্যার কারণ নিয়ে রাজ্য সরকার এবং ডিভিসি-র মধ্যে শুরু হয়েছে চাপান-উতোর।
বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপারে ডিভিসি-ই রাজ্যের কাছে সব চেয়ে উদ্বেগের বিষয় বলে বুধবার বিধানসভায় মন্তব্য করেছেন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। তৃণমূল বিধায়ক কাশীনাথ মিশ্রের আনা একটি দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাবের জবাব দিতে গিয়ে সেচমন্ত্রী বলেন, “মূলত ডিভিসি-র ছাড়া জলেই রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্রতি বছর বানভাসি হয়।” কী ভাবে সেটা হয়, তারও ব্যাখ্যা দেন মন্ত্রী। তিনি জানান, ডিভিসি-র জলাধারের জলধারণের নির্দিষ্ট ক্ষমতা আছে। তা বাড়ানো যায় না। জলের চাপ সেই ক্ষমতা অতিক্রম করলেই তা বার করে দিতে হয়। ডিভিসি তখন জল ছাড়তে শুরু করে। এতে নিম্ন দামোদর উপত্যকায় নদীগুলিতে জলস্ফীতি দেখা দেয় এবং সেই জলেই বন্যা হয় বেশ কয়েকটি অঞ্চলে।
সেচমন্ত্রীর এই বক্তব্যে ডিভিসি-র ইঞ্জিনিয়ারেরা রীতিমতো হতভম্ব। এক প্রবীণ ইঞ্জিনিয়ারের বক্তব্য, ডিভিসি-র জন্মের আগেও দামোদরের বন্যায় বারে বারে ক্ষতিগ্রস্ত হত দক্ষিণবঙ্গ। শেষ পর্যন্ত গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে ভয়ঙ্কর বন্যায় গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে রেললাইন, সবই ভেসে গিয়েছিল। সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল কলকাতা। তার পরেই দামোদরকে নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করে দেওয়ার জন্য আমেরিকার টেনেসি ভ্যালি কর্পোরেশনের প্রযুক্তিবিদ ডব্লিউ এল ভুরদুইনকে ডেকে আনা হয়। একই ধরনের পরিকল্পনা করেছিলেন বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহাও। ওই ইঞ্জিনিয়ারের মতে, “ডিভিসি-কে দোষারোপ না-করে রাজ্যের উচিত, দুর্গাপুরের নীচের নদীগুলির জলবহন ক্ষমতা বাড়ানো। তা হলেই ডিভিসি জল ছাড়লে আর বন্যা হবে না।”
মন্ত্রী এবং ডিভিসি-র এই তরজার মধ্যেই বন্যা পরিস্থিতি ফের ঘোরালো হয়ে উঠতে চলেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বিচ্ছিন্ন ভাবে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। তাদের পূর্বাভাস, হিমালয় সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে টানা ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বুধবার বেলা ১১টা পরে ডিভিসি থেকে ৮৫ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া শুরু হয় বলে জানান রাজ্যের সেচসচিব অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে প্রায় ৯০ হাজার, কংসাবতী ব্যারাজ থেকে ১৫ হাজার এবং তিলপাড়া ব্যারাজ থেকে ৩৬০০ কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়েছে। সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আবার বন্যার ভ্রূকুটি।
রাজ্যের সেচ দফতর সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে ১৪টি জেলা, ৭৮টি পুরসভা এবং ২৩৭টি ব্লকের প্রায় ২৮ লক্ষ মানুষ বন্যার কবলে পড়েছেন। সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে। কারণ, ইতিমধ্যে রাজ্যের বেশ কয়েকটি নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। আমতায় দামোদর, আমগাছিয়ায় কেলেঘাই, পূর্ব মেদিনীপুরের বড়িশায় চণ্ডীয়া, রানিচকে রূপনারায়ণ, গাইঘাটায় যমুনা, স্বরূপগঞ্জে জলঙ্গি এবং দোমহনিতে তিস্তার জলস্তর বিপদসীমার উপরে উঠে গিয়েছে।
এই পরিস্থিতির জন্য ডিভিসি-র জল ছাড়ার পাশাপাশি প্রবল বর্ষণ এবং ভরা কোটালকেও দায়ী করেছেন সেচমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এ বার ডিভিসি-র সঙ্গে কথা বলে আমরা নিয়ন্ত্রিত ভাবে জল ছাড়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। ফলে কিছুটা হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল।” মন্ত্রী জানান, নিম্ন দামোদর উপত্যকায় নিকাশি ব্যবস্থার বহনক্ষমতা নিতান্তই কম। তার উপরে এ বার ভরা কোটালের দাপট ছিল খুব বেশি।
স্থানীয় ভাবে প্রবল বর্ষণ নিকাশি ব্যবস্থাকে ঘোরালো করে তুলেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.