|
|
|
|
মমতার কাছে দু’শো ফাইল |
অধিগ্রহণে মন্ত্রিসভার সম্মতির প্রতীক্ষায় বহু প্রকল্প |
রঞ্জন সেনগুপ্ত • কলকাতা |
রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন ছাড়া এক ছটাক জমিও অধিগ্রহণ করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের নতুন সরকার।
আর এর জেরে আটকে গিয়েছে দু’শোরও বেশি সরকারি প্রকল্পের ফাইল। যার মধ্যে পানীয় জল-সড়ক-বিদ্যুৎ বা রেল যোগাযোগের মতো জরুরি পরিষেবার কাজও রয়েছে। প্রকল্পগুলোর জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে এগিয়েও আপাতত থমকে রয়েছে শুধু মন্ত্রিসভার অনুমোদন না-মেলায়। কত দিনে সরকারের সবুজ সঙ্কেত মিলবে, ভূমিসংস্কার দফতরও তা জানে না।
গত মে মাসে রাজ্যে শাসনক্ষমতা দখলের মাসখানেকের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার সার্কুলার দিয়ে ঘোষণা করেছিল, এ বার থেকে এক ছটাক জমি অধিগ্রহণ করতে হলেও রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন লাগবে। নিজস্ব প্রকল্পের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকেই অধিগ্রহণের প্রস্তাব রাজ্য মন্ত্রিসভায় পেশ করতে হবে। একমাত্র কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ক্ষেত্রে তাদের হয়ে প্রস্তাব পেশ করবে রাজ্য ভূমিসংস্কার দফতর।
মুখ্যমন্ত্রী তথা ভূমিমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরের তরফে ওই নির্দেশিকা জারি হওয়ার পরে ভূমি দফতর ‘পাইপ লাইন’-এ থাকা সরকারি প্রকল্পের একটি তালিকা বানায়। গত ৭ জুলাই প্রথম পর্যায়ের সেই তালিকা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমা পড়েছে। তাতে কেন্দ্র-রাজ্য মিলিয়ে মোট ২০৮টি প্রকল্পের উল্লেখ রয়েছে, যার জন্য জমি লাগবে আনুমানিক অন্তত ২৩০০ একর। রাজ্যের প্রকল্পগুলোর মধ্যে যেমন পানীয় জল, রাস্তা, সেতু, বিদ্যুতের মতো বেশ কিছু জরুরি পরিষেবার কাজ আছে, তেমন কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে আছে রেল ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিভিন্ন প্রকল্প।
প্রথম দফায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ফাইল জমা পড়ার পরে মন্ত্রিসভার কয়েকটি বৈঠক হলেও কোনও প্রকল্প নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। এই দুই শতাধিক প্রকল্প কী অবস্থায় রয়েছে?
সরকারি সূত্রের খবর: এর শ’খানেকের জন্য জমি অধিগ্রহণ-আইনের ৪ নম্বর ধারায়, অর্থাৎ চিহ্নিত জমি অধিগ্রহণের ‘সম্ভাবনাসূচক’ নোটিস জারি করতে হবে। এই বাবদ অন্তত ১১০০ একর অধিগ্রহণের কথা। অন্য দিকে প্রায় ৫০টি প্রকল্পের জন্য ৪৫০ একর জমি অধিগ্রহণের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে (৪ নম্বর ধারায়) নোটিস দেওয়া হলেও নতুন নির্দেশের জেরে সেখানে আইনের ৬ নম্বর ধারা জারি করা যাচ্ছে না। ৬ নম্বর ধারায় অধিগ্রহণের ‘সিদ্ধান্তসূচক’ নোটিস দেওয়া হয়। আর তার পরে
শুনানির ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ ধার্য করে ১১ নম্বর ধারা মোতাবেক ক্ষতিপূরণ বা ‘অ্যাওয়ার্ড’ ঘোষিত হয়। কিন্তু নতুন সিদ্ধান্তের ফলে প্রায় ৬০টি প্রকল্পে ছ’নম্বর ধারা বলবৎ হলেও ‘অ্যাওয়ার্ড’ ঘোষণা করা যাচ্ছে না। এগুলির রূপায়ণে অন্তত ৮০০ একর জমি নিতে হবে বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।
সমস্যা অবশ্য এখানেই শেষ নয়। কী রকম?
সরকারি এক মুখপাত্র জানাচ্ছেন, নিয়ম অনুযায়ী ৪ নম্বর ধারায় নোটিস দেওয়ার এক বছরের মধ্যে ৬ নম্বর ধারা জারি না-হলে ৪ নম্বর ধারার নোটিসটি বাতিল হয়ে যায়। একই ভাবে ৬ নম্বর ধারায় নোটিস দেওয়ার দুু’বছরের মধ্যে ১১ নম্বর ধারায় ‘অ্যাওয়ার্ড’ ঘোষণা করতে হয়। নচেৎ দু’বছর পরে অধিগ্রহণের সিদ্ধান্তসূচক নোটিসটি তামাদি হয়ে যায়। এ দিকে মুখ্যমন্ত্রীকে পেশ করা তালিকায় ৪ ও ৬ নম্বর ধারা জারি-হওয়া অনেক প্রকল্প রয়েছে, যাদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে আগামী এক-দু’মাসে। এর মধ্যে পরবর্তী ধাপের নোটিস না-পড়লে এত দিনের পুরো প্রক্রিয়া জলে যাবে। তার পরে অধিগ্রহণ করতে হলে আবার সব কেঁচে গণ্ডুষ করতে হবে বলে জানিয়েছেন ওই মুখপাত্র।
এবং মহাকরণের খবর: কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গেঁওখালির জাহাজ নির্মাণ প্রকল্পে ঠিক এমনটাই হয়েছে। দু’টি ক্ষেত্রেই ৬ নম্বর ধারায় নোটিস জারির দু’বছরের মধ্যেও ‘অ্যাওয়ার্ড’ ঘোষণা হয়নি। ফলে আগের নোটিস বাতিল হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি নতুন নির্দেশের জেরে ‘অ্যাওয়ার্ড’ ঘোষণার মুখে দাঁড়িয়েও অধিগ্রহণ-পর্ব শেষ করতে পারছে না পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন। করণদিঘি ও বহরমপুরে তাদের দু’টো প্রকল্প হওয়ার কথা। সংস্থার কর্তারা গত দু’দিন ধরে মহাকরণের বিভিন্ন দরজায় ঘুরে জানতে চাইছেন, কবে তাঁরা নির্মাণে হাত দিতে পারবেন। প্রায় একই রকম আর্জি নিয়ে রেলের কর্তারা সম্প্রতি মহাকরণে গিয়ে বৈঠক করেছেন ভূমি-অফিসারদের সঙ্গে।
এরই মধ্যে অধিগ্রহণের কাজে সরকারি সিলমোহরের আবেদন জানিয়ে প্রায় রোজ নিত্যনতুন ফাইল জমা পড়ছে ভূমিসংস্কার দফতরে। এমন ফাইলের সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি পৌঁছেছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। দফতরের কর্তারা স্থির করেছেন, প্রথম দফার সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে দ্বিতীয় দফায় আবার ফাইল পাঠানো হবে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য। |
|
|
|
|
|