|
|
|
|
স্বাধীনতার অনুষ্ঠান হয়নি, ২৯ ঘণ্টা আটক শিক্ষকেরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বরাবাজার |
প্রায় ২৯ ঘণ্টা পরে ঘেরাও-মুক্ত হলেন প্রধান শিক্ষক-সহ ১৪ জন শিক্ষক।
ঘটনাটি পুরুলিয়ার বরাবাজার থানার বান্দোয়ান-বানজোড়া হাইস্কুলের। প্রধান শিক্ষকের জন্য স্বাধীনতা দিবসের দিন স্কুলে কোনও অনুষ্ঠান হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। তাই প্রধান শিক্ষককে সরানোর দাবিতে মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক-সহ সমস্ত শিক্ষককে স্কুলে তালাবন্দি করে রাখেন গ্রামবাসীরা। বাসিন্দাদের দাবি, স্কুল পরিদর্শক বা তাঁর কোনও প্রতিনিধি স্কুলে এসে প্রধান শিক্ষককে সরানোর প্রতিশ্রুতি না দিলে শিক্ষকদের ছাড়বেন না। তাই পুলিশ গিয়েও শিক্ষকদের মুক্ত করতে পারেনি। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার শিক্ষকদের সঙ্গে তিন শিক্ষিকাকেও তাঁরা আটকে রেখেছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিক্ষিকাদের তাঁরা ছেড়ে দেন।
এই অবস্থায় স্কুলে দু’দিন কোনও ক্লাস হয়নি। শিক্ষকদের মুক্ত করতে শেষ পর্যন্ত বুধবার দুপুরে স্কুলে যান দুই সহকারী স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শিশির সিংহ ও বাসব মুখোপাধ্যায়, দুই অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক মহুয়া বসাক ও পার্থ সিংহ, বিডিও দেবজিৎ বসু। দেবজিৎবাবু বলেন, “সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে। প্রধান শিক্ষক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আগামী দিনে স্কুল পরিচালন সমিতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করা হবে। মিড-ডে মিল চালু থাকবে। পঠনপাঠনের উন্নতির জন্য চেষ্টা করবেন।” বিকেল ৪টে নাগাদ শিক্ষকেরা ঘেরাও-মুক্ত হন।
বুধবার দুপুরে স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক-সহ ১৪ জন শিক্ষক একটি ঘরের মধ্যে রয়েছেন। সকলেরই বিধ্বস্ত চেহারা। প্রধান শিক্ষক অনাদি পাত্র বলেন, “পড়ুয়াদের সঙ্গে বাইরের কিছু লোক জুটে মঙ্গলবার থেকে আমাদের আটকে রেখেছিলেন। পরিচালন সমিতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করব। পঠনপাঠনের উন্নতির জন্য চেষ্টা করব।”
নবম শ্রেণির পড়ুয়া গুরুপদ কর্মকার, সন্দীপ মাহাতোদের অভিযোগ, “স্কুলে পড়াশোনাই হয় না। ক্লাস ফেলে শিক্ষকেরা নিজেদের মধ্যে গল্প করেন। এক মাস ধরে মিড-ডে মিল বন্ধ রয়েছে। ভাঙাচোরা ক্লাসরুমে বসতে ভয় লাগে।” অভিভাবকদের পক্ষে স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক রোহিণীচন্দ্র মাহাতোর অভিযোগ, “প্রধান শিক্ষক কোনও নিয়ম মানেন না। পড়ুয়ারা বিভিন্ন সময়ে সুষ্ঠু পঠনপাঠনের দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। স্কুলে তালাও দিয়েছিল। এ ব্যাপারে একাধিক বার বৈঠক হয়েছে। তার পরেও প্রধান শিক্ষক নিজেকে শোধরাননি। প্রধান শিক্ষকের জন্য ১৫ অগস্টের দিন স্কুলে অনুষ্ঠান হয়নি।” তিনি জানান, বৈঠকে প্রধান শিক্ষক পঠনপাঠনের উন্নতি, মিড-ডে মিল চালু করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরে শিক্ষকেরা ঘেরাও-মুক্ত হন। শিক্ষক সদানন্দ মাহাতো, বিশ্বনাথ মাহাতো, অশোক রজকদের অভিযোগ, “প্রধান শিক্ষকের জন্য আমাদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।” তাঁরা জানান, শ্রেণি কক্ষের অভাব রয়েছে। বসার জায়গা না থাকায় তাঁদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তবে আটকে রাখলেও বাসিন্দারা খাবার, জল দিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক অনাদি পাত্র বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঠিক নয়।” জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) রাধারানি মুখোপাধ্যায় বলেন, “আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটে গিয়েছে। আশা করছি ওই স্কুলে এ ধরনের অশান্তি হবে না।” |
|
|
|
|
|